এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন প্রদানের জটিলতা নিরসনের লক্ষে গত ৫ অক্টোবর ২০২৪ ইং তারিখ জাতীয় শিক্ষক দিবসে বর্তমান সরকারের বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা ঘোষণা করেন যে, আগামী জানুয়ারী মাস থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন ইএফটিতে প্রেরণ করা হবে। সেই লক্ষ্যে মাউশিকে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করতে নির্দেশ প্রদান করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মাউশি নির্দেশনা পাওয়ার পর এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ইএফটি কার্যক্রম এ সহযোগীতার পরিবর্তে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করতে থাকে। শুধুমাত্র শিক্ষা উপদেষ্টার কঠোরতার কারণে ইএফটি কার্যক্রম কোন ক্রমেই বাতিল বা স্থগিত করতে পারেনি। তবে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করেছে যাতে ইএফটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হয়। অযৌক্তিক ভাবে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন প্রদানে ধীরগতি। তথ্য ভেরিফিকেশনের নামে শিক্ষক কর্মচারীদের বিভিন্ন ধরনের হয়রানি ও মানসিক টেনশনে ফেলা। তবে সকল বাাঁধা অতিক্রম করে ইএফটি কার্যক্রম হাটি হাটি পা পা করে বাস্তবায়নের পথে।

আইবাস ডাবল প্লাস সফটওয়্যারের ইলেকটনিক্স ফান্ড ট্রান্সফারে (ইএফটি) ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯১ জন শিক্ষক-কর্মচারীর মার্চ মাসের বেতন ও বৈশাখী ভাতার প্রস্তাব গতকাল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তার অর্থ এ-ই দাঁড়ায় যে এখন পর্যন্ত এ-ই পরিমাণ শিক্ষক ইএফটির জন্য সিলেক্টেড। অর্থাৎ এই পরিমাণ শিক্ষকের তথ্য মোটামুটিভাবে ভেরিফিকেশন কমপ্লিট বা এই পরিমাণ শিক্ষক কর্মচারী ইএফটির জন্য যোগ্য। বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছে।

জানা গেছে, ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯১ জনের মধ্যে কলেজের ৮৬ হাজার ৭৭৯ জন ও স্কুলের রয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৩১২ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন।

অপরদিকে বৈশাখী ভাতার ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫১৪ জনের মধ্যে স্কুলের রয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৮৯৩ ও কলেজের ৮৬ হাজার ৬২১ জন শিক্ষক-কর্মচারী। এখানে বেতন ও বৈশাখীভাতা প্রাপ্ত এর সংখ্যা কম বেশি থাকার কারণ যেটা তা হলো এমপিওভুক্ত হওয়ার সময়ের কারণে এ কমবেশি হওয়ার কারণ।

এর আগে এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ঈদুল ফিতর উপলক্ষে উৎসব ভাতা ও ফেব্রুয়ারির বেতন ইএফটির মাধ্যমে ছাড় দেয়া হয়েছিলো। যার সংখ্যা ছিল মোট ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৫২৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীর উৎসব ভাতার প্রস্তাব মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে স্কুলের ২ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ জন ও কলেজের ৮৪ হাজার ২৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন।

এর আগে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ডিসেম্বরের পঞ্চম ধাপ, জানুয়ারির দ্বিতীয় ধাপ, ফেব্রুয়ারির বেতন ও উৎসব ভাতা যতো দ্রুত সম্ভব দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছিলো মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। গত সপ্তাহে শিক্ষকদের এমপিও ছাড়ের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের পাঠানো হয়। এই কাজের জন্য শুক্র-শনিবারেও অধিদপ্তরের কাজ চলমান ছিলো।

মাউশির দেয়া তথ্য মতে তাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ইএফটি বাস্তবায়নে কোন প্রকার গাফিলতি নাই কিন্তু বাস্তবতা কিন্তু তা বলে না। ইএফটি বাস্তবায়নের ধীরগতির কারণ যে, মাউশির একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঠিক ভাবে ইএফটির কাজে সহযোগীতা না করা। কারণ তারা কোন ভাবেই চায়না যে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ইএফটি কার্যক্রমের সঠিক বাস্তবায়ন হউক। কারণ ইএফটি বাস্তবায়ন হয়ে গেলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন নিয়ে মাউশি ও ইএমআইএসসেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সুদ বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। এই কারণে তাদের সমস্যা বলে অনেকে মনে করেন। যদিও এই বিষয়ে কাগজে কলমে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি।

সর্বশেষে যা বলব তা হলো এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ইএফটি কার্যক্রম মোটামুটি বাস্তবায়ন হওয়ার পথে। তবে এখনও প্রায় ২০ হাজার এর মতো শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন বন্ধ রয়েছে। তবে যারা এখনও বেতন পাননি তাদের বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে যেমন জন্মতারিখের ভুল, ব্যাংক হিসাব নম্বররের সমস্যা, অনেকে এখনও তথ্য পাঠাতে পারেনি কারণ অনেক শিক্ষক কর্মচারীদের ৫ আগষ্ট পরবর্তী জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল সে সকল শিক্ষক কর্মচারী কিন্তু এখনও ইএফটির তথ্য পাঠাতে পারেনি। তবে তাদের এখন সুযোগ দেওয়া হয়েছে তথ্য পাঠানোর জন্য। এই হিসাবে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষক কর্মচারী এখনও ইএফটির আওতাভুক্ত হতে পারে নি। তবে তারা সঠিক তথ্য যত তাড়াতাড়ি পাঠাবে তত জলদি তারা ইএফটির আওতাভুক্ত হবে। প্রথমদিকে যে জটিলতা মাউশি তৈরি করেছিল তা মোটামুটি কেটে গেছে। সামনে আরও কেটে যাবে। এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা যা তা হল ইএফটি চালূ হওয়ার পরও মাউশি নানা অজুহাতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের সময়মত বেতন প্রদান করছে না। আশা করি আগামী জুলাই মাস হতে এ সমস্যাও কেটে যাবে। সেই সময় পর্যন্ত আমাদেরকে আর একটুু ধৈর্য ধরতেই হবে।