“নতুন বাংলাদেশ গড়ার নির্বাচন হবে” — ড. মুহাম্মদ ইউনূস
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন শুধুমাত্র একটি নিয়মিত ভোটগ্রহণ নয়, বরং এটি হবে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ। “এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করতে চাই, এবং সেটাই আমাদের অঙ্গীকার,” বলেন তিনি।
তিনি জানান, বর্তমান সরকার দেশের বিভিন্ন খাতে সংস্কার আনার লক্ষ্যে একাধিক কমিশন গঠন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য একটি ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করা হয়েছে। ইউনূস বলেন, চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে—সব রাজনৈতিক দল এসব কমিশনের সুপারিশে একমত হয়ে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে।
“আমরা এই চুক্তিকে ‘জুলাই সনদ’ নামে অভিহিত করেছি। জুলাই মাসেই এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে এবং এই সনদের ভিত্তিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে,” বলেন তিনি।
বুধবার (১১ জুন), যুক্তরাজ্যের লন্ডনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউসে আয়োজিত এক সংলাপে এসব কথা বলেন ড. ইউনূস।
নতুন ভোটারদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ১৭ বছরে যেসব তরুণ ভোটার হয়েছেন, তাদের অনেকেই প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। “এই তরুণদের আগ্রহ ও শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই,” বলেন ইউনূস।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নিয়ে তিনি বলেন, সরকারকে তিনটি মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল—একটি হলো দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সংস্কার, দ্বিতীয়ত জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করা, এবং তৃতীয়ত একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন।
আলোচনায় ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ইউনূস বলেন, “সেটি ছিল অত্যন্ত কঠিন সময়। বৈশ্বিক সংকটের পাশাপাশি বাংলাদেশ নিজস্ব গভীর সংকটে ছিল। আমরা একপ্রকার অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্বের মুখে দাঁড়িয়ে ছিলাম।”
তিনি দাবি করেন, তাদের সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় দেশের অর্থনীতি ঋণাত্মক অবস্থায় ছিল এবং বিশাল অঙ্কের দেনা পরিশোধ করতে হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সময় ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শূন্যে নেমে এসেছিল, আর ব্যাংক খাত কার্যত ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল।
দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। “রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেক বেড়েছে, যার ফলে আজ আমাদের পেমেন্ট ব্যালান্স পুরোপুরি পাল্টে গেছে,” বলেন তিনি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, বিশ্বের সব দেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে। তিনি এই সমর্থনের জন্য সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
Leave a Reply