“সরকারের উদ্যোগ ভাল কিন্তু বাস্তবায়নের পলিসি ভাল নয়” একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তবধর্মী পর্যবেক্ষণ। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অনেক সময় সরকার বিভিন্ন সেক্টরে উদ্যোগ নেয় এবং নীতিমালা তৈরি করে, কিন্তু সেই নীতিমালার বাস্তবায়ন অনেক সময় অকার্যকর বা অপ্রতুল হয়ে থাকে। এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, প্রশাসন বা ভিন্ন ভিন্ন সেক্টরে ঘটতে পারে।
১. সরকারের উদ্যোগ ও নীতিমালা:
সরকারের উদ্যোগ সাধারনত জনগণের জন্য উন্নয়নমূলক এবং দ্রুত পরিবর্তনের লক্ষ্যে হয়ে থাকে। তবে, এ উদ্যোগের মধ্যে নীতিমালা তৈরি করা ও তা বাস্তবায়ন করা দুটি আলাদা বিষয়। নীতিমালা বা নীতিগত পরিকল্পনা সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী এবং সমাজের সবার জন্য উপকারী হওয়ার কথা থাকে, তবে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রে ধীরগতির, দ্বন্দ্বপূর্ণ অথবা অফ সিল হয়ে থাকে।
২. বাস্তবায়নের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ:
যদিও সরকার কিছু ভালো উদ্যোগ নেয়, বাস্তবায়নের পর্যায়ে কিছু গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে কিছু প্রধান সমস্যা হলো:
ক. প্রশাসনিক জটিলতা:
- আমলাদের অবহেলা: অনেক সময় প্রশাসনিক স্তরে নীতিমালার সঠিক বাস্তবায়ন হয় না। আমলারা অনেক সময় খুব ধীরগতিতে কাজ করেন এবং তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক সময় শিক্ষকদের মতো পেশাজীবীদের প্রতি অত্যন্ত অবহেলাপূর্ণ হয়। এর ফলে, সরকারী উদ্যোগগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর না হয়ে পড়ে।দুর্নীতি: অনেক ক্ষেত্রে, প্রশাসনিক বা সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে উদ্যোগের উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। যেমন, শিক্ষা খাতে অর্থ বরাদ্দ বা নতুন নীতিমালা বাস্তবায়নে দুর্নীতি বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে, প্রকল্পগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।
- সরকারের সকল ভাল উদ্যোগগুলো যখন আমলারা সামনে থেকে আটকাতে পারে না তখন তারা সেগুলোকে কিভাবে পিছন থেকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়, কিভাবে সেগুলো বাস্তবায়নে সময় ক্ষেপন করা যায় সেই চেষ্টা করে। আফসোস আমাদের দেশের আমলারা যদি আমাদের দেশের সরকারের সকল ভাল কাজগুলো যদি তাদের নিজের কর্তব্য বলে সুষ্ঠ ও সুন্দর ভাবে বাস্তবায়নের চেষ্টা করত আর সরকার যদি কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিত তাহলে সেগুলো যুক্তি তর্ক দিয়ে সেগুলোকে বোঝানোর চেষ্টা করত তাহলে এদেশটা সত্যি সত্যি সোনার বাংলা হতে সময় লাগত না।
খ. রাজনৈতিক চাপ এবং অস্থিরতা:
- রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং নির্বাচনী চক্রান্ত অনেক সময় নীতিমালা বাস্তবায়নে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। সরকারের পলিসি পরিবর্তন বা একাধিক প্রশাসনিক পদ্ধতির মাঝে সমন্বয়হীনতার কারণে পরিকল্পনা কার্যকরী হতে পারে না।
গ. বাজেটের অভাব:
- আমোদের দেশটা অর্থনৈতিক ভাবে অনেক দুর্বল তাই সকল সময়, সরকারের নীতিমালা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য পর্যাপ্ত অর্থায়ন বা বাজেট থাকে না। অনেক প্রকল্প এবং উদ্যোগ এমনকি অর্থের অভাবে ব্যর্থ হয়ে যায়, কারণ যথাযথ পরিকল্পনা এবং সম্পদ বরাদ্দ না থাকলে বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।
ঘ. জনগণের সচেতনতার অভাব:
- জনগণের অবগতির অভাব বা সচেতনতার অভাব অনেক সময় নীতিমালা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করে। বিশেষত, যদি কোনো প্রকল্প বা নীতিমালা জনগণের কাছে পরিষ্কার না হয় বা তারা জানে না কীভাবে এটি তাদের উপকারে আসবে, তবে উদ্যোগ সফল হতে পারে না।
ঙ. প্রযুক্তিগত ও আধুনিকতার অভাব:
- প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার এবং আধুনিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির অভাবে অনেক সময় নীতিমালা বাস্তবায়ন ধীর হয়ে যায়। যেমন, ইনফরমেশন টেকনোলজি বা ডিজিটাল সিস্টেম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশাল ঘাটতি থাকলে সেগুলো কার্যকরীভাবে সম্পাদিত হয় না।
৩. বাস্তবায়নের জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?
ক. প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি:
- প্রশাসনিক স্তরের দক্ষতা এবং সততা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের উচিত, প্রশাসনিক সংস্কার এবং প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি সুনির্দিষ্টভাবে বাস্তবায়ন করা, যাতে নীতিমালা কার্যকরভাবে আধিকারিকদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতে পারে।
খ. বাজেট ও অর্থায়ন নিশ্চিত করা:
- যেকোনো প্রকল্প বা উদ্যোগের বাজেট এবং অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বাজেট বরাদ্দ সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে এবং দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
গ. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সমন্বয়:
- রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং পার্টি পলিটিক্সের বাইরে গিয়ে একযোগভাবে কাজ করা প্রয়োজন। রাজনৈতিক প্রভাব কমিয়ে এনে প্রকল্পগুলো দীর্ঘমেয়াদী এবং সকল দলের সম্মতিতে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
ঘ. জনগণের অংশগ্রহণ:
- জনগণের অংশগ্রহণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষা এবং মিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে জনগণকে নীতিমালা সম্পর্কে জানানো উচিত এবং তাদের মধ্যে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত।
ঙ. প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি:
- ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে সরকারকে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। অনলাইন পদ্ধতি এবং ডিজিটাল সেবা চালু করলে শিক্ষক, প্রশাসন এবং জনগণ সবাই একত্রে কাজ করতে পারবে।
চ. সময়মতো পর্যালোচনা এবং পরিবর্তন:
নীতিমালা বাস্তবায়ন শুরুর পর নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা এবং ফিডব্যাক সংগ্রহ করা উচিত, যাতে কোনো সমস্যা হলে তা দ্রুত সমাধান করা যেতে পারে। প্রয়োজনে নীতিমালায় পরিবর্তন এনে তা অধিকারভুক্ত করা উচিত।
উপসংহার:
আপনার মন্তব্যের মধ্যে যে গভীর বিষয়টি উঠে এসেছে, তা হলো সরকারের উদ্যোগগুলো ভালো হতে পারে, তবে বাস্তবায়নের পলিসি এবং কর্মপরিকল্পনা অনেক সময় অপ্রতুল বা অকার্যকর হয়ে থাকে। এজন্য সরকারের উচিত নীতি বাস্তবায়নে প্রশাসনিক দক্ষতা, বাজেট বরাদ্দ এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সরকারের উদ্যোগ যদি বাস্তবায়নে সফল হয়, তবে তা দেশের মোট উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারবে।
Post Views: 60
Leave a Reply