বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতা দীর্ঘদিন ধরে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কে সীমাবদ্ধ রয়েছে। বর্তমানে তারা মাসিক মাত্র ১ হাজার টাকা হারে বাড়ি ভাড়া পাচ্ছেন, যা কোনোভাবেই বাস্তব জীবনের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ প্রেক্ষাপটে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি আর্থিক বিবরণী সংক্রান্ত একটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে, যেখানে শিক্ষকদের বাড়ি ভাতা মূল বেতনের শতাংশ হারে নির্ধারণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
৫ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক শাখার উপসচিব সাইয়েদ এ জেড মোরশেদ আলী স্বাক্ষরিত চিঠিটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়—শিক্ষক-কর্মচারীরা বর্তমানে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন মূল বেতনের ৫০ শতাংশ, চিকিৎসা ভাতা মাসিক ৫০০ টাকা এবং বাড়ি ভাড়া মাত্র ১ হাজার টাকা।
এর আগে শিক্ষা উপদেষ্টা একটি আধাসরকারি পত্রে এসব ভাতা বৃদ্ধির সুপারিশ করেন। তার প্রস্তাবে উৎসব ভাতা ৫০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় উন্নীত করা এবং বাড়ি ভাড়া ভাতা ১ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার টাকায় বাড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছিল।
কিন্তু এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বলছেন—নির্দিষ্ট অঙ্কের ভাতা বৃদ্ধি কোনো কার্যকর সমাধান নয়। তাদের মতে, মূল বেতনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শতাংশ হারে ভাতা নির্ধারণই ন্যায্য। এজন্য তারা বাড়ি ভাড়া ভাতা অন্তত ২০ শতাংশ হারে প্রদানের আবেদন জানিয়েছেন।
এ প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রেরিত আর্থিক বিবরণীতে শতকরা হারে বাড়ি ভাড়া প্রদানের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট অঙ্ক বাড়ানোর পরিবর্তে ভাতাটি মূল বেতনের একটি অনুপাত হিসেবে নির্ধারণ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতনের সঙ্গে শতকরা হারে বাড়ি ভাতা পেয়ে থাকেন। অথচ বেসরকারি শিক্ষকদের জন্য এই সুবিধা নেই, যা বৈষম্য তৈরি করছে। বড় শহরগুলোতে বাসাভাড়া আকাশচুম্বী হলেও শিক্ষকরা একই হারে ভাতা পাচ্ছেন, ফলে তা তাদের প্রকৃত খরচের তুলনায় নগণ্য হয়ে পড়ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই নতুন উদ্যোগ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের পথে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে। তবে এখন প্রশ্ন হলো—অর্থ মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাব কতটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে এবং কবে থেকে বাস্তবায়নের দিকে এগোবে। শিক্ষক সমাজ এখন সেই আশায় দিন গুনছে।
Leave a Reply