হ্যাঁ, সঠিক। এই সময়কালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একটি সামরিক সরকার পরিচালনা করেন। ১৯৮২ সালে ২৪ মার্চ তিনি এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের সরকারকে উৎখাত করে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরশাদ তার শাসনামলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯০ সাল পর্যন্ত।
এরশাদের শাসনকাল বিভিন্ন দিক থেকে বিতর্কিত ছিল। তিনি দেশে একপাক্ষিক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করেন, সংসদে বিরোধী দলগুলোকে অনুপস্থিত রাখেন এবং সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৬ সালে “জাতীয় পার্টি” নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমে পার্লামেন্টারি ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তার শাসনামলে কিছু উন্নয়নমূলক প্রকল্পও বাস্তবায়িত হয়েছিল, তবে তার শাসনের প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার লঙ্ঘন, কর্তৃত্ববাদী শাসন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা নিয়ে বিতর্ক উঠেছিল।
জাতীয় পাটির শাসনঃ
জাতীয় পার্টির শাসনকাল বলতে সাধারণত **হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ** এর নেতৃত্বে ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত সামরিক শাসন ও তার পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে বোঝানো হয়। এরশাদ যখন ১৯৮২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন, তখন তিনি **জাতীয় পার্টি** গঠন করেন এবং এর মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী হন। তবে, এরশাদের শাসনকালকে জাতীয় পার্টির শাসনকাল হিসেবেই উল্লেখ করা হয়, কারণ তিনি দলের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনা করছিলেন।
এখানে এরশাদের শাসনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো:
### ১. **শক্তিশালী সামরিক শাসন** (১৯৮২-১৯৯০)
১৯৮২ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন এবং দেশের একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে শাসন করতে থাকেন এবং রাজনৈতিক বিরোধী দলগুলোকে দমন করেন। এরশাদ সরকার গণতন্ত্রের পাশাপাশি প্রথাগত রাজনৈতিক শক্তির চেয়ে তার সামরিক কর্তৃত্ব বেশি দৃঢ় করে রাখে।
### ২. **জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠা (১৯৮৬)**
১৯৮৬ সালে এরশাদ তার শাসনের জন্য **জাতীয় পার্টি** (JP) প্রতিষ্ঠা করেন। দলের মাধ্যমে তিনি দেশে একটি **পাকিস্তানি-অনুকূল রাজনৈতিক দল** গড়ে তোলেন। এরশাদ জাতীয় পার্টির মাধ্যমে নিজেকে “গণতান্ত্রিক নেতা” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন, যদিও তার শাসন ছিল ব্যাপকভাবে স্বৈরতান্ত্রিক।
### ৩. **নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিবেশ**
এ সময়, ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন একদলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হয়, যাতে বিরোধী দলগুলো অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এই নির্বাচনের মাধ্যমে তার জাতীয় পার্টি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পুরোপুরি নিশ্চিত করে। পরবর্তী সময়ে কিছু গণতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিলেও, বিরোধী দলের প্রতি অসহিষ্ণুতা ছিল।
### ৪. **উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত পরিবর্তন**
এরশাদের শাসনামলে কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়। বিশেষ করে সড়ক যোগাযোগ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, এবং বন্দর উন্নয়নে কিছু উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে, এই উন্নয়ন প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রেই **ভোটারদের মনোরঞ্জন** এবং **রাজনৈতিক উদ্দেশ্য** পূরণের জন্য ছিল।
### ৫. **সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রের দিকে**
**সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রের দিকে** পরিবর্তনের প্রক্রিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের **১৯৮২ সালের সামরিক অভ্যুত্থান** এবং তার পরবর্তী **স্বৈরাচারী শাসন** ছিল গণতন্ত্রের পথ অবরুদ্ধ করার একটি বড় উদাহরণ। তবে, ১৯৯০ সালের জনগণের বৃহৎ আন্দোলনের পর, এরশাদ সরকার পতনের মাধ্যমে **গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত** হয়। এই পরিবর্তন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিল।
**সামরিক শাসনের সূচনা (১৯৮২)**
১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ, **হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ** সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট **জিল্লুর রহমান** এর সরকারকে উৎখাত করেন এবং রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। এরশাদ ছিলেন **বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান**, এবং তিনি তার সামরিক বাহিনীর শক্তির উপর ভিত্তি করে দেশে **সামরিক শাসন** প্রতিষ্ঠা করেন। এরশাদ এর পরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন এবং একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে একটি স্বৈরাচারী শাসনের দিকে নিয়ে যান।
**জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠা ও রাজনৈতিক কৌশল (১৯৮৬)**
এরশাদ তার শাসনের জন্য ১৯৮৬ সালে **জাতীয় পার্টি** (JP) গঠন করেন। তিনি দাবি করেন, তার দল **গণতন্ত্রের প্রতি আনুগত্য** এবং **জাতীয় ঐক্যের প্রতীক**। তবে, বাস্তবে, জাতীয় পার্টি ছিল একটি **তাঁর ব্যক্তিগত দল**, যা তার শাসনের পক্ষে কাজ করত। এরশাদ দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু করেন, তবে সেই নির্বাচনে বিরোধী দলগুলো অংশ নিতে পারেনি, এবং একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল।
এছাড়া, এরশাদ সরকার সাধারণ জনগণ এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর মনোভাব পোষণ করত। বিরোধী দলগুলোকে দমন করতে তিনি **গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ** এবং **বিরোধী নেতাদের গ্রেফতার ও নির্যাতন** শুরু করেন।
**গণতন্ত্রের প্রতি জনমত ও বিরোধিতা**
এরশাদের শাসনকালে, **গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের আকাঙ্ক্ষা** এবং **বিরোধী দলের শক্তিশালী প্রতিরোধ** ক্রমেই বৃদ্ধি পায়। তার শাসনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অসন্তোষ ছিল, বিশেষ করে ছাত্ররা এবং শ্রমিকরা একাধিকবার প্রতিবাদ এবং আন্দোলনে অংশ নেয়। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনের পর, ছাত্র সংগঠনগুলো, বিশেষ করে **বাংলাদেশ ছাত্রলীগ** এবং **বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন**, সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলন শুরু করে।
১৯৮৯ সালে, যখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও তিক্ত হয়ে ওঠে এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে থাকে, তখন সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক নেতারা **গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন শুরু** করেন। জনগণের মাঝে এরশাদের শাসনকে একটি **স্বৈরাচারী শাসন** হিসেবে দেখা হতে থাকে, এবং তারা পুনরায় **গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা** পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে।
**১৯৯০ সালের গণঅন্দোলন**
১৯৯০ সালের **দিসেম্বরে** আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায় এবং জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্ররা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে সারা দেশে বিক্ষোভ শুরু করে। ৬ ডিসেম্বর, ছাত্রদের নেতৃত্বে একটি বৃহৎ আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে **পদত্যাগের দাবি** জানানো হয়।
এই গণঅন্দোলন এবং ব্যাপক প্রতিবাদে সরকার সাড়া দিতে বাধ্য হয়। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর, **হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ** একেবারে অসহায় হয়ে পদত্যাগ করেন এবং সামরিক শাসন অবসান হয়।
**গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা (১৯৯১)**
এরশাদের পদত্যাগের পর, দেশে একটি **অস্থায়ী সরকার** গঠন করা হয়, যাতে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার পথ তৈরি হয়। ১৯৯১ সালে দেশে **গণতান্ত্রিক নির্বাচন** অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে **বিএনপি** (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) জয়ী হয় এবং **খালেদা জিয়া** বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
**গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক অঙ্গন**
এরশাদ সরকারের পতনের পর, বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণতন্ত্রের **পুনঃপ্রতিষ্ঠা** একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে দেখা হয়। তবে, গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের পরেও বাংলাদেশের রাজনীতি অনেক বিতর্কিত ও অস্থির ছিল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক বিভেদ তীব্র হয় এবং দেশে বহু সময় অস্থিরতা ও সহিংসতার পরিবেশ তৈরি হয়। তবে, ১৯৯১ সালের পর **গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া** স্থিতিশীল হওয়ার দিকে এগোতে থাকে, যদিও বিভিন্ন সময়ে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপও দেখা গেছে, যেমন ২০০৭-২০০৮ সালের **নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার**।
**সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রের দিকে** যাওয়ার প্রক্রিয়া ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও উত্তাল সময়। এরশাদের শাসনকালে, স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ, বিশেষ করে ছাত্রদের নেতৃত্বে, এক নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্ম দেয়। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং এরশাদ সরকারের পতন শেষে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি মোড়ফিরণের মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়।
### ৬. **বিরোধিতা এবং জনগণের প্রতিক্রিয়া**
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনকালে, বিশেষ করে ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত, দেশে বিরোধিতা এবং জনগণের প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত তীব্র এবং ব্যাপক। এরশাদের সামরিক শাসন, স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ এবং বিরোধী দলগুলোর ওপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ, আন্দোলন এবং বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছিল। তার শাসনের শেষদিকে, বিশেষত ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে, জনগণের প্রতিক্রিয়া এতটাই ব্যাপক এবং শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে, শেষ পর্যন্ত তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।
