ভুত যদি সরিষার মধ্যেই থাকে তাহলে ভূত তারাবে কি দিয়ে। বাংলা সাহিত্যে কথাটা অনেক প্রচলিত এবং অনেক বড় সত্য হিসেবে অনেক বিষয়ে উপমা হিসেবে সবাই ব্যবহার করে। ইএফটির মাধ্যমে বেতন প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পর সকল এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা ভেবেছিলো যে, তারা বুঝি এখন থেকে প্রতিমাসের শুরুতেই তাদের প্রাপ্য বেতন পাবে। কিন্তু হায় বিধি বাম সেরকম কিছু এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীর ভাগ্যে লিখে রাখে নি। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে না-“অভাগা যে দিকে চায় , সাগর শুকিয়ে যায়”
যদি এরকম কিছু নাই হবে তাহলে কেন, যেখানে এদেশের সকল সরকারী কর্মচারীরা যখন ইএফটির আওতাভুক্ত হয় তখন তো এতসমস্যা হয়নি। তাদের কি তথ্য লাগেনি, তাদের কি তথ্য যাচাই বাছাই করতে হয়নি। কিন্তু আমাদের বেলায় তথ্য যাচাই বাছাই করতে গিয়ে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ২২ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হল তাদের ইএফটির আওতাভুক্ত করা হল কিন্তু তাদের তেমন কোনো সমস্যা হল না। যত সমস্যা দেখা দিল এই অভাগা এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীর বেলায়। আমাদের ভ্যগ্য খারাপ না ইএফটির ভাগ্য খারাপ আমাদের অন্তভুর্ক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে। না সমস্যা অন্য কোনখানে।
অন্য সকল কর্মচারীরা যেখানে ইএফটির আওতাভুক্ত হলে মাসের ১ তারিখে বেতন পায়। আমরা সেখানে ইএফটির আওতাভুক্ত হওয়ার পরও মাসের ১ তারিখে তো অনেক আগের কথা মাসের ৩ তারিখে হওয়ার পরও আমাদের বেতন পাওয়ার কোন খোঁজ থাকে না।
এখন আসি আসল কথায়, ইএফটির আওতাভুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত যখন হয় তখন আমি বলেছিলাম যে, ইএফটি নিয়ে আমরা এত মাতামাতি করছি কিন্তু আসল কথা হলো যে, আপনাকে ১ তারিখে বেতন দিলে না, আপনি ১ তারিখে বেতন পাবেন, না দিলে আপনি পাবেন কি করে। এই মন্তব্য করার পর অনেকে আমাকে অনেক বাজে মন্তব্য করেছিল যে, আমি বা আমরা সবকিছুর মধ্যে দোষ খুঁজে বেড়ায়, আমরা সবকিছুর মধ্যে ষড়যন্ত্র খুঁজে পাই। এখন কিন্তু আমার আশঙ্কায় অনেকটা সত্যি হলো। মাসের ৩ তারিখ পার হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত বেতনের কোন খোঁজ খবর নাই।
এখন আসি শুরুর দিকে কথায় যে, সরষের মধ্যে যদি ভূত লকিয়ে থাকে তাহলে কিভাবে ভূত তাড়ানো যাবে। আমাদের বেতন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে যে কয়টি প্রতিষ্ঠান একত্র হয়ে কাজ করে তার মধ্যে অন্যতম হল মাউশি। মাউশির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাদের বেতন প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। মাউশির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, আমরা কোনদিন কখন বেতন পাব। মাউশি যদি চায় তবেই যে কোন শিক্ষক কর্মচারীর বেতন প্রদান নিশ্চিত হয়।
সেই মাউশিই কি চায় আমরা মাসের শুরুতে বেতন পাই। মাউশি কি চায় এ রাষ্ট্রের অন্যান্য চাকুরীজীবিরা যেভাবে মাসের শুরুতে যে ভাবে বেতন পান বা তারা যেভাবে মাসের শুরুতে বেতন পান এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা সেভাবে বেতন সুবিধা পান। আমরা তো মনে এ ব্যাপারে মাউশির ভুমিকা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন করাই যায়। এই ব্যাপারে মাউশির আন্তরিকতার যথেষ্ট অভাব আছে তা দিবালোকের মত পরিস্কার।
ইএফটির আওতাভুক্ত যতই করা হোক না কেন, যতই আইবাস++ সফটওয়্যার মাধ্যমে বেতন প্রদান করা হোক না কেন? আপনি বাজেট বরাদ্দ দিলে না আপনার ব্যাংক হিসাবে টাকা কিভাবে ট্রান্সফার হবে। আপনি যদি আইবাস++ কর্তৃপক্ষকে বাজেট না দেন, অর্থের বরাদ্দ না দেন তাহলে আইবাস++ কোথায় থেকে টাকা ট্রান্সফার করবে।
সকলের বেতন সময়মতো হলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বেলায় বাজেট ঘাটতি দেখা যায়। সকলের বেলায় অতিদ্রুততর সময়ে সকল সরকারী আদেশ জারি হয়। কেবল এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীর বেলায় তা দিনের পর দিন দেরি হয়। এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীর বেতনের ফাইল এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে যেতে দিনের পর দিন লেগে যায়। এটাই বাস্তবতা আমাদের। আর এটাই হলো মাউশির বিবেক বর্জিত কর্মকান্ড।
তাই তো বলাই যায় যে, বেতন যেভাবে প্রদান করা হোক না কেন? যেদিন প্রদান করা হবে সেদিন পাওয়া যাবে। তাই আমাদের ইএফটির মাধ্যমে দেওয়া হলেও মাসের ১০ তরিখের পরই পাবে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা। যেমন পেত আগের ম্যানুয়াল সিষ্টেমে? তার অর্থ এটাই দাঁড়ায় যে, আমাদের বেতন প্রদান দেরিতেই হবে। অর্থাৎ যেটাকে মানুষ লাউ বলে সেটাকে কেউ কেউ কদুও বলে।
Leave a Reply