প্রযুক্তি কি সবার জন্য আশির্বাদ

পৃথিবী আজ অনেক এগিয়ে গেছে, সাথে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ ও অনেক দুর এগিয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু সেই এগুনোর পাশাপাশি আবার প্রযুক্তি বিভিন্ন কারণে আমাদের মাথাব্যাথার ও কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটাও অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো এই যে, পৃথিবী আজ যে জায়গায় পৌছে গেছে সেখান থেকে প্রযুক্তি ছাড়া কল্পনা করাও প্রায় অসম্ভব। তাই আমাদের উচিত প্রযক্তির ভাল দিক গুলো গ্রহণ করার পাশাপাশি প্রযুক্তির উন্নয়ন যোগ্য দিকগুলোকে কিভাবে আমরা আমাদের ভাল কাজে লাগাতে পারি সেই দিকে নজর দেওয়া।

বর্তমানে আমাদের পৃথিবী বা আমাদের দেশে সকল ক্ষেত্রে আমরা প্রযুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছি এবং কাজের সকল ক্ষেত্রে আমরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। প্রযুক্তি প্রযুক্তি বলে অনেক কথা বলছি কিন্তু আমার মনে হয়ে প্রযুক্তি বলতে আসলে কি বলা হয় তা কিন্তু আমরা অনেকেই ভালভাবে বুঝি না। আমাদের মধ্যে অনেকের মধ্যে একটা ধারণা আছে তাহল প্রযুক্তি মানেই যন্ত্রপাতির ব্যবহার আসলে কিন্তু তা নয়। প্রযুক্তি বলতে ‍শুধুই যন্ত্রপাতির ব্যবহার নয়। প্রযুক্তি হলো কোনো কাজ করার মাধ্যম বা উপায়। আমরা একটা কাজ অনেক ভাবেই করতে পারি সেই অনেক ভাবে করাটাই একেকটা প্রযুক্তি যেমন ধরুন আমরা কোথায় যাব এখন সেই জায়গায় যাওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন ভাবে যেতে পারি। এই ধরুন সেখানে আমরা পাঁয়ে হেঁটেও যেতে পারি আবার কোনো যানবাহনে যেতে পারি। দুটোই কিন্তু যোগাযোগের প্রযুক্তি একটি যন্ত্রচালিত প্রযুক্তি আর একটি যন্ত্র ব্যাতিত প্রযুক্তি পার্থক্য শুধু এতটুকুই। এখন আমরা সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করব বা আমাদের সেই মাধ্যম বা প্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত যেটার মাধ্যমে আমাদের সুবিধার পরিমাণটা বেশি হবে।

সমগ্র পৃথিবীতে আজ তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটা বিপ্লব ঘটেছে এবং এই বিপ্লব ঘটানোর ক্ষেত্রে অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে ইন্টারনেট। তথ্য প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ভূমিকা অনেক বেশি। কিন্তু ইন্টারনেটের ব্যবহার কি আমরা সঠিক ভাবে করতে পারছি। এটাকে কি আমরা সকল সময় শুধু ভাল কাজে ব্যবহার করছি। একটা বিষয় আমরা সবাই জানি লাঠি দিয়ে সাপ মারা যায় আবার লাঠি দিয়ে কারো মাথায় আঘাত করা যায় একটা কাজের মাধ্যমে কারো জীবন বাঁচায় আর একটা কাজের দ্বারা কারো জীবন সন্নিকটে ফেলে এখন লাঠি আমরা কোন কাজে ব্যবহার করব তার দ্বায়িত্ব কিন্তু আমাদের লাঠি কিন্তু নিজে নিজে ব্যবহার হয় না। তেমনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা আমাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে বিপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছি সেটা কি অস্বীকার করতে পারব। একটা সময় আমাদের কোনো খবর কোথায় পৌছাতে হলে চিঠি লিখতে হতো যা পৌছাতে পৌছাতে 5-7দিন সময় লেগে যেত এতে করে দেখা যেত জরুরী খবর পাঠানোর পর বিষয়টি আর জরুরী থাকে না। কিন্তু যোগাযোগের এই প্রযুক্তি আবিস্কার হওয়ার ফলে আমরা কিন্তু এখন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যেকোনো জায়গায় লাইভ যোগাযোগ করতে পারছি সেকেন্ডের কম সময়ের ব্যবধানে। শুধু কি তাই আমরা কোনো চুক্তির ক্ষেত্রে পেপারস পাঠানোর ক্ষেত্রে আমরা নির্ভর করতাম ফ্যাক্স সেই ক্ষেত্রে বেশি সংখ্যার পেপারস হলে তখন পড়তে হতো বিভিন্নমুখী সমস্যায়। আর এখন যত বেশি পেপারস হোক না কেন ইমেইল ব্যবহার করে আমরা খুব সহজেই যত বড় ডকুমেন্ট হোক না কেন অতি দ্রুত আমরা প্রেরণ করতে পারছি।

ব্যাংকিং বাবস্থার দিকে যদি আমরা তাকাই সেখানে দেখব ইন্টারনেট ব্যবহার করে কি দ্রুত ব্যাংকিং লেনদেনে গুলো হচ্ছে। অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবস্থাতো ব্যাংকিং সেবাকে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এখন দেশের যে কোন প্রান্তের চেক ক্যাশ করতে সেই প্রান্তে আর যাওয়ার প্রয়োজন হয় না আমরা আমাদের বাড়ির পাশের ব্যাংক থেকে চেক ক্যাশ করতে পারি। মোবাইল ব্যাংকিং এর কথা আর কি বলব এটা সমন্ধে আমরা সবেই জানি।

