বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবির মুখে অবশেষে সরকার ৫০০ টাকা বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন বাতিলের পথে হাঁটছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি অনুযায়ী তাদের বাড়ি ভাড়া শতাংশ হারে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কক্ষে এ সংক্রান্ত একটি হাইলি কনফিডেন্সিয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি. আর. আবরার, অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং শিক্ষা সচিব রেহেনা পারভীন।
সভার বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার একান্ত সচিব ড. এ.কে.এম. তাজকির-উজ-জামান সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া শতাংশ হারে বৃদ্ধির প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। সেই প্রস্তাবের সর্বোচ্চ সুবিধা যেন শিক্ষকরা পান—এই বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা জোরালো মত দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকদের বেতন তুলনামূলকভাবে খুবই কম, সেই সঙ্গে তাদের বাড়ি ভাতাও অপ্রতুল। তাই বাড়ি ভাতা শতাংশ হারে বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি।”
উল্লেখ্য, সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাতা মাত্র ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করে একটি পরিপত্র জারি করেছিল। তবে শিক্ষক সমাজ সেটিকে অবাস্তব, অবিচার এবং তুচ্ছ বৃদ্ধি হিসেবে আখ্যা দিয়ে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিল। শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী, নতুন শতাংশ ভিত্তিক ভাতা বাস্তবায়িত হলে পুরোনো ৫০০ টাকার প্রজ্ঞাপন কার্যত বাতিল হয়ে যাবে।
অন্যদিকে সরকারের এ পদক্ষেপের মাঝেই শিক্ষকদের আন্দোলন থেমে নেই। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট ঘোষণা করেছে যে তারা আগামী ১২ অক্টোবর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। তাদের মূল দাবি—শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাতা মূল বেতনের কমপক্ষে ২০ শতাংশে উন্নীত করা।
সংগঠনটির সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজীজি জানান, “আমরা সরকারকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে যদি শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য ২০ শতাংশ বাড়ি ভাতার প্রজ্ঞাপন জারি না করা হয়, তবে ১২ অক্টোবর থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে আমরা বাধ্য হব।” তিনি আরও জানান, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সংগঠনগুলোও এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হবে। ইতোমধ্যে ঢাকা শহরে কয়েক লাখ শিক্ষকের সমাগম ঘটানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শিক্ষকদের আন্দোলন থামছে না। কারণ তারা সরাসরি ২০ শতাংশ বাড়ি ভাতার দাবি জানাচ্ছে। এ অবস্থায় যদি সরকার শতাংশ হারে ভাতা দেয়, কিন্তু হার কম হয়, তবে আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে। অন্যদিকে সরকারের সিদ্ধান্তে যদি শিক্ষকদের দাবি আংশিকভাবে পূরণ হয়, তবে আন্দোলন শিথিল হতে পারে।
সার্বিক চিত্রে স্পষ্ট যে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এখন আর ক্ষুদ্র বৃদ্ধি মেনে নিতে প্রস্তুত নন। সরকারের সাম্প্রতিক নীতিগত সিদ্ধান্ত তাদের কিছুটা আশার আলো দেখালেও শিক্ষকদের দাবি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়িত না হলে আসন্ন আন্দোলন রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে বড় ধরনের চাপ তৈরি করতে পারে। তাই সরকারকে দ্রুত, স্পষ্ট ও কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে—যাতে শিক্ষক সমাজের যৌক্তিক দাবি মেটানো যায় এবং শিক্ষা খাত নতুন কোনো অস্থিরতার মুখে না পড়ে।
Leave a Reply