1. admin@kp-nat.com : admin : Ayub Ali
  2. ayub.bhs@gmail.com : Ayub ali : Ayub ali
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১০:৩৬ অপরাহ্ন
Title :
নতুন শিক্ষাক্রম কেমন হবে যা জানার এনসিটিবি এখন থেকে সরকারী চাকুরীজিবীদের মূল বেতন প্রতি বছর বৃদ্ধি পাবে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধি আমলাতান্ত্রিক জটিলতার খপ্পরে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধির সর্বশেষ আপডেট NID তে নাম, জন্মতারিখ ভুলের কারণে ৫ হাজারের অধিক শিক্ষক কর্মচারীর বেতন বন্ধ শিক্ষা ও শিক্ষকদের নিয়ে আমলাদের কোন চিন্তাভাবনা নেই, চিন্তুা শুধু ট্রেনিং নিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বদলি শুরুর দিনক্ষন সম্পর্কে যা জানাল মাউশি অনুদান পাওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ জুন মাসের বেতনের প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে কোনদিন যাবে যা জানাল মাউশি ৩০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান পাচ্ছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীগণ

বুদ্ধিজীবি হত্যার নেপথ্যে কারা?

  • Update Time : রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ২৯ Time View

বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক ও পরিকল্পিত গণহত্যা, যা দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার একটি ষড়যন্ত্রের অংশ। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগী স্থানীয় রাজাকার, আল-বদর, এবং আল-শামস বাহিনীর ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি।

নিচে বিষয়টি বিশদভাবে আলোচনা করা হলো:


১. বুদ্ধিজীবী হত্যার পটভূমি

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বুঝতে পেরেছিল যে তারা যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে। স্বাধীনতার আন্দোলন যখন প্রবল আকার ধারণ করে এবং মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী দেশব্যাপী জয়লাভ করতে থাকে, তখন তারা শেষ মুহূর্তে একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করে।
তাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের এমন বুদ্ধিজীবী ও মেধাবী ব্যক্তিদের হত্যা করা, যারা স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধা ও নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতেন।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে আল-বদর বাহিনী বিশেষভাবে এই কাজটি সম্পাদনের দায়িত্ব নেয়। আল-বদর বাহিনী ছিল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের দ্বারা গঠিত।


২. হত্যাকাণ্ডের সময়কাল

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডটি মূলত ডিসেম্বর মাসের প্রথম থেকে শুরু হয় এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ।

  • ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ: মুক্তিযুদ্ধের গতি বাড়লে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসররা বুদ্ধিজীবীদের ওপর নজরদারি শুরু করে এবং তাদের তালিকা প্রস্তুত করে।
  • ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১:
    এই দিনে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, প্রকৌশলীসহ অনেক মেধাবী মানুষকে তাদের বাসা থেকে অপহরণ করা হয়। তাদের চোখ বেঁধে আল-বদর ও রাজাকার বাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের কাছে নিয়ে যায়।

৩. হত্যাকাণ্ডের স্থান ও পদ্ধতি

বুদ্ধিজীবীদের হত্যার জন্য ঢাকার বিভিন্ন নির্জন স্থান বেছে নেওয়া হয়।

  • রায়েরবাজার বধ্যভূমি
  • মিরপুর বধ্যভূমি
    এসব জায়গায় নিয়ে গিয়ে তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় এবং গুলি করে অথবা ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের মৃতদেহগুলো ফেলে রাখা হয় যাতে প্রমাণ মুছে ফেলা যায়।

৪. হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিরা

পাকিস্তান সেনাবাহিনী

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। তারা এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে আল-বদর, রাজাকার, ও আল-শামস বাহিনীর সহায়তা নেয়।

আল-বদর বাহিনী

আল-বদর বাহিনী সরাসরি বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় জড়িত ছিল।

  • তারা তালিকা তৈরি করে এবং অপহরণ ও হত্যার কাজটি সম্পন্ন করে।
  • জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রসংঘের কিছু নেতাকর্মী এই বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে ছিলেন।
  • এই বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের “ধর্মরক্ষার যোদ্ধা” দাবি করলেও, আসলে তারা পাকিস্তানি স্বার্থ রক্ষায় কাজ করছিল।

রাজাকার ও আল-শামস বাহিনী

এই বাহিনীগুলো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আরও দুটি সহযোগী বাহিনী ছিল, যারা গোয়েন্দাগিরি ও অপহরণে ভূমিকা রাখে।


৫. হত্যার লক্ষ্য

বুদ্ধিজীবীদের হত্যার প্রধান লক্ষ্য ছিল:

  1. মেধা ও নেতৃত্ব ধ্বংস করা:
    পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চেয়েছিল, স্বাধীন বাংলাদেশ যাতে বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে।
  2. উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করা:
    শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের হত্যা করে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
  3. ভয় সঞ্চার করা:
    মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করা এবং জাতিকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেওয়া।

৬. হত্যাকাণ্ডের শিকার বুদ্ধিজীবীরা

হত্যাকাণ্ডের শিকার অনেক মেধাবী ব্যক্তি ছিলেন, তাদের মধ্যে কয়েকজন উল্লেখযোগ্য হলেন:

  • ড. মুনীর চৌধুরী (শিক্ষক ও নাট্যকার)
  • ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা (শিক্ষক)
  • ডা. মোহাম্মদ ফজলুল হক (চিকিৎসক)
  • সেলিনা পারভীন (সাংবাদিক)
  • আবুল খায়ের (সাংবাদিক)
  • ড. আলীম চৌধুরী (চক্ষু বিশেষজ্ঞ)
  • আনোয়ার পাশা (লেখক ও শিক্ষক)

৭. বিচার প্রক্রিয়া

স্বাধীনতার পরে বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এটি দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল।

  1. ১৯৭২: রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামসের বিচার শুরু হয়।
  2. ১৯৭৫: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
  3. ২০১০: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হলে পুনরায় বিচার শুরু হয়।
  4. ২০১৩: আল-বদর বাহিনীর প্রধানসহ কয়েকজনের ফাঁসি কার্যকর হয়।

৮. জাতির ক্ষতি ও প্রভাব

  • বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অপূরণীয় ক্ষতি।
  • এতে দেশের মেধাবী নেতৃত্বহীনতার শূন্যতা তৈরি হয়।
  • এ হত্যাকাণ্ড জাতির মানসিক অবস্থা ও আত্মপরিচয়ের ওপর গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে।

উপসংহার

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ছিল পাকিস্তানের একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথকে কঠিন করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। তবে এই বর্বর হত্যাকাণ্ড মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে দমন করতে পারেনি। বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছু অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা হলেও, এই হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি চিরকাল জাতির হৃদয়ে রয়ে গেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আমার খবর
© All rights reserved © 2025 Kisukhoner Pathshala
Customized By BlogTheme