মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের বেতন জটিলতা নিরসনে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়। ২০২৪ সালের ৫ অক্টোবর জাতীয় শিক্ষক দিবসে তৎকালীন শিক্ষা উপদেষ্টা এবং বর্তমান পরিকল্পনা উপদেষ্টা ঘোষণা দেন, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) পদ্ধতিতে দেওয়া হবে। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)-কে। মাউশি দায়িত্ব পাওয়ার পর তা সঠিক পথে বাস্তবায়নের দিকে না যেয়ে যায় উল্টো পথে।
দায়িত্ব পাওয়ার পর মাউশি সময়োপযোগী ও কার্যকর কৌশল গ্রহণ না করে বরং পদক্ষেপটি আরও জটিল করে তোলে। একের পর এক নির্দেশনা বদল, ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা এবং সিদ্ধান্তে অসঙ্গতির মাধ্যমে তারা শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন প্রদানে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তথ্যানুসন্ধানের নামে দীর্ঘ সময় বেতন আটকে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। একই প্রতিষ্ঠানে একই সময় নিয়োগ পাওয়া সত্ত্বেও কারও কারও বেতন মাসের পর মাস আটকে রাখা হয়েছে। এখনও অনেক শিক্ষক ইএফটির আওতায় আসতে পারেননি।
এ প্রসঙ্গে মাউশি সম্প্রতি এক নির্দেশনায় জানায়, যেসব শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য ত্রুটিপূর্ণ হলেও ধাপে ধাপে তাদের বেতন দেওয়া হয়েছে, তাদেরকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তথ্য সংশোধন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যদিও অনেকেই তথ্য সংশোধন করেছেন, তবুও অনেকে এখনও বাকি রয়েছেন। মাউশি আপাতত কঠোর অবস্থানে না গেলেও সংশ্লিষ্টদের দ্রুত সময়ের মধ্যে তথ্য হালনাগাদ করতে বলেছে। কারণ তথ্য সংশোধন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব যে সকল শিক্ষক কর্মচারী বিভিন্ন কারণে এখনও তথ্য সংশোধন করতে পারেননি তারা অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের তথ্য সংশোধন করতে হবে।
উল্লেখ্য, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনও এখন ধাপে ধাপে ইএফটির মাধ্যমে প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগে ব্যাংকের মাধ্যমে ‘অ্যানালগ’ পদ্ধতিতে বেতন দেওয়া হতো, যা সময়সাপেক্ষ এবং জটিল ছিল। নতুন ইএফটি পদ্ধতির মাধ্যমে কিছুটা অগ্রগতি হলেও মাউশির প্রশাসনিক সংস্কারে গতি না আসায় আগের ‘বিলম্ব সংস্কৃতি’ এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা যায়নি।
সবারই বুঝতে হবে, তথ্য হালনাগাদ ছাড়া এই জটিলতা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব নয়। তাই দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব তথ্য সংশোধন সম্পন্ন করাই হবে যুক্তিসংগত ও দূরদর্শিতার পরিচয়।
Leave a Reply