সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতন স্কেল নির্ধারণের প্রক্রিয়া চলমান থাকাকালে গ্রেড একীভূতকরণের একটি প্রস্তাব নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। কর্মচারীদের বিভিন্ন ফোরাম এবং অংশীজনরা মত দিয়েছেন যে, ২০ নং গ্রেডের সঙ্গে অন্য গ্রেড জুড়ে দিয়ে একীভূত করার প্রস্তাবটি সঠিক নয় এবং এটি সার্বিকভাবে পে-স্কেল প্রণয়নের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সহকর্মীদের নিগ্রহের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
কেন ২০ নং গ্রেডকে যুক্ত করার বিরোধিতা?
২০ নং গ্রেডে সাধারণত ক্লিনার, মালি, আয়া, নৈশ প্রহরী এবং ভিস্তি’র মতো কর্মচারীরা অন্তর্ভুক্ত, যারা সরাসরি মাঠ পর্যায়ে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পরিষেবা প্রদান করেন। এই গ্রেডকে ১৮ বা ১৯ নং গ্রেডের সঙ্গে একীভূত করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করে মূল কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে:
১. নিগ্রহের শিকার হওয়ার ঝুঁকি: নিম্নতম গ্রেডের কর্মচারীদের হঠাৎ উচ্চ গ্রেডে নিয়ে এলে বেতন কাঠামো পরিবর্তিত হলেও, পদমর্যাদা ও কর্মপরিবেশের কারণে তারা উর্ধ্বতন কর্মকর্তা/কর্মচারীদের কাছ থেকে মানসিক বা কার্যনির্বাহী নিগ্রহের শিকার হতে পারেন।
২. ঐতিহাসিক গ্রেড বিন্যাস লঙ্ঘন: ১৯৭৩ সালের পূর্বেকার বেতন স্কেলে পূর্বতন ১০ম গ্রেডটিই বর্তমানে ২০তম গ্রেড হিসেবে পরিচিত। এই গ্রেডের ঐতিহাসিক ও কার্যনির্বাহী বৈশিষ্ট্য অন্যান্য গ্রেড থেকে ভিন্ন।
৩. আইনি জটিলতার আশঙ্কা: ঐতিহাসিক ক্রম এবং কার্যভিত্তিক শ্রেণিবিন্যাস উপেক্ষা করে গ্রেড একীভূত করা হলে তা আইনগত প্রশ্ন তৈরি করতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত পে-স্কেল বাস্তবায়নকে দীর্ঘায়িত করবে।
বিকল্প প্রস্তাব: গ্রেড একত্রীকরণের সঠিক পথ
কর্মচারীদের বিভিন্ন অংশ মনে করেন, যদি গ্রেড একত্রীকরণের প্রস্তাব দিতেই হয়, তবে তা একটি ঐতিহাসিক ও যৌক্তিক কাঠামোর ভিত্তিতে হওয়া উচিত।
উদাহরণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছেন যে, ১৯৭৩ সালের পূর্বতন ৯ম গ্রেডটি ভেঙে ১৯৭৭ সালে যে তিনটি গ্রেড তৈরি করা হয়েছিল, যা বর্তমানে ১৭, ১৮, এবং ১৯ নং গ্রেড হিসেবে পরিচিত—এই তিনটি গ্রেডকে একত্রীকরণ করার প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই তিনটি গ্রেড ঐতিহাসিকভাবে একই উৎসের হওয়ায়, এদের একত্রীকরণ করলে তা যুক্তিসঙ্গত হবে এবং এতে কার্যক্ষেত্রে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে না। তবে কোনো অবস্থাতেই ২০ নং গ্রেডকে এর সঙ্গে যুক্ত না করার জোর দাবি জানানো হয়েছে।
পে-কমিশনকে তাদের কাজটি নির্ভুলভাবে শেষ করতে এবং কর্মচারীদের জন্য একটি ন্যায্য, আধুনিক এবং সব ধরনের জটিলতা মুক্ত বেতন কাঠামো নিশ্চিত করতে সব পক্ষের সহযোগিতা কাম্য।
Leave a Reply