1971 সাল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বছর, কারণ এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের বছর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে পরিচালিত হয়, যা আমাদের জাতীয় পরিচয় এবং গর্ব এর ভিত্তি। এটি ছিল বাংলাদেশের অস্তিত্বের লড়াই এবং মুক্তির সংগ্রাম।
আপনার প্রশ্নে “1971 কে বাদ দিলে বাংলাদেশই তো বাদ হয়ে যায়?” কথাটি সম্ভবত বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অনন্য মুহূর্তের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে। এটি বলতে চাচ্ছেন যে, যদি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা অর্জন না হত, তাহলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বা স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ হয়তো আজকের মতো থাকত না।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য:
১. স্বাধীনতা সংগ্রাম:
১৯৭১ সালে, বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) পাকিস্তানের শাসন থেকে মুক্তির জন্য একটি বৃহৎ সংগ্রামে নামে। পাকিস্তান সরকার এবং পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার দাবি ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী এবং প্রধান আন্দোলন। এটি ছিল সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রাম।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পেছনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রধান নেতা। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছিল। ২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় Operation Searchlight চালানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনকে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে পরিণত করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয় এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা অর্জন করে।
- মুক্তিযুদ্ধের ভুমিকা:
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনগণ, মুক্তিযোদ্ধারা, এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী একত্রে যুদ্ধ করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। এই যুদ্ধ ছিল জাতীয় স্বাধীনতার জন্য এক ঐতিহাসিক সংগ্রাম, যেখানে লাখো মানুষের প্রাণ গেলেও বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
- স্বাধীনতা ও জাতিরাষ্ট্র গঠন:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ফলস্বরূপ, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পায়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন হয়। এটি ছিল বাংলাদেশের জাতিগত, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আত্মপরিচয়ের এক নতুন দিগন্ত।
১৯৭১ ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব:
যদি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা না হতো, তাহলে বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন উঠত। পাকিস্তান এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব সম্ভবত অদৃশ্য হয়ে যেত। তখন বাংলাদেশ হয়তো পশ্চিম পাকিস্তানের শাসনের অধীনে থেকে যেত এবং বাঙালি জাতির নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং স্বাধীনতা সম্ভবত ধ্বংস হয়ে যেত।
১৯৭১ ছাড়া বাংলাদেশের ভবিষ্যত:
- পাকিস্তানী শাসন: যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা না হতো, তবে বাংলাদেশ পাকিস্তানের অংশ হিসেবে তাদের শাসনাধীন থাকতে পারত, যেখানে বাঙালি জাতির ভাষা ও সংস্কৃতি এবং স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা অবজ্ঞিত হত।
- বিশ্ব রাজনীতি: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ না হলে, বাংলাদেশ হয়তো এক উপনিবেশিক পরিস্থিতির মধ্যে থাকতে পারত, এবং এর আন্তর্জাতিক মর্যাদা ও স্বাধীনতা সম্ভবত অনেক পিছিয়ে পড়ত।
- সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি: মুক্তিযুদ্ধের পর, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে উন্নতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ না হলে, এই উন্নতির পথ সম্ভবত এত দ্রুত হতো না এবং বাংলাদেশের জনগণ হয়তো তাদের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত থাকত।
উপসংহার:
১৯৭১ সাল ছাড়া বাংলাদেশ একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারত না। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাংলাদেশের অস্তিত্বের লড়াই, যেখানে বাঙালি জাতি তাদের স্বাধীনতা, ভাষা, এবং সাংস্কৃতিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে। ১৯৭১ ছাড়া বাংলাদেশের বর্তমান অস্তিত্ব এবং স্বাধীনতা সম্ভবত অসাধ্য ছিল।
Post Views: 90
Leave a Reply