পৃথিবীতে যত বিস্ময়কর পেশা আছে, তার মধ্যে নিঃসন্দেহে একটি হল বাংলাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের পেশা। এ পেশায় আমরা যারা নিয়োজিত, তারা যেন অনেকটা প্লেটোর “দার্শনিক রাজা”—যাদের সমাজের কল্যাণে কাজ করার কথা, কিন্তু ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার জায়গাটা যেন প্রায় অনুপস্থিত।
প্লেটোর রাষ্ট্রদর্শন অনুসারে, আদর্শ রাষ্ট্রে শাসক, সৈনিক ও শ্রমজীবী—এই তিন শ্রেণির মধ্যে দার্শনিকেরা রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্ত থাকবেন। তারা হবেন জ্ঞানী, আত্মনিয়ন্ত্রণকারী এবং নিঃস্বার্থ। কিন্তু আমরা প্রায়ই ভুলে যাই, প্লেটোর দার্শনিকরাও তখনই নিঃস্বার্থ থাকতে পারেন, যখন রাষ্ট্র তাদের মৌলিক চাহিদাগুলোর দায়িত্ব নিজে নেয়।
ঠিক এখানেই বাস্তবতার সঙ্গে তফাৎ তৈরি হয়। বাংলাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এক স্তম্ভ হয়েও নিজেদের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা নিয়েই প্রতিনিয়ত অনিশ্চয়তায় ভোগেন। সেই অনিশ্চয়তার সাম্প্রতিক একটি দৃষ্টান্ত হল—২১ বছর পর উৎসব ভাতা দ্বিগুণ করার আলোচনা।
এই আলোচনার আলোয় কিছুটা আশার সঞ্চার হলেও, বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এটিকে কেবল সম্ভাবনার মধ্যেই ধরা যায়।
তাই আমি এই লেখায় প্লেটোর রাষ্ট্রচিন্তার বিশ্লেষণে নয়, বরং বর্তমান বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া এক শ্রেণির মানুষ—এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার নিয়ে কথা বলতে চাই, বিশেষ করে এই উৎসব ভাতা বৃদ্ধি নিয়ে যেটি আজ সবচেয়ে বেশি আলোচিত।
সম্প্রতি দীর্ঘ ২১ বছর পর উৎসব ভাতা ২৫% থেকে ৫০% করার যে আলোচনা চলছে, তা নিঃসন্দেহে আশার আলো জাগিয়েছে হাজারো শিক্ষক ও কর্মচারীর মনে। তবে এখানেও আছে একাধিক “যদি-কিন্তু”র দোলাচল।
বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রে আছে—বর্তমান ২৫%-এর সাথে আরও ২৫% যোগ করে উৎসব ভাতা ৫০% করার সম্ভাবনা। যদিও এখনও সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি, ফলে এটিকে শতভাগ নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।
মূল প্রতিবন্ধকতা—অর্থের সংস্থান।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতে, এই বাড়তি ২৫% উৎসব ভাতা দিতে প্রয়োজন প্রায় ২২৯ কোটি টাকা। অথচ এখন পর্যন্ত বরাদ্দ পাওয়া গেছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকার মতো। বাকি অর্থ অন্য কোনো প্রকল্প থেকে সরিয়ে আনতে হবে।
প্রজ্ঞাপন কোনদিন?
এ লক্ষ্যে আগামীকাল অথবা পরশুর মধ্যে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে একটি চূড়ান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকেই নির্ধারিত হবে প্রজ্ঞাপন জারির সময় ও দিনক্ষণ। সেই সময় পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরতেই হবে।
আলোচনায় একটি দুঃসংবাদও রয়েছে—কর্মচারীদের উৎসব ভাতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ অর্থের স্বল্পতায় পুরো কাঠামোয় একসাথে সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করা যাচ্ছে না বলে সূত্রের দাবি।
শুধু উৎসব ভাতা নয়, দীর্ঘদিন ধরে বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা এবং শ্রান্তি ও বিনোদন ভাতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও ছিল।এগুলো বাস্তবায়নে প্রয়োজন প্রায় ১১০০ কোটি টাকা, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভাষায় “এই মুহূর্তে অসম্ভব”। তবে আগামী বাজেটে তো আর অসম্ভব বলতে পারবেন না। যেভাবে সম্ভব হবে সেভাবে বরাদ্দ রাখুন।
শেষ কথা: অর্থনৈতিক অজুহাত কেবল শিক্ষকদের জন্য নয় আমরা বুঝি—দেশের অর্থনীতি চাপে আছে। কিন্তু এই চাপ শুধু কি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কাঁধেই? বাকি পেশাজীবী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে এমন সংকোচন কিন্তু দেখা যাচ্ছে না। তাই আমরা শিক্ষকরা শুধুই উৎসব ভাতা নয়, আগামী বাজেটেই সব প্রতিশ্রুত ভাতা বৃদ্ধির বাস্তবায়ন চাই। প্রতিশ্রুতি পূরণের সময় এসেছে—নতুন বাজেটে যেন আর অর্থের অজুহাত না উঠে।
বাড়ি ভাড়া শতকরা হারে অবশ্যই হতে হবে।মেডিক্যাল ভাতা ১৫০০ টাকা। আর উৎসব ভাতা,শতভাগ করতেই হবে।খন্ডিত ভাতা কেন?কোন পেশায় খন্ডিত ভাতা নেই।তবে সকল মাস্টার্স পাশ শিক্ষকদের ক্ষেত্রে কেন? আর জেষ্ট প্রভাষক পদটি বাদ দিয়ে সহকারী অধ্যাপক পদ পুনর্বহাল করতেই হবে