1. admin@kp-nat.com : admin : Ayub Ali
  2. ayub.bhs@gmail.com : Ayub ali : Ayub ali
বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ০৭:৫৯ অপরাহ্ন

1975 থেকে 1977 পর্যন্ত বাংলাদেশের শাসন আমল

  • Update Time : রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৩১ Time View

বাংলাদেশে 1975 থেকে 1977 পর্যন্ত শাসন আমলটি একটি অস্থির এবং রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল। এ সময় বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন ঘটে এবং এর সাথে সঙ্গে দেশটি নানা সংকটের মুখোমুখি হয়। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর এই সময়কাল শুরু হয়।

### ১. **১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট: শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড**

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে তাঁর নিজ বাসভবন বঙ্গবন্ধু ভবনে এক বিপথগামী সেনাবাহিনীর দল হত্যা করে। শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের এই হত্যাকাণ্ডটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি ভীষণ দুঃখজনক ও চরম ঘটনাবহুল অধ্যায়।

### ঘটনার পটভূমি

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার পুরোধা হিসেবে জাতির পিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। ১৯৭২ সালে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, এবং পরবর্তীতে ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন।

তবে, শাসনের প্রথম কয়েক বছরেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে ওঠে। যুদ্ধোত্তর পুনর্গঠন, খাদ্যাভাব, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং অভ্যন্তরীণ বিরোধ সৃষ্টির কারণে শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে।

এছাড়া, ১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে দেশের বিভিন্ন স্তরের সরকারী কর্মকর্তা, সামরিক বাহিনী এবং রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়তে থাকে। এর ফলে একদল সেনা কর্মকর্তা শেখ মুজিবের শাসনের অবসান ঘটানোর জন্য একটি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

### হত্যাকাণ্ডের দিন

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরবেলা কিছু সেনা কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুর বাসভবন “বঙ্গবন্ধু ভবনে” আক্রমণ করে। পরিকল্পনাটি ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য। মুজিব এবং তার পরিবারের সদস্যদের ঘুমন্ত অবস্থায় আক্রমণ করে হত্যা করা হয়।

#### নিহতদের তালিকা:

– **শেখ মুজিবুর রহমান** – বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও জাতির পিতা।

– **ফজিলাতুন নেসা মুজিব** – বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী।

– **শেখ কামাল** – শেখ মুজিবের বড় ছেলে, একজন সেনাপ্রধান ও ক্রীড়া সংগঠক।

– **শেখ জামাল** – শেখ মুজিবের ছোট ছেলে, একজন যুব নেতা।

– **শেখ রেহানা** – শেখ মুজিবের ছোট মেয়ে (তিনি বিদেশে ছিলেন, সুতরাং বেঁচে যান)।

– **বঙ্গবন্ধুর শ্যালক ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন**।

এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে শেখ মুজিবের পরিবারের অধিকাংশ সদস্য নিহত হন, এবং বাংলাদেশে এক ধরনের শূন্যতা ও শোকের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

### হত্যাকাণ্ডের পেছনে ষড়যন্ত্র

এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী কর্মকর্তা, যার মধ্যে ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. রশিদ, মেজর নাজমুল হুদা, মেজর ফারুক এবং তাদের অনুগত সেনারা। তারা দাবি করেছিল যে, শেখ মুজিবের শাসনব্যবস্থা দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থাকে অস্থিতিশীল করেছে এবং তার শাসনের অবসান ঘটানো প্রয়োজন।

এই হত্যাকাণ্ডের পর, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে বদলে যায়। একদিকে, শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি মানুষের অনুভূতির গভীরতাকে ক্ষুণ্ন করে, অন্যদিকে, এটি বাংলাদেশের সামরিক শাসনের দিকে এক পদক্ষেপ ছিল।

### পরবর্তী ঘটনা

শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের পর, খন্দকার মোস্তাক আহমদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর কয়েক মাস পর, ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে জেনারেল জিয়া উর রহমান এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মোস্তাক সরকারের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসেন।