শিক্ষা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে ইন্টারনেট ব্যবহারের  ফলে। অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আমরা আগে যতটুকু যাই জানতাম কিন্তু করোনাকালীন সময়ে অনলাইন শিক্ষা সম্পর্কে জানিনা এমন মানুষ খুজে পাওয়া মুশকিল। আমরা হয়তো ঠিকঠাক অনলাইন পাঠদান কে কাজে লাগাতে পারিনাই সেটা আমাদের ব্যর্থতা কিন্তু যদি এটাকে আমরা আরও ফলপ্রসু ভাবে ব্যবহার করা যেত তাহলে কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার অনেক ঘাটতিই পূরণ করা সম্ভব হতো বলে ভাবাই যায়।

ইন্টারনেটের ব্যবহারের আরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে বা যদি বলি এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যা বলে শেষ করা যাবে না কিন্তু আমাদের সেই ক্ষেত্র ‍গুলোর দিকে চোখ না পড়ে আমাদের চোখে পড়ছে আমাদের যুব সমাজের কিছু কিচু যুবক যখন দিন রাত পড়াশুনা বাদ দিয়ে মোবাইলে গেইম খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। যখন আমরা জানি মোবাইলে পর্ণ মুভি দেখার কথা তখন আমরা বলি এই ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে এই গুলি করতে পারছে।  আপনার বাড়ির ছেলেমেয়েদের প্রতি আমরা কতটুকু খেয়াল রাখছি। আপনার সন্তানের প্রতি খেয়াল রাখার দায়িত্ব এবং কর্তব্য কিন্তু একান্ত আপনার নিজের এবং তার মধ্যে বিবেকবোধ মনুষত্ববোধ জাগ্রত করার দায়িত্ব কিন্তু আপনার। এই দায়িত্ব কিন্তু প্রযুক্তির নয়।

ইন্টারনেটের কথা অনেক বললাম এবং বললে আরও অনেক কথাই বলা যাবে কিন্তু প্রযুক্তি বলতে শুধু ইন্টারনেটের ব্যবহার নয়। দেখেনে এই প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে পৃথিবীর চিকিৎসা ব্যবস্থাা আজ কোথায় পৌছেছে। এখন পৃথিবীতে কয়টি মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। আমি বলতে চাচ্ছি যে পৃথিবীতে আজকের দিনে কয়টি মানুষ মারা যাওয়ার কারণ আমরা জানতে পারছি না বা আরও সহজ কথায় বলতে গেলে আমরা কিন্তু এখন কোনো মানুষ মারা যাওয়ার আগেই জানতে পারছি যে সে কোন রোগে আক্রান্ত আর এটা সম্ভব হয়েছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে। সবাইকে হয়ত আমরা সঠিক চিকিৎসা দিতে পারছিনা সঠিক কিন্তু আমরা কিন্তু প্রযুক্তির কল্যানে আমরা রোগ নির্ণয় করতে পারছি।

কৃষি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির কথা আর কি বলব দেখেন আজ থেকে 25-30বছর আগে কি আমাদের দেশের কৃষি জমির পরিমাণ কম ছিল না এখন কম বা বেশি। সত্যি কথা বলতে গেলে তখনকার চেয়ে এখন জনসংখ্যার আধিক্যের কারনে আবাদি জমির পরিমাণ কমে গেছে।কিন্তু আপনি অতীত দেখেন একই পরিমাণ বা বেশি পরিমাণ আবাদি জমি থাকার পর ও আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু ঠিকমতো খেতে পায়নি কারণ তখন কৃষি ক্ষেত্রে এত যুতসই প্রযুক্তির আবির্ভাব হয় বা আমরা সঠিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে শিখিনি। কিন্তু এখন আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ার পর ও এখন আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন আর এটা সম্ভব হয়েছে সঠিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে। এখন আমরা প্রতিনিয়ত প্রতিটি ফসলের উন্নত থেকে উন্নততর জাত আবিস্কার করে সেটার সাথে অতি দ্রুততর সময়ে আমরা আমাদের কৃষকদের পরিচিতি করিয়ে দিচ্ছি।

আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ছোঁয়ার ফলে আমরা আমাদের জীবনকে আমূল পরিবর্তন করতে পেরেছি এটা যেমন সত্যি তেমনি কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটাও সত্যি অনেক সময় ভুল কাজে ভূল প্রযুক্তির ব্যবহার বা না জেনে ব্যবহার করার কারণে অনেক সময় বিপদ ঘটাচ্ছি আমরা। আর দোষারোপ করছি প্রযুক্তিকে। আসলে প্রযুক্তির তো নিজে নিজে ব্যবহার হয় না এটাকে যেভাবে ব্যবহার করা যায় এটা সেভাবেই ব্যবহার হয়। দোষটা প্রযুক্তির নয় দোষটা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে তার বোধ শক্তির ।

পরিশেষে একটা কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে যে দেখেন বর্তমান সময়ে আমরা আজ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি তার একমাত্র বা অন্যতম প্রধান ভুমিকা কিন্তু প্রযুক্তির তাই আমাদের উচিত প্রযুক্তিকে অভিশাপ হিসাবে না দেখে আশির্বাদ হিসাবে বিবেচনা করার তাহলে আমরা উত্তরোত্তর সামনের দিকে এগিয়ে যাব।