আমরা মনে করি, শিক্ষকতা এমন একটি পেশা, যেখানে যুক্ত হওয়াটা আমাদের সৌভাগ্য। কিন্তু এই সৌভাগ্যের পেছনেও এমন একজন ‘বিশেষজ্ঞ’ আছেন, যিনি শুধু বাংলাদেশে নয়, সম্ভবত পুরো বিশ্বেই অনন্য। তাঁর কর্মদক্ষতা, কাজের ধরন ও দায়িত্ব পালনের কৌশল এতই ব্যতিক্রমী যে, তাঁর কোনো বিকল্প নেই—তিনি নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী। এতক্ষন যে মহান ব্যাক্তির গুণ গাহন করলাম তিনি উপরের ছবির ব্যক্তি। উনার নাম খন্দকার আজিজুর রহমান, সিনিয়ির সিষ্টেম এনালিষ্ট, ইএমআইএস সেল, মাউশি। নিম্নে উনার ব্যাক্তিগত কারিশমার কথা তুলো ধরার চেষ্টা করলাম যদি আপনাদের কারও নিকট এইসমস্ত গুণ ছাড়াও আরও অন্য কোন গুণের তথ্য থাকে দয়া করে কমেন্টে জানাবেন আমি তুলে ধরব।
প্রথমত: ইনি সেই ব্যাক্তি যার হাতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ইএফটি বাস্তবায়নের মহান দায়িত্ব আমাদের মাউশি তুলে দিয়েছেন। এবং উনি রাতদিন পরিশ্রম করে করে বিগত ছয় সাত মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করেও আজ অবধি এমপিও শিক্ষক কর্মচারীদের ইএফটি বাস্তবায়ন সম্পুর্ণ করতে পারেনি। উল্টো রাত দিন পরিশ্রম করতে গিয়ে ঢাকার মশার কামড় খেয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
দ্বিতীয়ত: তিনিই সেই ব্যক্তি যাঁর কারণে শিক্ষক-কর্মচারীরা জানতে পেরেছেন তাঁদের এনআইডি, ব্যাংক হিসাব, শিক্ষাগত সনদ—প্রায় সব ক্ষেত্রেই রয়েছে ভুল ও অসঙ্গতি। এতদিন ধরে এসব ভুল নিয়েই চাকরি করে আসা হাজার হাজার শিক্ষককে হঠাৎ করে তিনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা আসলে ‘ভুল তথ্যের মাধ্যমে চাকুরীতে নিয়োজিত’ ছিলেন। অথচ তিনি বা তার নিকট কিন্তু এই শিক্ষক কর্মচারীগণ প্রতিবছর ইএমআইএস সেলে শিক্ষক কর্মচারীগণ তাদের আপডেট তথ্য জমা দেন এবং তিনি তা বিচার বিশ্লেষণ করেন তার বিশেষ মস্তিষ্ক দিয়ে। এই বিশ্লেষণ তিনি কাউকে না জানিয়ে নিজ হাতে করেছেন—কোনো কাজ সহকর্মীদের না দিয়ে একাই সব দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
তৃতীয়ত: তাঁর এই ‘বিলম্বপ্রবণ’ কাজের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় রোধ হয় কি না, তা বলা না গেলেও, শিক্ষকদের বেতন বিলম্বের কারণে ব্যাংকে থাকা অর্থের ওপর যে সুদ জমে, তা কার পকেটে যাচ্ছে, সেই প্রশ্ন উঠছে। এই বিলম্ব কি শুধুই প্রযুক্তিগত, নাকি এর আড়ালে রয়েছে আর্থিক সুবিধা অর্জনের অব্যক্ত কৌশল?
চতুর্থত: এই ‘বিশেষজ্ঞ’র দক্ষতা ও অপরিহার্যতার বিষয়টি এতটাই উচ্চ পর্যায়ে বিশ্বাসযোগ্য যে, মাউশির শীর্ষ কর্মকর্তারাও তাঁর বিকল্প তৈরির প্রয়োজন বোধ করেননি। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে পুরো ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে—এটা যেন সবাই মেনে নেওয়ার মতো অবস্থা।
পঞ্চমত: সহকর্মীদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এককভাবে কাজ করে চলা এই ব্যক্তির সহকর্মীরা হয়তো তাঁর প্রতি ‘অগাধ শ্রদ্ধা’ থেকেই নিজে থেকে কাজ করতে এগিয়ে আসছেন না। কিংবা সম্ভবত তিনি কাউকেই কাজ ভাগ করে নিতে দেননি, যেন সব অর্জনের কৃতিত্ব তাঁরই হয়। আর আজ যখন তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত, তখন তাঁর সহকর্মীরা নীরবতা পালন করাকেই শ্রেয় মনে করছেন।
ষষ্ঠত: এখন আমাদের করণীয় একটাই—এই বিশেষজ্ঞ যেন আমাদের মাঝেই থাকেন, তাঁর কোনো অনিষ্ট না হয়, এ জন্য সকলে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করা। কারণ, যদি তাঁর কিছু হয়ে যায়, তাহলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পাওয়া অনিশ্চয়তার গহ্বরে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
তবে এই বাস্তবতা অবিশ্বাস্য হলেও নির্মমভাবে সত্য। একটি এত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, যেখানে লক্ষ লক্ষ শিক্ষক-কর্মচারীর জীবিকা জড়িত, সেটি কেবল একজন ব্যক্তির উপর নির্ভর করে চললে এমন সংকট অবশ্যম্ভাবী। কেন বিকল্প বা ব্যাকআপ জনবল রাখা হয়নি? কেন একটি দক্ষ টিম গঠন করে এই বিশাল দায়িত্ব সমন্বিতভাবে পরিচালিত হলো না?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে—এই অব্যবস্থাপনার দায় কে নেবে? আর কতকাল এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এমন অনিশ্চয়তা, অবহেলা ও অজুহাতের মধ্যে দিন কাটাবে?
মাউশি কি এই দুরবস্থা দেখে না, নাকি দেখেও না দেখার ভান করে? শিক্ষক-কর্মচারীরা তো সরকারেরই অংশ। তাঁদের প্রতি এভাবে দায়িত্বহীন আচরণ কেন? সেই প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার এখনই।
এটাকে বলা যায় নির্লজ্জতা