এই হত্যাকাণ্ড এবং তার পরবর্তী ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মর্মান্তিক অধ্যায় হয়ে দাঁড়ায়, যা দেশটির রাজনৈতিক জীবন, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া এবং জাতীয় ইতিহাসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ১৫ আগস্টকে বাংলাদেশে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়, এবং এই দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অশুভ স্মৃতি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে।

### ২. **খন্দকার মোস্তাক আহমদের সরকার (১৯৭৫-১৯৭৬)**

**খন্দকার মোস্তাক আহমদের সরকার (১৯৭৫-১৯৭৬)** বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অস্থির এবং বিতর্কিত অধ্যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোস্তাক আহমদ রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় আসেন এবং একটি সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

**শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর:**

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর বাংলাদেশে ব্যাপক রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়। শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোস্তাক আহমদ, যিনি ছিলেন একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা এবং বঙ্গবন্ধুর নিকট সঙ্গী, তিনি অল্প সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন।

খন্দকার মোস্তাক আহমদের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পেছনে সামরিক বাহিনীর কিছু কর্মকর্তার সমর্থন ছিল, যারা সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার কারণে মুজিবের শাসনকে ব্যর্থ মনে করেছিল। মোস্তাকের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর, একটি সামরিক সরকার গঠন করা হয়, যা মুজিবের পূর্ববর্তী শাসন ব্যবস্থা থেকে অনেকটাই ভিন্ন ছিল।

**খন্দকার মোস্তাক আহমদের সরকারের গঠন:**

মুজিব হত্যার পর খন্দকার মোস্তাক আহমদ এক অস্থায়ী সরকার গঠন করেন, যেখানে তিনি নিজে রাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্য সামরিক কর্মকর্তাদের মন্ত্রিপরিষদে অন্তর্ভুক্ত করেন। এই সরকার দেশটির সংবিধান এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে সরে গিয়ে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে।

– **রাষ্ট্রপতি:** খন্দকার মোস্তাক আহমদ।

– **প্রধানমন্ত্রী:** খন্দকার মোস্তাক আহমদ সরকার গঠনের সময় কোন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। মোস্তাক নিজেই প্রধান নির্বাহী ক্ষমতা রাখতেন।

– **সামরিক শাসন:** সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সমর্থন লাভ করায়, সামরিক বাহিনী সরকারের কার্যক্রমে বিশেষ ভূমিকা পালন করত।

**সরকারের প্রধান পদক্ষেপ:**

খন্দকার মোস্তাক আহমদের সরকারের প্রধান পদক্ষেপগুলো ছিল:

– **জাতীয় সংসদ বাতিল:** শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের সময় প্রতিষ্ঠিত জাতীয় সংসদটি বাতিল করা হয়। ১৯৭২ সালের সংবিধানও সংশোধিত হয়।

– **গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবসান:** দেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো, রাজনৈতিক দলগুলো এবং সমবায় ব্যবস্থার উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

– **অপারেশন ক্লিন:** মুজিব হত্যার পর মোস্তাক সরকার বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা এবং সামরিক সদস্যদের শৃঙ্খলা রক্ষা ও ত্রুটিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের জন্য দমনমূলক পদক্ষেপ নেয়। এটি “অপারেশন ক্লিন” নামে পরিচিত ছিল, যেখানে কিছু সামরিক কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়া হয়।

**অবস্থার পরিবর্তন:**

খন্দকার মোস্তাক আহমদের সরকার তীব্র সমালোচনা ও বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছিল। তার শাসনামলে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বৃদ্ধি পায় এবং দেশের অর্থনীতি আরো খারাপের দিকে চলে যায়। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বর মাসে, মোস্তাক সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয় এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে নতুন এক অভ্যুত্থান পরিকল্পনা তৈরি হয়।

**জেনারেল জিয়া উর রহমানের ক্ষমতা দখল:**

১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে মোস্তাক আহমদ সরকার বিরোধী সেনা কর্মকর্তাদের একটি বিশাল অংশের দ্বারা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। জেনারেল জিয়া উর রহমান, যিনি তখন সেনাবাহিনীতে ছিলেন, তার নেতৃত্বে এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয়। এই অভ্যুত্থান শেষে ১৯৭৬ সালের নভেম্বরে খন্দকার মোস্তাক আহমদ সরকারের পতন ঘটে এবং জিয়া উর রহমান নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন।

