১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন হিসাবেই পরিগণিত হয়। এবং সেটাই বাস্তবতা কারণ এই দিনটায় আমরা পৃথিবীতে নতুন একটা পরিচয় নিয়ে আবির্ভুত হতে পেরেছিলাম।বাংলাদেশে ১৬ ডিসেম্বরের তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক। এই দিনটি বাংলাদেশের বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয় এবং এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার চূড়ান্ত মুহূর্তের প্রতীক। ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয় এবং পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে, যার ফলে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এই দিনটির তাৎপর্য বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অন্যতম মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত।
৩৬ জুলাই আসলে ক্যালেন্ডারের কোন তারিখ নয় এটি বস্তুতঃ প্রতিবাদের একটি রূপক অর্থে ব্যবহ্যত একটি তারিখ বা সংখ্যা। যা মুলত ৫ আগষ্ট। একটি আন্দোলনকে সফল করার প্রেরণা হিসেবে ব্যবহৃত করার কৌশল। সমাজের নানা ধরনের বৈষম্য দুর করার লক্ষ্যে ১লা জুলাই হতে শুরু হওয়া ছাত্রদের কোট সংস্কারের আন্দোলন যা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন হিসাবে পরিচিতি লাভ করে যা কিনা আজকে অনেক বড় ইতিহাসের পাঠ্য হিসাবে পরিচিতি পেতে চলেছে।
১৬ ডিসেম্বরের তাৎপর্য:
- মুক্তিযুদ্ধের বিজয়: ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয় এবং পাকিস্তান এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় ঘোষণা করা হয়। এটি ছিল বাংলাদেশের দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ফলশ্রুতি, যা ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে শুরু হয়েছিল, যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল।
- বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন: পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দিনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক এবং একটি জাতির মর্যাদা ও গৌরবের প্রতীক।
- শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা: ১৬ ডিসেম্বর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এবং তাদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন। এই দিনে, মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে বিভিন্ন জায়গায় স্মৃতিসৌধ ও অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
- আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ এর বিজয়ের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেতে সহায়তা লাভ করে। এটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও বাংলাদেশের অবস্থান সুসংহত করে।
- জাতীয় ঐক্য এবং গৌরব: ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জনগণের একতা, সংগ্রাম এবং বিজয়ের প্রতীক। এই দিনটি বাংলাদেশি জাতির গৌরব এবং সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে, যেখানে দেশের মানুষ একত্রিত হয়ে এক কঠিন সময়ে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছিল।
এছাড়া, ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অসীম গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে, কারণ এটি শুধু মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তি ছিল না, বরং একটি নতুন স্বাধীন জাতির জন্ম ছিল।
3
৩৬ জুলাই এর তাৎপর্য:
- তরুনদের ঐক্য এবং গৌরব: ৩৬ জুলাই বাংলাদেশের তরুনদের একতা, সংগ্রাম এবং বিজয়ের প্রতীক। এই দিনটি বাংলাদেশি জাতির গৌরব এবং সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে, যেখানে দেশের তরুন সমাজ একত্রিত হয়ে এক কঠিন সময়ে ফ্যাসিস্ট পতনের জন্য সংগ্রাম করেছিল এবং পতল ঘটিয়েই আমাদের তরুনরা ঘরে ফিরেছিল।
