আমাদের দেশে যতগুলো পেশা আছে তার মধ্যে আমার মনে হয় সবচেয়ে অবহেলিত ও আশ্চর্য এক পেশার নাম হলো এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পেশাগত দাযিত্ব পালন করা। এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পেশাগত দায়িত্ব পালন করা আমাদের এ দেশে সারাজীবন বৈষম্যের শিকার হওয়া। সারাজীবন শুধু এ পেশায় বৈষম্যের যাতাকলে পিষ্ঠ হওয়া। আমাদের এ পেশার অন্যতম প্রধান একটা বৈষম্যের নাম তা হলো বেতন প্রাপ্তির বৈষম্য। কোন মাসের ১০ তারিখে বেতন পেলে আবার কোন মাসের ১৫ তারিখে আবার কখনও কখনও ২০-২২ তারিখে হয়ে যায়। এই সকল সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বর্তমান অন্তবর্তী কালীন সরকার ইএফটির মাধ্যমে বেতন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যা শুনে আমরা অনেকে খুশিতে আত্নহারা হই।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের গত ৫ অক্টোবর ২০২৪ শিক্ষক দিবসে সরকার ঘোষণা দেয় যে, তাদের বেতনও সরকারী কর্মচারীদের ন্যায় ইএফটির মাধ্যমে প্রেরণ করা হবে। সেই লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শুধু স্কুল ও কলেজের এমপিওভুক্ত ৩,৯৮,০০০ হাজার শিক্ষক কর্মচারীর বেতন ইএফটির মাধ্যমে প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় বর্তমান সরকার। । সেই ঘোষণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চলতি মাসের ১ তারিখে ১,৮৯,৯১৩ জন শিক্ষক কর্মচারীর বেতন তড়িঘড়ি করে প্রদান করে।
কিন্তু এই তাড়াহুড়া করতে গিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীর বিশাল একটি অংশ বাদ পড়ে যায়। যার সংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ। সেই সমস্যার সমাধান আজকাল পরশু করতে করতে প্রায় ১৮ দিন পর গত ১৯ তারিখে কিছু সংখ্যক শিক্ষক কর্মচারীর পেমেন্ট তালিকা প্রকাশ করে যার সংখ্যা ৬৭হাজার ৪৪০ জন। এর পর ২৭/০১/২০২৫ তারিখ সোমবার আরও প্রায় ৮৪ হাজার এর অধিক শিক্ষক কর্মচারীর পেমেন্টের তালিকা প্রকাশ করে। এ পর্যন্ত তিন ধাপে ৩,৪২,১২৭ জন শিক্ষক কর্মচারী ইএফটি আওতাভুক্ত হয়েছেন। এরপর আবার ৪র্থ ধাপের তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে সেখানে প্রায় ৩০ হাজারের অধিক শিক্ষক কর্মচারী অন্তভুর্ক্ত হবে বলে শোনা যাচ্ছে। যা অবশ্যই খুশির সংবাদ নিংসন্দেহে।
এই খবর গুলো আমরা এই ভাবে না শুনে অন্য ভাবেও শুনতে পারতাম। এই খবর গুলো আমরা ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ ধাপে না শুনে এক ধাপেই শুনতে পারতাম তো। যদি একটু সচেতন ভাবে ইএফটির যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া পরিচালিত করা যেত। এক মাসের মধ্যে মাউশি ৩ লাখ ৭৩ হাজার শিক্ষক কর্মচারীর তথ্য যাচাই বাছাই করতে পারল ৪টি ধাপে তাহলে একমাস পরে ৪টি ধাপের বেতন ৪ বারে না দিয়ে ১ ধাপে দেওয়া যেত না। অবশ্যই যেত। কোন শিক্ষক কর্মচারীতো মাউশিকে জোর করে বলে নি যে, এই মাস থেকে আমাদের বেতন ইএফটিতে দিতে হবে। সেই মানবিকতার মুল্য না দিয়ে মাউশি কি করল প্রায় ৪ লক্ষ শিক্ষক কর্মচারীর আবেগ নিয়ে খেলা করল। এ দায় কি মাউশি এড়াতে পারে কোন ভাবে?
এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ইএফটির এই আজকের দীর্ঘ সুত্রীতার একমাত্র কারণ মাউশি সময় অনুপোযোগী সিদ্ধান্ত। যা তাদেরকে করেছে হেয় আর শিক্ষকদের ফেলেছে নানা মুখী টেনশনে।
এর পরে আবার মাউশি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, ২য় ধাপ থেকে শুরু করে সকলের প্রয়োজনীয় তথ্য আবার নতুন করে আগামী ২ মাসের মধ্যে সংশোধন করা লাগবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন কোন তথ্য সংশোধন করা লাগবে তার তালিকা প্রকাশ করছে না। তাহলে কোনদিন এই ভুলের তালিকা প্রকাশ করা হবে আর কোনদিন সেই ভুল সংশোধন করব আমরা। তাহলে কি ধরে নিব যে মাউশি শিক্ষক কর্মচারীদের ভুল তৈরি করছে।
পরিশেষে একটা কথা বলে শেষ করব তা হল অনেক অব্যবস্থাপনার সাক্ষী আমরা হয়েছি আর আমাদের অব্যবস্থাপনার মধ্যে ফেলবেন না। আমাদের করণীয় সম্পর্কে অবহিত করুন। আমাদেরকে অহেতুক মানসিক টেনশন থেকে মুক্ত করুন।
চা
Leave a Reply