“বিন্দু বিন্দু শিক্ষকরা একত্রিত হলেই আন্দোলনের সিন্ধু গড়ে উঠবে”—এই কথাটি শিক্ষকদের আন্দোলন ও তাদের অধিকার আদায়ের প্রেক্ষিতে উদ্বীপনা সৃষ্টি করার জন্য একটি প্রেরণাদায়ক লাইন। এর মধ্যে একদিকে শিক্ষকদের একতার শক্তি, সংগ্রামের ধারা এবং অন্যদিকে ছোট থেকে বড় আন্দোলনের প্রকৃতির গুরুত্ব নিহিত রয়েছে। আসুন, আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করি কেন এটি সত্য এবং কীভাবে এটি কার্যকর হতে পারে।
১. শিক্ষক সমাজের শক্তি ও গুরুত্ব:
শিক্ষকরা একটি সমাজের মুল স্তম্ভ এবং তাদের কাজ জাতি গঠন, শিক্ষা, সমাজের উন্নয়ন ও নৈতিকতা গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের শিখিয়ে, সামাজিক দায়বদ্ধতা তৈরি করে এবং জাতির ভবিষ্যত তৈরি করতে সহায়তা করেন। শিক্ষকরাই তাদের ছাত্রদের সবসময় শিক্ষা দেয় যে, একতাই বল। একা একা কিছুই হয় না কিন্তু অনেকগুলো এক যদি একসাথে হয় তাহলে আর তখন এক থাকে না তার অর্থ অন্য কিছু দাঁড়ায়। তাই শিক্ষকরা যদি একত্রিত হয়ে তাদের দাবির জন্য সংগ্রাম করেন, তবে তা শক্তিশালী আন্দোলনে পরিণত হতে পারে।
একতার শক্তি:
২. ছোট দাবির আন্দোলন বড় পরিসরে প্রভাব ফেলতে পারে:
শিক্ষকদের আন্দোলন প্রাথমিকভাবে ছোট কিছু দাবির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। তবে এই দাবিগুলি যদি বৃহৎ জনগণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয় এবং সেগুলোর মধ্যে যদি বড় আকারে জনগণের সমর্থন থাকে, তবে তা অল্প সময়ের মধ্যেই একটি বৃহৎ আন্দোলনে পরিণত হতে পারে।
যেমন:
৩. সম্মিলিত উদ্যোগে সাফল্য অর্জন:
এমনকি শিক্ষকদের ব্যক্তিগত বা ছোট ছোট উদ্যোগ যদি একত্রিত হয়, তবে তা বৃহত্তর আন্দোলনে রূপ নিতে পারে। সমাজে সচেতনতা তৈরি হয় এবং আরো মানুষ, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের সমর্থন পেতে পারে।
অফিসিয়াল সাপোর্ট ও পাবলিক সমর্থন:
৪. শিক্ষকদের সামাজিক দায়িত্ব এবং আন্দোলন:
শিক্ষকরা সামাজিকভাবে খুবই প্রভাবশালী এবং তাদের কথা সমাজে গুরুত্ব সহকারে শোনা হয়। যখন তারা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য দাবি তোলেন, তখন সেটি কেবল শিক্ষকদের জন্য নয়, পুরো জাতির জন্য একটি সামাজিক আন্দোলন হয়ে ওঠে। কারণ, শিক্ষকদের উন্নতি, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি, সরকারের শিক্ষানীতি উন্নয়ন—এসবই সমাজের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
দাবি তোলার সামাজিক গুরুত্ব:
৫. সময়ের সাথে আন্দোলন শক্তিশালী হবে:
“বিন্দু বিন্দু” পরিভাষা দিয়েই বোঝানো হচ্ছে যে, শুরুতে আন্দোলন খুব ছোট হতে পারে। তবে সময়ের সাথে সাথে, যতই আন্দোলনের প্রতি যদি আমাদের আগ্রহ বাড়ে তাহলে আমার দেখাদেখি অন্যদের সমর্থন বাড়বে, আন্দোলনটি শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং তার দাবি পূরণে গতি আসবে। আন্দোলনটি এক সময় সারা দেশের শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব করবে এবং জনগণের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে।
আমাদের হাতের কাছেই আছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহারণ। আছে একটি সফল আন্দোলনের জীবন্ত উপমা। আমাদের দেশে যখন বৈমম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হয় তখন কি কেউ ভেবেছিল যে, এই আন্দোলন এই রূপ ধারণ করবে। এই আন্দোলন একটি ফ্যাসিবাদি শক্তিকে পরাভুত করে নতুন দিগন্তের সৃষ্টি করবে। যখন বৈষমীবিরোধী আন্দোলন শরু হয় তখন এটি ছিল মুলত কোটাবিরোধী আন্দোলন পরবর্তীতে তা সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণের কারণ সাধারণ জনগণের আকাঙ্খার প্রতিফলনের দুরুন একটি ফ্যাসিবাদি শক্তির পরাজয় হয়।
এটা থেক আমরা যে শিক্ষা পাই তা হল যে, কোন আন্দোলনকে যদি আমরা সঠিক ভাবে প্রবাহিত করতে পারি তাহলে তা থেকে অধিকার আদায় হবেই হবে। তবে সেখানে সকলের অংশগ্রহণ না হলেও অধিকাংশের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অংশগ্রহন যত বেশি হবে আন্দোলন তত বেশি ভয়ংকর হবে।
পরিশেষে যে কথা বলতে চাই তা হলঃ
“বিন্দু বিন্দু শিক্ষকরা একত্রিত হলেই আন্দোলনের সিন্ধু গড়ে উঠবে।”—এই কথাটি আন্দোলনের স্বরূপ বুঝানোর জন্য অত্যন্ত যথার্থ। এক বা কয়েকজন শিক্ষক তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন শুরু করলে, সেই আন্দোলন ছোট হলেও একে একে অনেক শিক্ষক তার সাথে যোগ দিবে এবং সেটি এক সময় জাতীয় বা জাতীয় পর্যায়ের বৃহৎ আন্দোলনে পরিণত হবে।
একতা, সংগ্রাম, সময়ের সাথে ধৈর্য এবং প্রক্রিয়া এসব উপাদান মিলিয়ে, শিক্ষকদের সংগ্রাম সাফল্য পেতে পারে। একে একে, বিন্দু থেকে বড় সিন্ধু হবে, যা শিক্ষক সমাজের জন্য সামাজিক ও পেশাগত অধিকার নিশ্চিত করবে।
Leave a Reply