**বিরোধী দলের দমন ও নিষেধাজ্ঞা**
এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর প্রথমেই রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সংগঠিত হতে দেওয়া হয়নি এবং তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, গ্রেফতার এবং নির্যাতন চালানো হয়। এতে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ খুবই অস্থির হয়ে ওঠে। দলের বাইরে কোন রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ হতে দেওয়া হয়নি, ফলে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ে।
বিশেষ করে, **বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (BNP)** এবং **বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ** এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে বৃহৎ বিরোধিতা গড়ে তোলে। আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপির খালেদা জিয়া এসময় তার প্রধান বিরোধী নেত্রী হয়ে উঠেন।
**গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি**
এরশাদ সরকার যখন একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে, তখন সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক নেতারা দেশব্যাপী গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে শুরু করেন। তারা একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। দেশে বিরোধী দলের সভা, মিছিল এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি বেড়ে যায়। ছাত্ররা ছিল এই আন্দোলনের মূল শক্তি। ছাত্র সংগঠনগুলো, বিশেষ করে **বাংলাদেশ ছাত্রলীগ**, **বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন** এবং **শিক্ষার্থী সমাজ** এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ, পদযাত্রা ও হরতাল ডেকে প্রতিবাদ জানাতে থাকে।
**৮০-এর দশকের শেষের দিকের গণআন্দোলন**
১৯৮৯ সালে এরশাদ সরকার দেশের শাসন ব্যবস্থায় কিছু সংস্কারের কথা বললেও তার কোনো বাস্তব পরিবর্তন দেখা যায়নি। তখন জনগণের মধ্যে তার শাসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, এবং সাধারণ জনগণ সকলেই সরকারের বিরুদ্ধে উত্তাল হয়ে ওঠে। ১৯৯০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ব্যাপক আকার ধারণ করে।
**১৯৯০ সালের গণঅন্দোলন ও পদত্যাগ**
১৯৯০ সালের শেষের দিকে, **গণতান্ত্রিক আন্দোলন** দেশজুড়ে তীব্র আকার ধারণ করে। জনগণ, বিশেষ করে ছাত্ররা, **গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা** এবং **এরশাদ সরকারের পতন** দাবি করে রাজপথে নেমে আসে। দেশে ১৯৮২ সালের সামরিক অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে এটি ছিল সবচেয়ে বড় জনগণ আন্দোলন।
১৯৯০ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় **বিশাল বিক্ষোভ**। বিভিন্ন শহরে ছাত্ররা এবং সাধারণ জনগণ সড়ক অবরোধ, হরতাল এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি চালাতে থাকে। এই আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোও সমর্থন জানাতে থাকে। পরবর্তীতে, **১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর** এরশাদ সরকার তার শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদ ও আন্দোলনের চাপে বাধ্য হয়ে **পদত্যাগ** করতে এবং সামরিক শাসন অবসান করতে।
৫. **জনগণের অসন্তোষ ও প্রতিক্রিয়া**
এরশাদের শাসনকালে জনগণের অসন্তোষ ছিল ব্যাপক। এর প্রধান কারণ ছিল:
– **গণতন্ত্রের অভাব:** একপক্ষীয় শাসন এবং বিরোধী দলগুলোর প্রতি অবিচার।
– **মানবাধিকার লঙ্ঘন:** রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার, নির্যাতন, নিপীড়ন এবং সাংবিধানিক অধিকার হরণ।
– **অর্থনৈতিক দুরবস্থা:** অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছিল, যার ফলে সাধারণ জনগণ কষ্ট পাচ্ছিল।
– **স্বৈরাচারী শাসন:** জনগণের মতামত এবং স্বাধীনতা রোধ করে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা।
**এরশাদের পদত্যাগ এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা**
১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ ঘোষণা দেন যে, তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। তার পদত্যাগের পর, **গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা** হয় এবং দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে **আওয়ামী লীগ** এবং **বিএনপি** পুনরায় রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা নেয়। ১৯৯১ সালের নির্বাচন পরে **বিএনপি** ক্ষমতায় আসে এবং **খালেদা জিয়া** দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
এরশাদের শাসনকাল ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং কর্তৃত্ববাদী শাসনের একটি সময়কাল, যা শেষ পর্যন্ত জনগণের আন্দোলন এবং বিরোধী দলের চাপের কারণে শেষ হয়। ১৯৯০ সালে যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়, যেখানে জনগণের শক্তি ও প্রত্যাশা শেষ পর্যন্ত শাসককে পতিত করতে সক্ষম হয়।
এরশাদ পরবর্তী সময়ে জাতীয় পার্টি দিয়ে রাজনৈতিক ভূমিকা অব্যাহত রাখলেও তার শাসনকালকে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি **বিতর্কিত অধ্যায়** হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
১৯৯০ সালে দেশব্যাপী গণআন্দোলনের চাপের মুখে, সারা দেশে ব্যাপক বিক্ষোভ ও আন্দোলনের পর এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। 1990 সালে তার শাসনের অবসান ঘটলে বাংলাদেশে নতুন একটি রাজনৈতিক অধ্যায় শুরু হয়।