বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি হলো বাড়ি ভাড়া ভাতা শতাংশ হারে প্রদান করা। বর্তমানে তারা ফিক্সড (স্থির) হারে বাড়ি ভাড়া পাচ্ছেন, যা তাদের জীবনযাত্রার ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ঢাকা শহরসহ দেশের প্রতিটি নগর ও জেলা শহরে ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষক সমাজ এ দাবিকে ন্যায্য মনে করছেন।
এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সেখানে মূল বেতনের ওপর ৫%, ১০%, ১৫% এবং ২০% হারে বাড়ি ভাড়া প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থাৎ একজন শিক্ষকের বেতন যত বেশি, তার বাড়ি ভাড়া ভাতাও সেই অনুযায়ী বাড়বে। এতে শিক্ষক সমাজের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রস্তাব পাঠানোর আগেই অর্থ মন্ত্রণালয় আলাদা একটি পরিপত্র জারি করে শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া মাত্র ৫০০ টাকা বাড়িয়ে দেয়। এতে শিক্ষকরা তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন—অর্থ উপদেষ্টা একটি ডিও লেটারে বাড়ি ভাড়া এক হাজার টাকা এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় সেই সুপারিশ পাশ কাটিয়ে কেবল বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শতাংশ হারে বৃদ্ধির যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তা এখন অনুমোদনের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে তাদের হতাশা রয়েছে, কারণ প্রস্তাব পাঠানোর আগেই পরিপত্র জারি হয়ে যাওয়ায় আলোচনার সুযোগ সংকুচিত হয়ে গেছে।
অন্যদিকে, শিক্ষক সমাজ মনে করছেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের সাথে প্রহসন করা হয়েছে। তারা বলছেন, যে দাবিকে বাস্তবসম্মত ও জরুরি হিসেবে বছরের পর বছর ধরে তুলে ধরা হচ্ছে, সেটিকে পাশ কাটিয়ে নগণ্য ৫০০ টাকা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার শিক্ষক সমাজকে অবজ্ঞা করেছে।
এই ক্ষোভ থেকেই শিক্ষক নেতারা নতুন আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট ঘোষণা দিয়েছে, আগামী ১২ অক্টোবর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে তারা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন। তাদের মূল দাবি—বাড়ি ভাড়া ভাতা মূল বেতনের অন্তত ২০ শতাংশ করতে হবে। জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজীজি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আলোচনার নামে শিক্ষকদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে এবং এ প্রহসনের দায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না।
তিনি আরও জানান, গত ১৩ আগস্ট ঢাকার প্রেস ক্লাবে প্রায় এক লাখ শিক্ষক-কর্মচারী সমবেত হয়েছিলেন। এবার অন্তত দ্বিগুণ শিক্ষক সমাগম ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে। মাদ্রাসা, কারিগরি ও সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। অর্থাৎ, আন্দোলন এবার অনেক বেশি ব্যাপক ও শক্তিশালী হতে পারে।
সব মিলিয়ে স্পষ্ট হচ্ছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব পাঠানোর পরও অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র জারি শিক্ষক সমাজকে হতাশ করেছে। এখন প্রশ্ন হলো—সরকার কি শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে, নাকি বারবার ক্ষুদ্র পরিমাণে ভাতা বৃদ্ধি করে আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করবে? শিক্ষকরা বলছেন, তারা এবার আর আশ্বাসে থামবেন না। যদি দাবি পূরণ না হয়, তবে লাগাতার কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো বিকল্প থাকবে না।
Leave a Reply