বাংলাদেশে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন পে-স্কেল নির্ধারণের আলোচনায় এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হচ্ছে—গ্রেড সংখ্যা কমানো, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের অনুপাত হ্রাস এবং কর্মচারীদের সুবিধা পুনর্বহাল। পে কমিশন উন্মুক্ত মতামত নিচ্ছে সাধারণ নাগরিক, সরকারি কর্মচারী, বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন ও সমিতি থেকে। এতে বিশেষভাবে জোর দেয়া হয়েছে—২০ গ্রেড বেতন কাঠামো রাখা হবে নাকি ভেঙে কমিয়ে আনা হবে।
২০১৫ সালের পে-স্কেলের দিকে তাকালে দেখা যায়, বিভিন্ন গ্রেডের বেতন ব্যবধান অস্বাভাবিকভাবে কম। যেমন—
এমন ক্ষুদ্র ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও গ্রেড আলাদা রাখা হয়েছে। এতে একদিকে যেমন কর্মচারীরা পদোন্নতির ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা ভোগ করছেন, অন্যদিকে অল্প অল্প ব্যবধানেই অনেকগুলো গ্রেড হওয়ায় পুরো কাঠামো অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
পে কমিশনের সদস্যরা জানিয়েছেন, বৈষম্য কমিয়ে আনতে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ বেতনের অনুপাত সমন্বয় করার পাশাপাশি গ্রেড সংখ্যা কমানো জরুরি। প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব করা হয়েছে—
অন্যদিকে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের প্রস্তাব হলো—২০ গ্রেড ভেঙে ১২ টিতে নামিয়ে আনা। তাদের প্রস্তাব—
কর্মচারীদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, অষ্টম পে কমিশনে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করা হয়েছে। অথচ অফিসাররা পদ শূন্য না থাকলেও নির্ধারিত সময়ে পদোন্নতি পান। কর্মচারীরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। তাই তারা স্পষ্টভাবে দাবি তুলেছেন—
গ্রেড কমানো হলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা। কারণ—
তবে উচ্চ গ্রেডে থাকা কর্মকর্তাদের জন্য এতে তেমন লাভ না থাকলেও বৈষম্য কমে আসবে।
অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে নিচের গ্রেডের কর্মচারীরা টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন বেতনের ব্যবধান না কমালে সমস্যার সমাধান হবে না। তাই তারা গ্রেড কমানোর পাশাপাশি বেতনের অনুপাত ১:৯ বা ১:১০ এর মধ্যে আনার পরামর্শ দিচ্ছেন।
ভারতের উদাহরণও এখানে টানা হচ্ছে। সেখানে তিনটি ক্যাটাগরিতে (গ্রুপ-সি, গ্রুপ-বি ও গ্রুপ-এ) ভাগ করে মোট ১৮ লেভেলের বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে কাঠামো যেমন সহজ হয়েছে, তেমনি বৈষম্যও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী উন্নয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন বলছে—
নতুন পে-স্কেল নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে স্পষ্ট যে, গ্রেড সংখ্যা কমিয়ে বৈষম্য হ্রাস করা হবে কমিশনের মূল লক্ষ্য। কিন্তু কর্মচারীরা বলছেন, শুধু গ্রেড কমানোই যথেষ্ট নয়—তাদের হারানো সুবিধা ফিরিয়ে দিতে হবে। অন্যথায় বৈষম্য ঘোচানোর পরিবর্তে নতুন অসন্তোষ সৃষ্টি হবে।
অতএব, নতুন পে-স্কেল হতে হবে এমন একটি কাঠামো, যা সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী উভয়ের জন্য ন্যায়সঙ্গত, কার্যকর ও টেকসই হবে।
Leave a Reply