1. admin@kp-nat.com : admin : Ayub Ali
  2. ayub.bhs@gmail.com : Ayub ali : Ayub ali
বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫, ০২:২৮ অপরাহ্ন

করোনা ও আমাদের জীবন ব্যবস্থা

  • Update Time : বুধবার, ১০ জানুয়ারী, ২০২৪
  • ২৪ Time View

করোনা ও আমাদের জীবন ব্যবস্থা

পৃথিবীর সবকিছুই পরিবর্তনশীল এটা আমরা স্বীকার করি আর নাই করি। সময়ের আবহে সবকিছুতেই একদিন পরিবর্তনের হাওয়া লাগবে এটাই সত্যি। পরিবর্তন সময়ের চাহিদা সময়ের সাথে একসময় সবকিছুর পরিবর্তন হয় এবং তা মেনেও  নিতে হয়। যে জাতি বা মানুষ এই পরিবর্তন যত তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারে তারা তত সহজে জাতি বা মানুষ হিসেবে তত বেশি অগ্রসর হয়ে যায়। তবে কিছু কিছু পরিবর্তন আবার আসে খুবই দ্রুত সময়ের মধ্যে খুবই দ্রুত বেগে যার  সাথে মানিয়ে নেওয়া একটু দুরুহ লাগে আমাদের বাস্তব জীবনে। যেমন কোভিড-19 আমাদের তথা সমগ্র পৃথিবীরই সকল মানুষের জীবন ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এই পরিবর্তন কিন্তু আমরা কেউ সেভাবে আশা করি নাই তবে এটাই বাস্তবতা যে, আমাদের আগামীর পৃথিবীতে এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে আমাদের চলতে হবে এই পরিবর্তনকে মেনে নিয়েই আমাদের বাঁচতে হবে, পরিবর্তনকে সাথে করে আমাদের সবাইকে সামনের পথ এগুতে হবে।

কোভিড-19 আমাদেরকে অনেক কিছুই নুতন করে ভাবতে শিখিয়েছে। আমরা অনেক কাজ করতে না চাইলেও আমাদের সে  কাজ করতে বাধ্য করেছে। কোভিডের কারণে হয়ত আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি এটা সত্যি কিন্তু কিছু  কিছু ক্ষেত্রে আবার আগামীর পথচলার দিগন্ত কিন্তু উন্মেচনও করেছে। কোভিডের কারণেই হয়তবা আমরা জানতে পেরেছি যে, মানুষের জীবন মৃত্যু নিয়েও কি পরিমাণ বাণিজ্যিক চিন্তা ধারা আমরা করতে পারি। মানুষের ক্রান্তিকালীন সময়কে কিভাবে পুঁজি বানিয়ে তা নিয়ে মুনাফা করতে হয়। কোভিডের কারণেই আমরা বুঝতে পেরেছি যে, আমরা চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে যত বড় বড় কথা বলি না কেন আসলেই তা অন্তসারশূণ্য বুলি ছাড়া আর কিছুই নয়। যা শুধু বলতে হয় বলেই আমরা বলি যার কোন প্রকার ভিত্তি বাস্তবে পাওয়া যায় না এটা শুধু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যে সত্যি তা কিন্তু নয় সারা পৃথিবীর বাস্তব চিত্র অনেকটা এরকমেরই। সবচেয়ে কষ্টের ব্যাপার কি জানেন বর্তমানে পৃথিবীতে যে মহামারির আগমন ঘটেছে এ থেকে বাঁচতে হলে আমাদের সবাইকে এক হয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে কিন্তু আদতে আমরা কি লড়াইটা সকলেই এক হয়ে লড়ছি। এক হয়ে যদি না লড়াই করি তাহলে কিন্তু কোনদিনই আমরা এই বিপদ থেকে মুক্ত হতে পারব বলে মনে হয় না।

বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে “ দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ” কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতে এই প্রবাদটি কি আমরা মেনে চলার চেষ্টা করি। যদি মেনে চলতাম তাহলে কিন্তু আমরা অনেক সহজেই এই বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেয়ে যেতাম। একটু খেয়াল করলে দেখবেন বর্তমাণে পৃথিবীতে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে এই কোভিডের ভ্যাকসিন ও এর চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে একটা প্রতিযোগীতা চলছে যে কে কার আগে ভ্যাকসিন বাজারে নিয়ে আসতে পারে। তাহলে সেই দেশের মুনাফা বেশি হবে সে দেশ আর্থিক ভাবে বেশি লাভবান হবে। কিন্তু আমরা এটা না করে যদি সবাই সম্মিলিত ভাবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতাম তাহলে কি এত দুরুহ ব্যাপার হতো বলে মনে হয় না।

1ম বা 2য় বিশ্বযুদ্ধ কোনটাই আমরা দেখিনি দেখিনি যুদ্ধের ভয়বহতা। যা কিছু বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে আমরা জেনেছি তা অতীত ইতিহাস থেকে বা টিভি, সিনেমা দেখে। তবে পত্রিকার পাতায় দেখেছি প্রত্যক্ষ যুদ্ধের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ ও পরিবারের অসহায়ত্ব। যে কোন বড় ঘটনার দুই দিক থাকে একটা থাকে ভাল দিক আর একটা থাকে খারাপ দিক। ঘটনার সাথে জড়িত পক্ষ হয় উপকৃত হয় না হয় বঞ্চনার স্বীকার। তবে এর পার্শ্ববর্তী কিছু লোকজন কিন্তু ঠিক এর থেকে অবস্থার সুযোগ নিয়ে ফুলে ফেঁপে উঠে। আর বেশির ভাগ লোক হয় বিদ্ধস্ত, বিপদগ্রস্থ, ধ্বংসপ্রাপ্ত। আমরা করোনা মহামারির সময়ে এই বিষয়গুলো যে অনেকখানি সত্য তা অনেকাংশে বুঝেছি। তবে আমাদের জীবদ্দশায় আমরা বিশ্বযুদ্ধ না দেখলেও করোনার মহামারি কিন্তু সেই বিশ্বযুদ্ধের কিছুটা আঁচ আমাদের দিয়ে গেছে। দেখেছি আমরা মানুষের অর্থনৈতিক অসহায়ত্ব, মানুষের হাহাকার। দেখেছি মহামারিতে গরীব দুখী মানুষের রিলিফের সামগ্রী কিভাবে লুটপাট করতে হয়। কি করে করোনা ভুয়া রির্পোট বানিয়ে কোটি কোটি টাকা মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া যায়। এতদিন আমরা দেখেছি একজন ডাক্তার কিভাবে একজন অসুস্থ রোগিকে সেবা করে আর করোনা মহামারির সময় দেখলাম ঐ পেশায় নিয়োজিত আরেকটি মানুষ এ থেকে কিভাবে সর্ব্বোচ্চ  পরিমাণের ফায়দা লুটা যায়। দেখিছি সরকারের উচ্চ ধাপের লোকজনের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে মহামারির ফায়দা লুটতে হয়। দেখেছি করোনা মহামারির সুযোগ নিয়ে কালোবাজারিরা কিভাবে দ্রব্যমুল্য নিয়ে কারসাজি করে। যা আমাদের সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে কারণ একদিকে মহামারির সময়ে মানুষের রোজগার নেই চলে তার উপর এমন কারসাজি মানুষের একেবারে নাভিশ্বাস উঠার মতো অবস্থা। আর এর জন্য দায়ী একশ্রেণীর মানুষের গুজব সৃষ্টিকারী ভুমিকা গ্রহণ করা যে, কিছুদিন পর আর বাজারে কিছু পাওয়া যাবে না তাই অতিরিক্ত মুজুদের আগ্রহ সৃষ্টি হয় আর এর ফলে সৃষ্টি হয় কৃত্রিম সংকট। আর এই সংকটকে কাজে লাগিয়ে কালোবাজারিরা কালোটাকার পাহাড় মজবুত করে। অনেক বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয় ছিল বেশ লক্ষ্যনীয় তা হল পরিবহণ বাণিজ্য। আমাদের দেশের পরিবহণ মালিকরা এই মহামারির সুযোগ কিন্তু কমবেশি ভালভাবেই গ্রহণ করেছে তারা যাত্রী কম পরিবহণের দোহাই অথ্যাৎ স্বাস্থ্য সচেতনতার দোহাই দিয়ে পরিবহণ ভাড়া দ্বিগুনের বেশি আদায় করেছে। যা ছিল অনেকটা মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। আর ওষুধ কোম্পানির কথা আর নুতন করে নাই বা বললাম তারা স্যানিটাইজার ও মানুষের শ্বাসকষ্ট জাতীয় ওষুধের দাম তো বাড়িয়েছেই সাথে সাবসিডিয়ারী হিসাবে অন্যান্য অনেক ওষুধের দামই তাদের ইচ্ছমত রিঅ্যারেঞ্জ করেছে।বিশ্বজুড়ে সাথে আমাদের দেশে ছিল বাণিজ্যিক লেনদেনের ভয়ঙ্কর ভয়বহতার মুখে পড়ার চিত্র যদিও আমাদের অর্থনীতিতে এর খুব বেশি প্রভাব আমরা পড়তে দেখিনি। তবে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দেশের সকল সেক্টর।