**খন্দকার মোস্তাক আহমদের পতন:**

১৯৭৬ সালের ৭ নভেম্বর, জেনারেল জিয়া উর রহমান একটি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মোস্তাক আহমদকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। মোস্তাককে গ্রেফতার করা হয় এবং তাকে তার সরকারের অবসানের পর একসময় গৃহবন্দি রাখা হয়। এরপর তিনি ১৯৮১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

খন্দকার মোস্তাক আহমদের শাসনকাল ছিল একটি রাজনৈতিক সংকটকাল, যেখানে দেশে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামরিক শাসন, এবং সাংবিধানিক সংকট ছিল। তার শাসনামলের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত এবং কার্যক্রম বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর তার সরকারের শাসনকালটি সংক্ষিপ্ত হলেও তা বাংলাদেশের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কারণ এটি সামরিক শাসনের পথে দেশকে নিয়ে গিয়েছিল।

### ৩. **জেনারেল জিয়া উর রহমানের শাসন (১৯৭৫-১৯৭৭)**

**জেনারেল জিয়া উর রহমানের শাসন (১৯৭৫-১৯৭৭)** বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে, এবং এই পরিপ্রেক্ষিতে জেনারেল জিয়া উর রহমান এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। তাঁর শাসনকাল, যদিও সংক্ষিপ্ত ছিল, তবুও তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।

**শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড এবং খন্দকার মোস্তাক আহমদের শাসন**

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর খন্দকার মোস্তাক আহমদ রাষ্ট্রপতি হন এবং একটি সামরিক সরকার গঠন করেন। তবে মোস্তাকের সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়, এবং সেসময় সেনাবাহিনীতে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে সরকারের প্রতি বিরোধিতা এবং অভ্যন্তরীণ সংকট তীব্র হয়।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিশেষ করে জেনারেল জিয়া উর রহমান, এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে মোস্তাক সরকারের পতন ঘটান। এই অভ্যুত্থানটি ছিল অত্যন্ত সুচিন্তিত এবং সুশৃঙ্খল, এবং জিয়া উর রহমান রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন।

**জিয়া উর রহমানের শাসনভঙ্গি**

জেনারেল জিয়া উর রহমানের শাসনকাল ছিল প্রায় ২ বছর, কিন্তু এর মধ্যেই তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক ব্যবস্থার উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেন। তাঁর শাসন শুরু হওয়ার পর তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন:

#### (i) **সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে ফিরে আসার ঘোষণা**:

জিয়া প্রথমে একটি সামরিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, তবে তিনি ১৯৭৬ সালে একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু করেন, কিন্তু এই ব্যবস্থার মধ্যে স্বাধীন রাজনৈতিক দলগুলোকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল এবং ভোটাধিকারের উপর কিছু নিষেধাজ্ঞা ছিল।

#### (ii) **স্বাধীনতার ঘোষণার ঐতিহাসিক ভূমিকা**:

জিয়া উর রহমান বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণার সঠিক ঐতিহাসিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে পুনরুদ্ধার করে এবং ২৬ মার্চকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ তিনি জাতির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘এখানে আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিচ্ছি।’’ এই বিষয়টি পরে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠে, কারণ কিছু ইতিহাসবিদ দাবি করেন যে শেখ মুজিবুর রহমানই ২৫ মার্চের রাতে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

#### (iii) **নতুন সংবিধান ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংষ্কৃতি**:

জিয়া উর রহমান তার শাসনকালে বাংলাদেশে কিছু সাংবিধানিক পরিবর্তন আনেন। ১৯৭৬ সালে, তিনি **নতুন সংবিধান** চালু করেন, যা ‘বিকল্প ব্যবস্থা’ (বিকল্প আন্দোলন) নামে পরিচিত ছিল। এই সংবিধানটি একতরফা ভাবে দেশে দুইটি রাজনৈতিক দল (একটি আধিকারিক দল এবং একটি বিরোধী দল) প্রতিষ্ঠা করে, এবং বাংলাদেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার পক্ষে একটি নতুন ধারার উদ্যোগ নেন।