- তরুনদের বিজয়: ৩৬ জুলাই, ২০২৪ সালে ফ্যসিস্টদের পলায়নের মধ্য দিয়ে তরুনদের বিজয় নিশ্চিত হয়। এটি ছিল আমাদের দীর্ঘ ১৬ বছরের সংগ্রামের ফসল। যেখানে রাজনীতিবিদরা ছিল অনেকটা ব্যর্থ।
- বাক স্বাধীনতা অর্জন: ফ্যাসিস্ট সরকার পলায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের হারানো বাকস্বাধীনতা ফিরে পায়। এই দিনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক এবং একটি জাতির মর্যাদা ও গৌরবের প্রতীক।
- শহীদ ও আহত ছাত্রদের প্রতি শ্রদ্ধা: ৫ আগষ্ট বাঙালি জাতির জীবনে অন্যতম একটি স্মরণীয় দিন হিসাবে চিহ্নিত থাকবে। এই দিন আমরা আমাদের জীবনের গরুত্বপূর্ণ হারানো অধিকারগুলো ফিরে পাওয়ার দিন হিসাবে ইতিহাসে উল্লেখ থাকবে। এই দিন বা তারিখটি শুধু আমাদের ইতিহাসে নয় পৃথিবীর ইতিহাসে একটি চর্চিত অধ্যায় হিসাবে বিবেচিত হবে। আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই দিনের বর্ণনাগুলো তুলে ধরব সঠিক ভাবে।
- আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: সবকিছুর কাগজে কলমে অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। তেমনি একটি বিষয় হলো ৩৬ জুলাই বা ৫ আগষ্ট। কেউ স্বীকৃতি দিক বা না দিক ৫ আগষ্ট বাংলাদেশি বাঙালিদের মাঝে একটি স্মরণীয় দিন হিসাবে বিবেচিত থাকবে।
১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস এই দিনটি আমরা পেয়েছিলাম দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এর মাধ্যমে। যে যুদ্ধকে আমরা গর্ব করে বলি মহান মুক্তিযুদ্ধ আর এই যুদ্ধে যারা অংশগ্রহণ করেছিল তাদেরকে বলি বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমাদেরকে এই দিনটি কেউ দান ব তওফা হিসেবে দেয়নি। এই দিনটি আমাদের ৩০ লক্ষ শহীদ ও অসংখ্য মা বোনেরে সম্ভ্রম এর বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছিলাম। এই দিনটি আমাদের কারও একার নয় বা হওয়ার কথাও নয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে এই দিনটিকে বা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকে কোন এক ব্যাক্তি কোন একটি পরিবার কোন একটি দল একা একা ভোগ করতে চেয়েছে সকল সময়। তাদের ধারণ এই যে মুক্তিযুদ্ধ তাদের একার সম্পদ এটা আর কাউকে ভোগ করতে দেওয়া যাবে না।
আওয়ামী লীগ সবসময় অন্যান্য দল ও তাদের মধ্যে একটা বিভাজন রেখা টেনে রেখেছে মুক্তিযুদ্ধ দিয়ে যা কখনও তাদের কাছে কাম্য ছিল না। তারা সবসময় বলে এসেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তাদের মধ্যেই বিদ্যমান যারা আওয়ামী লীগ নামক দলটিকে সমর্থন করে যারা আওয়ামী লীগ নামক দলটির ভাল মন্দ নীরবে সমর্থন করে। যারা আওয়ামী লীগের অন্যায়কে অন্যায় বলবে খারাপকে খারাপ বলবে তাদেরকে নানা ভাবে হেনস্তার স্বীকার করা।
এদেশের আপামর জনগণ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়ে। আওয়ামী লীগ পরিচয় পাওয়ার জন্য তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেনি। তারা দেশকে ভালবাসে তা্ই দেশের প্রয়োজনে নিজের জীবনকে অকাতরে বিলিয়ে দিতে রাজী হয়েছিল, নিজের জীবন বাজী ধরেছিল। আওয়ামী লীগ কে ভালবেসে নয়। তারা মুক্তিযুদ্ধ অংশগ্রহণ করেছিল দেশকে স্বাধীন করার জন্য, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। তাদের আশা ছিল একটি শোষণমুক্ত দেশ পাওয়ার, তাদের আশা ছিল বৈষমহীন দেশ গড়ার। তাদের কোন ধারনাকে বাস্তবে রুপ দিতে দেয় নি স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি হিসেবে আত্নস্বীকৃত ধান্দাবাজরা। তারা সকল সময় মুক্তিযুদ্ধকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সার্বজনীন রাখার জন্য আওয়ামী লীগের যা যা করা উচিত ছিল?
