যুদ্ধ আমাদের কাহারও কাম্য নয়। তবে যদি কোন কারণে কোন পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বেধে যায় তাহলে কিন্তু একপ্রকার লাভ কিন্তু বাংলাদেশেরই। কেননা বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে যদি কোন কারণে যুদ্ধ বেধে যায় তাহলে কিন্তু ভারতের একপাকিক্ষ চুক্তি গুলো থেকে বাংলাদেশ রেহাই পাবে যা বাংলাদেশের জন্য সাপে বর হয়ে কাজ করবে। এ সম্পর্কে অতীত কিন্তু তাই বলে।
যুদ্ধকালীন সময়ে বাণিজ্য চুক্তি বাতিল হওয়া বা স্থগিত হওয়ার বিষয়টি জটিল এবং এটি বহুবিধ ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে। নিচে এই বিষয়টি আরও বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:।
১. বাণিজ্য চুক্তির প্রকৃতি
বাণিজ্য চুক্তি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে, যেমন দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক, বা বিশেষ কোনো পণ্যের ওপর নির্ভরশীল চুক্তি।
- দ্বিপাক্ষিক চুক্তি: একমাত্র দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া। যুদ্ধ হলে এগুলো সাধারণত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- বহুপাক্ষিক চুক্তি: WTO-এর মতো সংস্থাগুলোর আওতায় হওয়া চুক্তি। যুদ্ধ সত্ত্বেও কিছুক্ষেত্রে এগুলো কার্যকর থাকে।
- নির্দিষ্ট পণ্যের চুক্তি: খাদ্য, তেল, গ্যাস ইত্যাদির চুক্তি, যা প্রায়শই আন্তর্জাতিক চাপ বা মানবিক কারণে বহাল রাখা হয়। তবে কোন কারনে যদি ভারত চুক্তি গুলো বহাল না রাখে তাহলে বাংলাদেশের খুব একটা ক্ষতি হবে না। কারণ ভারত তো আমাদেরকে বাণিজ্যিক পণ্য গুলো ফ্রি তে দেয় না। টাকার বিনিময়ে দেয়। ভারত না দিলে অন্য দেশ থেকে পণ্য আনা যাবে। হয়ত ক্ষনিকের সমস্যা হবে তবে তা দীর্থ মেয়াদী সমস্যা হবে না।
২. যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক আইন
যুদ্ধকালীন আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতিগুলো বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
- জাতিসংঘ সনদ ও WTO-এর নিয়ম:
জাতিসংঘ ও WTO-এর নীতি অনুযায়ী, কোনো দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য সীমিত বা বন্ধ হয়ে যায়।
- বাণিজ্য পথ বন্ধ:
যুদ্ধের ফলে গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ বা বাণিজ্যপথ বন্ধ হয়ে গেলে চুক্তি কার্যকর রাখা অসম্ভব হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২ সালের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় কৃষ্ণ সাগর অঞ্চলের বাণিজ্যপথ ব্যাহত হয়েছিল।
৩. যুদ্ধকালীন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা (Economic Sanctions)
যুদ্ধের সময় একটি দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। এটি সাধারণত নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলোতে প্রভাব ফেলে:
- পণ্য রপ্তানি ও আমদানি বন্ধ:
যুদ্ধরত দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলে কোনো পণ্য সরবরাহ অসম্ভব হয়ে পড়ে।
- বাণিজ্যিক লেনদেন বন্ধ:
আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় নিষেধাজ্ঞা দিলে (যেমন SWIFT থেকে বাদ দেওয়া) লেনদেন কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের খুব একটা সমস্যা হবে না বিকল্প অনেক দেশ আছে।
উদাহরণ:
- ২০১4 সালে ক্রিমিয়া অধিগ্রহণের পর রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, যা তাদের অর্থনীতি ও বাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল।
৪. মানবিক বাণিজ্য অব্যাহত রাখা
কিছু ক্ষেত্রে, যুদ্ধ সত্ত্বেও মানবিক চাহিদা মেটাতে বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়া হয়।
- খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ:
জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেয়।
- জরুরি চুক্তি:
যুদ্ধ চলাকালে বিশেষ চুক্তির মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করা হয়। যেমন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে “গ্রেইন ডিল” নামে চুক্তি হয়েছিল, যার মাধ্যমে খাদ্যশস্য সরবরাহ চালিয়ে যাওয়া হয়।
৫. যুদ্ধের কারণে বাণিজ্যের আর্থিক ও কাঠামোগত প্রভাব
যুদ্ধের ফলে দেশের ভৌত অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাণিজ্য চুক্তি কার্যকর রাখা কঠিন হয়ে যায়।
- লজিস্টিকস এবং পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়া:
যুদ্ধের সময় বন্দর, সড়ক, এবং রেলপথ ধ্বংস হলে পণ্য পরিবহন সম্ভব হয় না।
- মুদ্রার মানের পতন:
যুদ্ধের ফলে কোনো দেশের মুদ্রার মান কমে গেলে আমদানি-রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়।
- ভারতের সকল বিনিয়োগ কিন্তু ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। কোন প্রকার রিটার্ন পাবে না।
৬. যুদ্ধের পরিণতি: চুক্তি পুনঃস্থাপন বা পুনর্নির্মাণ
যুদ্ধ শেষ হলে দেশগুলো সাধারণত তাদের অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য বাণিজ্য চুক্তি পুনরায় আলোচনার মাধ্যমে স্থাপন করে।
- যুদ্ধোত্তর পুনর্বাসন চুক্তি:
যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ থেকে অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য নতুন বাণিজ্য চুক্তি করা হয়।
- আন্তর্জাতিক সহায়তা:
বিশ্বব্যাংক, IMF, এবং WTO-এর সহায়তায় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো পুনরায় বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রবেশ করে।
উপসংহার
যুদ্ধের সময় বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে আন্তর্জাতিক আইন, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, এবং যুদ্ধের তীব্রতার ওপর। কিছু চুক্তি মানবিক কারণে বা আন্তর্জাতিক চাপের ফলে অব্যাহত থাকে, তবে বেশিরভাগই বাধাগ্রস্ত হয় বা স্থগিত হয়ে যায়। যুদ্ধ শেষ হলে দেশগুলো পুনর্গঠন এবং সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের জন্য বাণিজ্য চুক্তি নতুন করে শুরু করতে পারে।
Post Views: 39
Leave a Reply