বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম বড় একটি স্তম্ভ হলো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। এরা দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখছে, অথচ বছরের পর বছর ধরে অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। সম্প্রতি বাড়িভাড়া বৃদ্ধির নামে মাত্র ৫০০ টাকা যোগ করার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, যা শিক্ষক সমাজে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই এটিকে সরল ভুল কিংবা প্রক্রিয়াগত সীমাবদ্ধতা হিসেবে দেখতে চাইছেন, কিন্তু বাস্তবে এটি মোটেও আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। বরং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে পরিকল্পিতভাবে একটি “প্রহসন” মঞ্চায়ন করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবিধি-৩ শাখায় সিনিয়র পর্যায়ের ৫-৬ জন কর্মকর্তা থাকলেও, অদ্ভুতভাবে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির এই পুরো প্রক্রিয়া একজন উপসচিবের কাঁধে চাপানো হয়েছে। প্রশ্ন জাগে—কেন তাকে বেছে নেওয়া হলো? উত্তর পরিষ্কার: এই কাজটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত, এবং একজন নির্দিষ্ট কর্মকর্তা দিয়ে কাজ করানো সহজ হবে বলেই তাকে বেছে নেওয়া হয়েছে। এতে করে মন্ত্রণালয়গুলো ভবিষ্যতে দায় এড়ানোর সুযোগও রাখতে পারবে।
আজকে মাউশি কিংবা শিক্ষা মন্ত্রণালয় যতই বলুক, তারা কিছু জানত না বা বিষয়টি তাদের অগোচরে ঘটেছে, আসলে পুরো ঘটনাই তাদের সাজানো নাটকের অংশ। কারণ, শিক্ষা উপদেষ্টার পিএস শুরু থেকেই শতকরা হারে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির বিরোধিতা করে আসছিল। তাই কৌশলে কাজটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে শিক্ষক-কর্মচারীদের বিভ্রান্ত করা যায়।
৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শতকরা হারে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা থাকলেও, সেটি ইচ্ছাকৃতভাবে পাঠানো হয়নি। পরিবর্তে কৌশল খাটিয়ে সেটি পাঠানো হয়েছে ৪ অক্টোবর। আর ওই একই দিনে প্রকাশ করা হয়েছে প্রহসনের বাড়িভাড়া বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন। এর মাধ্যমে একদিকে শতকরা হারে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির দাবি বিলম্বিত করা হলো, অন্যদিকে শিক্ষক সমাজের সামনে “ভাতা বৃদ্ধি”র ভুয়া সান্ত্বনা দেখানো হলো।
এখন সবচেয়ে বড় আশঙ্কার জায়গা হলো, আমাদের ন্যায্য দাবি—শতকরা হারে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। মন্ত্রণালয়ের কৌশলগত পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়তো এক সময় শতকরা হারে বৃদ্ধির ঘোষণা আসবে, কিন্তু সেটি হবে ন্যূনতম পর্যায়ে—যাতে শিক্ষক-কর্মচারীরা বড় কোনো সুবিধা না পায়। এভাবেই চাপে ফেলার একটি কৌশল সাজানো হয়েছে।
এখন আর বিভ্রান্ত হওয়ার সময় নেই। পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে, আলোচনার নামে, প্রজ্ঞাপনের নামে, অথবা প্রশাসনিক জটিলতার নামে আমাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের একমাত্র পথ হলো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। আন্দোলনের মাধ্যমেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই পরিকল্পিত প্রহসনের জবাব দিতে হবে। অন্যথায় আজকের এই ৫০০ টাকার প্রহসনই ভবিষ্যতে আমাদের ন্যায্য শতকরা হারে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির দাবিকে আরও ক্ষীণ করে ফেলবে।
এই প্রহসনকে ভাঙার জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী রোডম্যাপ, একক কণ্ঠস্বর, এবং ধারাবাহিক চাপ। সরকারকে বাধ্য করতে না পারলে শতকরা হারে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির ন্যায্য দাবি কেবল কাগজে-কলমেই থেকে যাবে।
Leave a Reply