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সার্বজনীন এবং অবিচলিত রাখতে আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলের এবং জাতির দায়িত্ব হতে পারে এই চেতনাকে সংরক্ষণ এবং তার যথাযথ প্রয়োগ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সংরক্ষণ এবং সার্বজনীন করা দেশের সকল জনগণের মধ্যে ঐক্য, মূল্যবোধ এবং জাতীয় পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য আওয়ামী লীগের কী কী পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল, তা আলোচনা করা যেতে পারে:
- মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঠিক এবং অখণ্ড সংস্করণ প্রচার এবং শিক্ষার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। অনেক সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিভিন্ন দিক বিকৃত করা হয়, যা জাতির ঐতিহ্য এবং চেতনার জন্য ক্ষতিকর।
- সরকারী পাঠ্যক্রমে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করা এবং তা জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক করা।
২. জাতীয় ঐক্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা
- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে জাতির মধ্যে সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক বিভাজন নয়, বরং একত্রিত হয়ে স্বাধীনতা ও দেশপ্রেমের মূলনীতি অনুসরণ করা। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে এই চেতনা ধারণ করে সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
- জাতির মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা যেমন ধর্মীয়, জাতিগত বা রাজনৈতিক কারণে, তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী।
৩. সর্বজনীন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রচার
- মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের অথবা কোনও এক দলের সঙ্গে সীমাবদ্ধ না রেখে, তা সার্বজনীনভাবে সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের মাঝে প্রচার করা।
- সকল জনগণকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলকে একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে, যাতে মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শ জাতির কাছে জীবন্ত থাকে।
৪. মুক্তিযুদ্ধের অংশীদারদের সম্মান প্রদান
- মুক্তিযুদ্ধের সকল অংশীদার, যাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ, বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ মানুষ রয়েছেন, তাদের সম্মান জানানো এবং তাদের অবদানকে মূল্যায়ন করা।
- মুক্তিযুদ্ধের সকল নায়ক-নায়িকাদের স্মৃতি রক্ষার মাধ্যমে তাদের সম্মান বজায় রাখা।
৫. স্বাধীনতার আদর্শকে আধুনিক সময়ে রূপায়ন
- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এক সময়ের ঘটনা হিসেবে দেখা উচিত নয়, বরং স্বাধীনতার আদর্শকে আধুনিক সময়ে প্রাসঙ্গিক করে রূপায়িত করা উচিত। উদাহরণস্বরূপ, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং স্বাধীনতার অধিকারের মূল্যবোধ বাস্তবায়ন করা।
- রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকৃত না করে, বর্তমান পরিস্থিতিতে এর চেতনা ও আদর্শকে উপযোগী করে তুলে ধরা।
৬. প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সুরক্ষা
- মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে দাঁড়ানো বা ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানোর চেষ্টাকে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলগুলোকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ইতিহাসের বিকৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে এর সঠিক ও নিরপেক্ষ চিত্র তুলে ধরতে হবে।
৭. অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণের সংস্কৃতি গড়া
- মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সার্বজনীন করার জন্য একটি অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিকইসংস্কৃতি তৈরি করা উচিত যেখানে সকল দল, সম্প্রদায় এবং জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে। এটি জনগণের মধ্যে ঐক্য এবং স্বাধীনতার চেতনাকে আরো গভীরভাবে তুলে ধরবে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি শুধুমাত্র একটি দল বা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে তা জাতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এটি সকল নাগরিকের জন্য একটি জাতীয় মর্যাদা এবং গর্বের বিষয় হওয়া উচিত। আওয়ামী লীগ যদি এই বিষয়গুলিতে মনোযোগী হয় এবং দেশব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করে, তবে তা পুরো জাতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বাস্তবে করেছে তার বিপরীতটা যার কারণে ইতিহাস তাদেরকে হরণকারী হিসেবেই মনে রাখবে ধারণকারী হিসেবে না।
চলমান……….
My Sonতা
Post Views: 75
Leave a Reply