আমাদের ক্রিকেট ও আমাদের খেলাধুলা
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে ভাবতে ভালই লাগে, এটা বাংলাদেশের অনেক দিন আগের একটি বিজ্ঞাপনের শুরুর সংলাপ, বিজ্ঞাপনটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। ভাবছেন বিজ্ঞাপনের কথাগুলো আমি লিখছি কেন, লিখছি এই জন্য যে আমাদের খেলাধুলা এগিয়ে যাচ্ছে সত্যি কথা বলতে কি আমাদের ক্রিকেট গুটি গুটি পা পা করে প্রত্যাশার চেয়ে ধীর গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এটা সত্যি কথা কিন্তু আমাদের খেলাধুলার সার্বিক অবস্থার কি কোন প্রকার উন্নতি হয়েছে বা আমাদের সামগ্রিক খেলাধুলা আসলে এগিয়েছে। ক্রিকেট আমার ভীষণ পছন্দের একটি খেলা। আমিও নিজেও ক্রিকেট খেলতাম একসময় খুব বড় পরিসরে না হলেও আমাদের স্থানীয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় খেলেছি। তারেপরে ও বলছি ক্রিকেট কি আমাদের নিজস্ব খেলা না আমাদের নিজস্ব খেলা নয়। আমাদের দেশের দেশীয় যে খেলা গুলো ছিল একেবারে দেশীয় গ্রামঞ্চলের খেলার কথা না হয় বাদই দিলাম হা-ডু-ডু, তীর নিক্ষেপ, দাড়িয়াবান্ধা, গোল্লাছুট, এধরনের খেলাধুলা কি আর অবশিষ্ট আছে, না এ খেলাধুলা গুলো কি এগিয়েছে।
বর্তমানের প্রেক্ষাপটে ক্রিকেট আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান জনপ্রিয় খেলা কিন্তু সেই জনপ্রিয় খেলাটাও কি যতখানি সামনের দিকে যাওয়ার কথা ছিল ততখানি সামনে এগিয়েছে। উত্তর দিবেন অব্যশই না কিন্তু নেগেটিভ উত্তর দেওয়ার পিছনের কারণ কি আমাদের নিজেদের নয়। আমাদের নিজেদের দ্বায়িত্ব কি আমরা সঠিক ভাবে পালন করতে পেরেছি। আমাদের যে দ্বায়িত্বগুলো ছিল তার মধ্যে একটি হল প্রতিভার লালন করা যা আমরা আজ অবধি পারিনি। প্রতিভা ছুড়ির মতো তাকে আপনি যত শানাবেন তত তা ধারালো হবে আর যদি তাকে ফেলে রাখেন তাহলে তা দিয়ে একদিন শশাও আর কাটবে না। আমাদের দেশে যে প্রতিভার আর্বিভাব হয় নি তা কিন্তু নয় কিন্তু সে প্রতিভাগুলো অকালে হারিয়ে গেছে অবহেলায়।
আমরা টেষ্ট স্ট্যাটাস পেয়েছি প্রায় 20বছর হলো কিন্তু আজ অবধি আমাদের ক্রিকেটের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কতখানি হয়েছে। ক্রিকেটাকে আজ অবধি কি আমরা বাংলাদেশের সকল জেলা ও উপজেলায় বা গ্রামগঞ্জে পৌছাতে পেরেছি পারিনি না পারাটা কি আমাদের ব্যার্থতা নয়। আমাদের দেশে কয়টা জেলায় নিয়মিত ক্রিকেট খেলা হয়। প্রতিটায় জেলায় কি খেলা নিয়মিত ক্রিকেট খেলার মতো পরিবেশ তৈরি করার মতো দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশের ক্রিকেটা হয়ে গেছে অনেকটা ঢাকা কেন্দ্রিক কিন্তু একটা দেশের খেলা যদি একটা শহর কেন্দ্রিক হয় তাহলে সেই খেলা কতটা এগুতে পারবে।
পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে যদি ক্রিকেটের কথা চিন্তা করি তাহলে পৃথিবীর অন্যান্য খেলার সাথে তুলনামুলক ভাবে ক্রিকেটের অবস্থান কোথায়। পৃথিবীতে কয়টি দেশে ক্রিকেট খেলা হয়। ক্রিকেটাকে আইসিসি ছড়িয়ে দেওয়ার পরিবর্তে মুষ্টিমেয়ে দেশের খেলায় পরিণত করে ফেলেছে। বলতে গেলে ক্রিকেট খেলাটা হয় 12-14দেশে নিয়মিত পরিসরে সেখানে সেই প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশের অবস্থান কি আমরা পোক্ত করতে পেরেছি। ক্রিকেট খেলাটাকে আইসিসি তার বানিজ্যিকিকরণের নীতিতে আস্তে আস্তে মুষ্টিমেয় 2-3টি দেশের পতাকাতলে আবদ্ধ করতে যাচ্ছে। সেখানে আমাদের অবস্থান কোথায়।
আমাদের দেশে ক্রিকেট খেলা ও অন্যান্য খেলার কথা যদি আমরা তুলনা করি তাহলে কিন্তু একটা আশার আলো দেখা যায়। কেননা অন্যান্য খেলা কিন্তু এখনও সরকারের অনুদান নির্ভর সেখানে কিন্তু ক্রিকেট স্বনির্ভর। অন্যান্য খেলা বলতে যদি আমরা ফুটবলের কথা বলি তাহলে বলা যায় ফুটবলে আমরা যে ধরনের আশা করি যে ধরনের সুবিধা দেই সেই তুলনা কিন্তু ফুটবল আজ অবধি নিজ পায়ে হাটায় সেখেনি। একটা সময়ে বঙ্গবন্ধূ স্টেডিয়ামে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলা ভাগাভাগি করে চলত সেখানে ফুটবল বাঁচানোর কথা বলে ফুটবলের জোঁয়ারের কথা বলে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম থেকে একপ্রকার জোর করে ক্রিকেটকে মিরপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। ক্রিকেট কিন্তু মিরপুরে যাওয়ার পরেও টিকে আছে আর ফুটবল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে থাকার পরেও দিন দিন উল্টোপথে হাঁটছে। ফুটবল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে রাখার পিছনে কারণ বলা হয়েছিল যে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম ছাড়া ফুটবল টিকে থাকবে না। কেমন একটা ছেলেমানুষির কথা। ফুটবল মিরপুরে হলে নাকি দর্শক হয় না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে ফুটবল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হলেও দর্শক হয় না। ফুটবল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হলেও বাংলাদেশের খেলার নেই কোন দৃশ্যমান উন্নতি আছে লজ্জাজনক পারফরমেন্স আর ক্রিকেট কিন্তু তার যোগ্যতাবলে মিরপুরেও দর্শক টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আসলে কোয়ালিটি।
ক্রিকেটা যদি আমরা সবকিছুর উপরে নিয়ে আমরা সকল বিতর্কের উদ্ধে রেখে ভাবা উচিত। কারণ এখানে কিন্তু আমাদের সফলতার জায়গা আছে কারণ অন্যান্য খেলা যেখানে অনেকটা শরীর নির্ভর সেখানে ক্রিকেট কিন্তু অতটা শরীর নির্ভর খেলা নয়। ভৌগলিক ও আবহাওয়াগত কারণে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ অতটা শারীরিক শক্তিশালী নয় যার কারণে নিয়মিত ভাবে অন্যান্য খেলায় কিছুটা পিছিয়ে পড়ি। ক্রিকেট কিন্তু অনেকটা মস্তিষ্ক নির্ভর খেলা। ক্রিকেট খেলায় ব্যাটসম্যানের হাতের জোর এর চেয়ে সময়মতো বলের লাইনে গিয়ে সময়মতো ব্যাটটাকে বলের স্পর্শে আনাটা জরুরি। এই কারণে আমাদের খেলোয়াড়দের এই খেলায় সাফল্য পাওয়ার আশা বেশি। সেখানে আমাদের কর্তাব্যাক্তিদের উচিত আমাদের মেধাগুলোর সঠিক লালন