এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে বকেয়া থাকা বেতন সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য দিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান। শিক্ষক কর্মচারীদের এই বকেয়া বেতন কিন্তু গত মাসেই ছাড় হওয়ার কথা ছিল। এতদিন ধরে আটকে আছে তার একমাত্র কারণ মাউশির ইএমআইএসসেলের কিছু অসাধু কর্মকর্তার গোপন চক্রান্তের কারণে। তারা শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন নিয়ে অবৈধ লেনদেন করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত ভাবে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন দিনের পর দিন এভাবে আটকে রাখে।
শনিবার (১৭ মে) দিবাগত রাত ১২টার দিকে তিনি জানান যে, “২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাস হতে যাদের বেতন ইএফটি জটিলতা ও অন্যান্য বিভিন্ন কারণে আটকে আছে তাদের আংশিক লট-৭ এর প্রস্তাব ১৭ মে রাতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, যাতে বৈশাখী ভাতা ও উৎসব ভাতাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা বেতন ও অন্যান্য পাওনাদি পেয়ে যাবেন।
এদিকে, গোপন অনুসন্ধানে যে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে তা হল, মাউশির এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (ইএমআইএস) সেলে কর্মরত প্রকল্পভুক্তদের কারণে লাখ লাখ শিক্ষকের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে। এটা তাদের একপ্রকার কারসাজি। আর এই কারসাজির কথা মাউশির ডিজি যে, একবারেই কিছুই জানে না তা কিন্তু নয়।
জাতীয়করণসহ বিভিন্ন দাবিতে চলমান অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষকরা জানান, ঈদুল আজহার আগেই তাদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা প্রদান করতে হবে।
শনিবার সকাল থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) ব্যানারে এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়।
এতে অংশ নিয়ে শিক্ষক নেতা আল আমিন বলেন, “আমি ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা চাই না, আমরা কোনও পার্সেন্টিজ চাই না। ঈদের আগেই শতভাগ উৎসব ভাতার ঘোষণা চাই। সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মতো আমাদেরও বাড়িভাড়া ও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা ভাতা দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের মূল দাবি হলো শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাধ্যমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করতে হবে এবং এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টাকে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির অনুরোধ জানাচ্ছি।”
২০২৩ সালেও টানা ২২ দিন অবস্থান কর্মসূচির কথা স্মরণ করিয়ে আল আমিন বলেন, “আমরা কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে এসেছি। হয় জাতীয়করণ, না হয় কারাবরণ কিংবা মৃত্যুবরণ—এর বাইরে কিছু নেই। এই রাজপথ ছাড়বো না।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের ৯৭ শতাংশ শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালিত হয় এই বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মাধ্যমে। যদি আমরা একই কারিকুলাম অনুযায়ী পাঠদান করি, একই বই পড়াই, একই প্রশ্নপত্রে মূল্যায়ন করি—তবে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে এত বৈষম্য কেন?”
উল্লেখ্য, জাতীয়করণসহ উৎসব ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ও বাড়িভাড়ার দাবিতে ২২ দিনব্যাপী আন্দোলনের পর গত মার্চের শুরুতে শিক্ষকরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেন।
Leave a Reply