সম্প্রতি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ১৫০০ টাকায় উন্নীত করার সরকারি সিদ্ধান্ত শিক্ষক সমাজ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল—বাড়িভাড়া মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে নির্ধারণ করা হোক। এই দাবিকে সামনে রেখেই তারা আগামী ১২ অক্টোবর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। আর এ বিষয়ে মাউশির ষড়যন্ত্র এখনও চলমান রয়েছে। আজও মাউশির নাম প্রকাশে এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ ২৪ ডট কমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন আমরা অর্থমন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে চেষ্টা করছি যে বাড়িভাড়া অন্তত দুই থেকে তিন হাজার টাকা করা যায় কিনা এবং চিকিৎসা ভাতা এক হাজার টাকা করার। এখন বুঝতে পেরেছেন তো ভুত কোথায় লুকিয়ে। মাউশি মুখে যতই ভালো ভালো কথা বলূক না কেন তারা মনে প্রাণে কখনই চায় না যে. এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা শতকরা হারে বাড়িভাড়া প্রাপ্ত হোক।
শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন ও ক্ষোভ প্রশমনের অংশ হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন করে কয়েকটি প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠিয়েছে। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে—
তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, উৎসব ভাতার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের জন্য নতুন কোনো প্রস্তাব রাখা হয়নি।
বর্তমানে (প্রতি শিক্ষককে মাসে ১ হাজার টাকা) বাড়িভাড়া বাবদ সরকারকে শুধু মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় বছরে প্রায় ৪৭০ কোটি টাকা খরচ করতে হয়। প্রস্তাবিত ২০ শতাংশ বা ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা হারে বাড়িভাড়া নির্ধারণ করা হলে কেবল এ খাতে সরকারকে বছরে ৩৪০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় বহন করতে হবে।
অন্যান্য বিকল্প প্রস্তাবগুলো হলো:
অর্থাৎ বাড়িভাড়া ভাতা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে গেলে সরকারের বার্ষিক ব্যয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্পষ্টভাবে বলেছে, বর্তমান ৫০০ টাকার চিকিৎসাভাতা একেবারেই অপ্রতুল, যা দিয়ে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করা বাস্তবে সম্ভব নয়। তাই একে অন্তত ১ হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
অন্যদিকে, কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৫০% থেকে ৭৫% করার সুপারিশ থাকলেও শিক্ষকরা এখানেও বৈষম্যের অভিযোগ তুলতে পারেন, কারণ তাদের ভাতা আগের অবস্থাতেই রাখা হয়েছে।
শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে ভাতা বৃদ্ধির দাবি করে আসছেন। সরকারও ধীরে ধীরে ভাতা বাড়াচ্ছে, তবে সেই বৃদ্ধি বাস্তবতার তুলনায় খুবই নগণ্য। ঢাকা ও বিভাগীয় শহরে যেখানে গড় বাড়িভাড়া ১০-১৫ হাজার টাকার ওপরে, সেখানে একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক মাত্র ১৫০০ টাকা বাড়িভাড়া পেলে তা নিছক প্রহসনের শামিল।
সরকারের আর্থিক সক্ষমতা ও বাজেট সীমাবদ্ধতা একটি বড় বাস্তবতা হলেও শিক্ষা খাতকে অবহেলা করলে তার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি বহুগুণ বেশি। শিক্ষক সমাজের ন্যায্য দাবি পূরণ না হলে শুধু আন্দোলনই বাড়বে না, বরং শিক্ষার মান ও শ্রেণিকক্ষের পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই বাড়িভাড়া, চিকিৎসাভাতা ও উৎসব ভাতা নির্ধারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের বাস্তব জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনা করেই টেকসই সমাধান বের করা জরুরি। এ বিষয়ে যদি সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় যদি পরিস্থিতি বিবেচনা প্রসুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে কতিপয় আমলার প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে কিন্তু পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে বাধ্য। আর এই উদ্বত্ত পরিস্থিতির জন্য কিন্তু দায়ী থাকবে সরকার।
Leave a Reply