#### (iv) **অর্থনৈতিক সংস্কার ও উন্নয়ন পরিকল্পনা**:

জিয়া উর রহমান তাঁর শাসনকালে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি **জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিল** গঠন করেন এবং **পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা** গ্রহণ করেন। তার সরকারের আমলে বিদেশী ঋণ ও সাহায্য গ্রহণের মাধ্যমে কিছু উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। তবে, দেশের অর্থনীতি তখনও তীব্র সংকটের মধ্যে ছিল, যার ফলে তার সরকারও নানা সমালোচনার সম্মুখীন হয়।

**রাজনৈতিক দল ও ক্ষমতায়ন**:

জিয়া উর রহমানের শাসনকালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হয়, এবং রাজনৈতিক আন্দোলনকে কঠোরভাবে দমন করা হয়। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির প্রাথমিক ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও, বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি) প্রতিষ্ঠা করেন এবং তিনি নিজে বিএনপির প্রধান হিসেবে দলের নেতৃত্ব দেন।

 **১৯৭৭ সালের নির্বাচন ও বিএনপি প্রতিষ্ঠা**:

১৯৭৭ সালের ৩০ শে জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে, বিএনপি জয়ী হয় এবং জিয়া উর রহমান পুনরায় রাষ্ট্রপতি হন। এই নির্বাচনে তাঁর বিজয় এবং দলীয় পদ্ধতির প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন শক্তির উত্থান ঘটায়। 

**পরিণতি:**

জিয়া উর রহমানের শাসনকালে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিরোধী দলের উপর দমন-পীড়ন ছিল। তবে তার শাসনামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি কিছুটা উন্নতি লাভ করে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের অবস্থানও কিছুটা শক্তিশালী হয়।

১৯৭৭ সালে জিয়া উর রহমান কিছু ভিন্নমত পোষণকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেন। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনের পর, তার রাজনৈতিক বিরোধিতা তীব্র হয়ে ওঠে এবং তাকে একনায়কত্বের পথে হাঁটতে হয়।

জিয়া উর রহমানের শাসন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি পটভূমিক পরিবর্তন হিসেবে চিহ্নিত হয়। তার শাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি নতুন রাজনৈতিক এবং সাংবিধানিক দিক নির্ধারণ করে, যদিও তিনি একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার দিকে প্রবণতা দেখান। তাঁর শাসনকাল শেষ হয় ১৯৭৭ সালে, কিন্তু এরপর ১৯৮১ সালে তাকে হত্যা করা হয়, যা বাংলাদেশে সামরিক শাসন এবং গণতন্ত্রের পুনর্নির্মাণের বিষয়কে আরো তীব্র করে তুলেছিল।

### ৪. **বিপর্যস্ত অর্থনীতি ও উন্নয়ন পদক্ষেপ**

১৯৭৫-৭৭ সময়কালে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক সমস্যায় পড়েছিল, যার মধ্যে ছিল দুর্ভিক্ষ, খাদ্য সঙ্কট এবং অন্যান্য সামাজিক-অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি। তবুও, জিয়া উর রহমান কিছু উন্নয়নমূলক কাজ হাতে নেন এবং বিদেশী সাহায্য ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন। তাঁর শাসনামলে দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীলতা লাভ করে, তবে এই স্থিতিশীলতা ছিল কেবল সামান্য।

### ৫. **১৯৭৭ সালে জিয়া উর রহমানের একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা**

জিয়া উর রহমান ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি হিসেবে পূর্ণক্ষমতা লাভ করেন এবং একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেন। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করেন এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তার শাসনামলে আরও সংকুচিত হয়ে পড়ে।

এই তিন বছরের সময়কালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিভিন্ন ঘটনা ঘটে, যা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি এবং শাসনব্যবস্থা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আমার খবর
© All rights reserved © 2025 Kisukhoner Pathshala
Customized By BlogTheme