মহার্ঘ ভাতা (Cost of Living Allowance – COLA) প্রদান না করার ক্ষেত্রে কিছু যুক্তি থাকতে পারে, তবে তার সঙ্গে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রা এবং সরকারি চাকরিজীবীদের প্রয়োজনীয়তার তুলনা করে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি আলোচিত হতে পারে। সাধারণত, মহার্ঘ ভাতা একটি ধরনের অতিরিক্ত অর্থ, যা সরকারি চাকরিজীবীদের জীবনযাত্রার ব্যয় বা মূল্যস্ফীতি অনুযায়ী বৃদ্ধি করা হয়। তবে, কিছু যুক্তি থাকতে পারে, যা সরকারের পক্ষ থেকে মহার্ঘ ভাতা না দেওয়ার পক্ষে বলা হয়ে থাকে:
১. জাতীয় অর্থনীতি এবং বাজেটের সংকট:
২. মূল্যস্ফীতি এবং পণ্যের দাম:
৩. সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা:
৪. বেসরকারি সেক্টরের মধ্যে পার্থক্য:
৫. দীর্ঘমেয়াদী সংকট এবং ধীর প্রকৃতির পরিবর্তন:
৬. প্রক্রিয়া এবং দীর্ঘস্থায়ী পদক্ষেপের অভাব:
যদিও মহার্ঘ ভাতা না দেওয়ার অনেক যুক্তি থাকতে পারে, তবুও এটি এমন একটি বিষয় যা যদি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, মূল্যস্ফীতি, এবং জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় মেনে না চলে, তবে সরকারের পক্ষ থেকে মহার্ঘ ভাতা প্রদান অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়ে। জনগণের এবং সরকারি চাকরিজীবীদের জীবনমান উন্নয়ন এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মধ্যে একটি সঠিক সমন্বয় প্রয়োজন। তবে একথা একবাক্যে বলা যায় যে, এটি বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের একটি সাহসী সিদ্ধান্ত। এ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আমরা সরকারের অনেক ক্ষেত্রে অনেক ধরনের সমালোচনা করেছি। তার মধ্যে একটি হলো দুর্বল সিদ্ধান্ত গ্রহণ। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনেক বেশি হেজিটেড ফিল করে। কিন্তু এই প্রথম দেখা গেল একটি সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে। সাহসী এজন্য বলছি যে, এদেশের পরাক্রমশালী আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে যাওয়া এত সহজ নয়। এদেশের আমলাতন্ত্র কখনও সাধারণ মানুষের কথা ভাবে না। যদি ভাবত তাহলে এমন সময় এমন একটা প্রস্তাব সরকারের কাছে পেশ করতেই পারত না।
যাই হোক এই প্রথম দেখলাম আমাদের দেশের সরকার জনগণের কথা ভেবে জনগণের সুবিধার কথা ভেবে একটা সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সরকার অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। মহার্ঘ ভাতা প্রদান করলে মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক লোক বা মুষ্টিমেয় কিছু সংখ্যক পরিবার এর সুবিধা ভোগ করবে অথ্যাৎ যারা সরকারী বা আধাসরকারী চাকুরী করে তার। কিন্তু এদেশের সবাই তো আর চাকুরী করে না তাদের জন্য তো কোন ভাতা বরাদ্দ হবে না। তাহলে তারা মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার ফলে অতিরিক্ত যে মূল্যস্ফীতি ঘটবে সে চাপ তারা কিভাবে সহ্য করবে। এমনিতে মুল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবন যাপন অনেক কষ্টসাধ্য করে তুলেছে এর পরে যদি আরও মুল্যস্ফীতি ঘটে তা এদেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সহ্যের সীমার বাইরে চলে যাবে।
হ্যাঁ তবে একটা কথা না বলে পারছি না যে, এই সিদ্ধান্ত আরও আগে নিতে হত কারণ ইতিমধ্যেই মহার্ঘ ভাতার দেওয়ার কথা কানাঘুষা হওয়ার ফলে রীতিমতো বাজারে এর প্রভাব কিছুটা হলেও পড়েছে। তাই এই বিষয়ে আমলারা যখন প্রথম প্রস্তাব দেয় তখনই এই বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তা আরও অনেক ভাল হতো। তাই আবারও বলছি ধন্যবাদ মাননীয় প্রধান উপদেষ্ট ধন্যবাদ প্রফেসর ইউনুস সাহেব আপনকে অন্তরের অন্তরস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
পরিশেষে একটা কথা বলি মহার্ঘ ভাতা দিলে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে উপকৃত হতাম ঠিকই কিন্তু প্রতিবেশীর হাহাকার শুনতে হতো। আমার একার জন্য তো আমি আমার শত প্রতিবেশির হাহাকার শুনতে রাজি নই। আমার একথা হয়ত আমার অনেক সহকর্মীর পছন্দ হবে না তারা হয়ত মনে মনে বা প্রকাশে গালমন্দ করবেন। তারপর আমি বলব এটি এ সরকারের অনেক ভাল সিদ্ধান্তের মধ্যে এটি অন্যতম।
আর একটা অনুরোধ করব এখন হয়ত পরিবেশ পরিস্থিতি মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার জন্য অনুকুল নয় তাই বলে সারাজীবন প্রতিকুল থাকবে না। তাই অনুকুল পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনা করে সময়মতো মহার্ঘ ভাতা হোক বা অন্য কোন উপায়ে হোক আমরা যারা এদেশের জন্য কাজ করি তাদের কোন কোন ব্যবস্থা করবেন আশা রাখি। কারণ বর্তমান অবস্থায় আমাদের আর্থিক অবস্থা খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়।
Leave a Reply