এমপিওভুক্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষক ও কর্মচারী এবার ‘বিশেষ আর্থিক সুবিধা’র আওতায় প্রণোদনার বর্ধিত হার অনুযায়ী অর্থ পেতে যাচ্ছেন। সরকার ১ জুলাই ২০২৫ থেকে এই আদেশ কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সোমবার (২৩ জুন) অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত এক অফিস আদেশে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এমপিওভুক্ত বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে যারা জাতীয় বেতনস্কেলের গ্রেড-৯ এবং তার ঊর্ধ্বের অন্তর্ভুক্ত, তারা প্রতি বছর ১ জুলাই তারিখে প্রাপ্য মূল বেতনের ১০ শতাংশ হারে ‘বিশেষ সুবিধা’ পাবেন। অন্যদিকে, গ্রেড-১০ এবং তার নিচের গ্রেডে থাকা শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতি বছর ১ জুলাই তারিখে মূল বেতনের ১৫ শতাংশ হারে এই সুবিধা পাবেন। তবে উভয় ক্ষেত্রেই ‘বিশেষ সুবিধা’র পরিমাণ ন্যূনতম ১ হাজার ৫০০ টাকার কম হবে না।
এর আগে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্যও একই ধরনের সুবিধা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। তবে সেই সময় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় শিক্ষকদের মধ্যে অস্পষ্টতা ও উদ্বেগ তৈরি হয়। এ নিয়ে শিক্ষক সমাজের অনেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফোন করে তথ্য জানতে চেয়েছেন এবং সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগের আহ্বান জানিয়েছেন।
২০২৩ সাল থেকেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা চালু হওয়ার পর এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও এ সুবিধা প্রযোজ্য হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। শেষপর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয়, সরকারি কর্মচারীদের পাশাপাশি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও ২০২৩ সালের জুলাই থেকে মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে, ন্যূনতম ১ হাজার টাকা ‘বিশেষ সুবিধা’ হিসেবে পাবেন। সে সময় অর্থ বিভাগ থেকে এ–সংক্রান্ত একটি আলাদা চিঠি জারি করা হয়, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছিল।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরাসরি সরকারের অর্থায়নে মাসিক বেতন ও নির্ধারিত ভাতা পেয়ে থাকেন। তাঁদের জন্য বৈশাখী ভাতা ও বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) দীর্ঘদিন ধরেই চালু রয়েছে। চলতি বছর থেকে তাঁরা ঈদুল আজহার সময়ও মূল বেতনের ৫০ শতাংশ হারে উৎসব ভাতা পাচ্ছেন, যা এ খাতের জন্য আরও এক ধাপ স্বস্তির বার্তা হিসেবে এসেছে।
সরকারের এই সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত শিক্ষক সমাজের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষা খাতে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
Leave a Reply