করা। কারণ আমাদের দেশে মেধাবি ক্রিকেট প্লেয়ারের আর্বিভাব হয় তা কিন্তু নয়। আমাদের ছিল টেষ্টের সর্বকনিষ্ট সেঞ্চুরিয়ান, আমারা পেয়েছিলাম টেষ্টে অভিষেকে 10নং ব্যাটসম্যানের বিশ্বরেকর্ড, আমরা পেয়েছিলাম এক টেষ্টে হ্যাটট্রিক ও সেঞ্চুরিয়ান খেলোয়াড়, আমাদের আছে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার একমাত্র শেষের খেলোয়াড়টিকে আমরা কিছুটা প্রতিপালন করেছি আরা বাদবাকি সবগুলো হেলায় হারিয়েছি। এখন এই সব মেধাবিদের যদি আমরা সঠিক ভাবে লালন করতে পারতাম তাহলে আমাদের ক্রিকেট আজ কোথায় পৌছাত। এই সবগুলো প্রতিভাধরদের যদি আমরা একসাথে খেলাতে পারতাম তাহলে আমাদের জয় কিন্তু আজ অধরা হয়ে থাকত না।
ক্রিকেটাকে আমদের সর্বস্তরে পৌছাতে হবে। ক্রিকেটাকে আমাদের সকলের হৃদয়ে পৌছাতে হবে। আর এ জন্য যা করতে হবে তা হলো ক্রিকেটকে সকল বিতর্কের উদ্ধে রেখে এগিয়ে নিতে হবে। যদি একটা শহরের ও একটা গ্রামের খেলোয়াড় সঠিক নিয়মে সকল লেভের খেলায় সম সুযোগ পায় তাহলেই একমাত্র ক্রিকেট সঠিক লক্ষ্যে পৌছাবে। তৃণমুলে যদি ক্রিকেটের উন্নতি না ঘটে তা কিছুই হবে না। সঠিক পদক্ষেপ যদি সঠিক সময়ে না নেওয়া যায় তাহলে মাঝপথে কিন্তু মুখ থুবরে পড়বে। আর একবার মুখ থুবরে পড়লে কিন্তু আবার মাথা তুলে দাঁড়ানো এত সহজ হবে না। একবার যদি লাইনচ্যুত হয়ে যায় তাহলে কিন্তু লাইন ট্রেনে তুলে চালানো এত সহজ হবে না।
আজ অনেক দেশ কিন্তু অবহেলার কারণে অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে। তার বলিষ্ঠ উদাহারণ কিন্তু আফ্রিকার দুই উল্লেখযোগ্য ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়া। একসময় জিম্বাবুয়ের অবস্থান ক্রিকেটে আজকের অবস্থানে ছিল না। জিম্বাবুয়েকে হারাতে অনেক প্রতিষ্ঠিত শক্তির অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। কেনিয়াতো ক্রিকেট থেকে একপ্রকার হারিয়েই গেছে। এই দুই দেশই কিন্তু আমাদের আগে ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলেছে। আজ তারা হারিয়ে গেছে। আর হারানোর পেছনে একমাত্র কারণ হলো তাদের অবহেলা ও অযাচিত হস্তক্ষেপ।
অন্যকে দেখে নিজেকে শিখতে হয় অন্যকে দেখে যে শিখতে পাড়ে তাকে বুদ্ধিমান বলে। আর যে শিখতে পারে না তাকে বোকা বলে। তাই আমাদের উচিত ভাল ও সঠিক শিক্ষাটা গ্রহণ করা। আমাদের উচিত সঠিক পথে চলা। আমাদের প্রশাসকদের উচিত ক্ষমতা আকড়ে ধরে না রেখে ক্ষমতাকে সঠিক ব্যক্তির হাতে সমর্পন করা। অনেক সময় হারকেও মুল্যবান ভাবতে হয়। যদি সেই হারার কারণে আমাদের দেশ ও জাতি সঠিক রাস্তায় চলতে শেখে। নিজের কাছে ক্ষমতা ধরে না রেখে ক্ষমতাকে মানুষের কল্যানে কাজে লাগানোটাই মুল্যবান।
পরিশেষে বলব পৃথিবীকে যে কয়টা মাধ্যম আমাদের কে বিশ্বময় পরিচিত করে তুলেছে তার মধ্যে একটা হলো আমাদের ক্রিকেট। তাই আমার ও আমাদের ক্রিকেটকে সকল কিছু উদ্ধে নিয়ে ভাবা উচিত। তাহলেই আমরা আমদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে পারব।
Leave a Reply