বাংলাদেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় এক অদ্ভুত বৈপরীত্য চোখে পড়ে—সরকারি খাতে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ঢালতে দ্বিধা নেই, অথচ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজের ন্যূনতম ন্যায্য দাবিতেই অনীহা। প্রশ্ন জাগে, তবে কি এদেশে শিক্ষক সমাজকে বোঝা হিসেবে দেখা হচ্ছে?
শিক্ষকরা আজ রাস্তায় নেমে বাড়িভাড়া মূল বেতনের ২০ শতাংশ বা ন্যূনতম তিন হাজার টাকা দাবি করছেন। তারা চিকিৎসাভাতা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে বলছেন। অথচ সরকারের দৃষ্টিতে এ খাতে বাড়তি ব্যয় মানেই “অসহনীয় চাপ”। কিন্তু রাষ্ট্র যখন গাড়ি, আসবাব, প্রকল্প ব্যয় কিংবা অকার্যকর খাতে অযথা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে, তখন কোনো চাপের কথা বলা হয় না। এই বৈষম্যমূলক মনোভাব শিক্ষকদের প্রতি শুধু অবিচার নয়, জাতির ভবিষ্যতের জন্যও মারাত্মক হুমকি।
একজন শিক্ষক তার সম্মান, মর্যাদা ও প্রেরণার বিনিময়ে কাজ করেন। যখন তাকে মাসে ১৫০০ টাকা বাড়িভাড়া আর ৫০০ টাকা চিকিৎসাভাতা দিয়ে টিকে থাকতে বলা হয়, তখন তা নিছক উপহাস ছাড়া কিছু নয়। বাস্তবে শিক্ষকদের উপেক্ষা করা মানে শিক্ষার্থীদের অধিকার হরণ করা। যারা দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তুলছেন, তারা যদি ন্যায্য সম্মান না পান, তবে দেশ কীভাবে প্রকৃত উন্নতির স্বপ্ন দেখবে?
অতএব এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজ কোনোভাবেই এদেশের বোঝা নন। বরং তারা জাতির মেরুদণ্ড, যাদের কাঁধে দাঁড়িয়ে এদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বোঝা হলে তারা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হতেন না; বোঝা হলে জাতি তাদের শ্রম দিয়ে শিক্ষার আলো পেত না। প্রকৃত বোঝা হলো সেই নীতি ও মনোভাব, যা শিক্ষক সমাজকে অবহেলা করে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখে। এখন সময় এসেছে রাষ্ট্রকে স্পষ্টভাবে সিদ্ধান্ত নিতে—শিক্ষকদের প্রতি অবহেলা করবে, নাকি তাদের শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মর্যাদা ও ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করবে।
মাননীয় কর্তৃপক্ষ,
আমরা এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজ। আমরা এই দেশের অন্ধকার গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত জ্ঞানের আলো পৌঁছে দিচ্ছি। আমাদের হাত ধরে বেড়ে উঠছে ভবিষ্যতের ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিচারক, বিজ্ঞানী এবং নীতিনির্ধারক। কিন্তু আমরা যখন ন্যায্য সম্মান ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হই, তখন কষ্টে-অভিমানেই প্রশ্ন করি—আমরাই কি এদেশের বোঝা?
আমরা বোঝা নই, আমরা সম্পদ। আমরা বোঝা নই, আমরা জাতির মেরুদণ্ড। আমাদের জন্য ন্যায্য বাড়িভাড়া, চিকিৎসাভাতা ও উৎসব ভাতা নিশ্চিত করা মানে আমাদের নয়, গোটা জাতির মর্যাদা রক্ষা করা। আপনারা যদি সত্যিই “মানসম্মত শিক্ষা” চান, তবে শিক্ষকদের অবহেলা করে নয়, তাদের প্রাপ্য মর্যাদা দিয়ে তা অর্জন করতে হবে।
আমরা রাজপথে নেমে আসতে চাই না; আমরা শ্রেণিকক্ষে থাকতে চাই। কিন্তু ন্যায্য প্রাপ্য নিশ্চিত না হলে আমাদের আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প থাকে না। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ নয়, দাবি—আমাদের মর্যাদা ফিরিয়ে দিন, আমাদের প্রাপ্য নিশ্চিত করুন, প্রমাণ করুন শিক্ষক সমাজ এই দেশের বোঝা নয়, বরং আশীর্বাদ।
— এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজ
Leave a Reply