করোনা কালীন সময়ে সকল ক্ষেত্রেই যে, সরকারের ব্যর্থতা ছিল তা বলা যাবে না। সরকার অনেক ক্ষেত্রে তার সীমিত সামর্থ নিয়ে চেষ্টা করেছে তবে যে জিনিসটা চোখে পড়েছে তা হল সরকারের প্রতিটি অংগ এক হয়ে কাজ না করার আগ্রহ। আবার এও দেখেছি আমাদের প্রশাসন বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্ব পালন ছিল লক্ষনীয়, আর সেনাবাহিনী তো বরাবরের ন্যায় এবারও সামনে থেকেই বিপদের  মোকাবেলা করছে। পাশাপাশি সমাজের কিছু বিত্তবানের ভূমিকাও অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছে।

আমাদের দেশে সরকার সবচেয়ে বেশি চিন্তিত ছিল আমাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এত বেশি চিন্তিত ছিল যে, তাদের পরীক্ষা ছাড়াই পাশ করে দিয়েছে। সরকার আমাদের সাধারণ মানুষদের নিয়ে খুব বেশি না ভাবলেও আমাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিন্তু খুব বেশি বেশি ভেবেছে। আর ভাবনার ফল হল অটো পাশ। তবে তা আসলে ভাল করবে না খারাপ উদাহারণ সৃষ্টি করবে তা কিন্তু এখন বলা না গেলেও ফল যে ভাল হবে না তা কিছুটা বোঝাই যায়।

আসল কথা হলো কোন বড় ধরনের বিপদে পড়লে মানুষের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় তার মধ্যে একটি হল তাৎক্ষণিক লোভ যা পুরো সমাজকে অনেকাংশে ধ্বংস করে ফেলে।

এত কিছুর পর ও কিছু যে, ভাল উদাহারণ যে মহামারির সময়ে সৃষ্টি হয় নি তা কিন্তু নয়। এই মহামারির সময়ে আমরা দেখেছি কিভাবে হাতে হাত মিলিয়ে, পায়ে পা মিলিয়ে চলা যায়। দেখেছি দেশের অনেক বেসরকারী প্রতিষ্ঠান তাদের সীমিত সামর্থ নিয়ে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে। দেখেছি রাজনৈতিক দলগুলো রাজনীতি ছেড়ে করেনা প্রতিরোধে একতাবদ্ধ হতে।

সবশেষে বলতে চাই যে, এখনও আমাদের সংকট কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি তাই আমাদের সকলের উচিত এখনও সংযম প্রদর্শনের মাধ্যমে এই মহামারির মোকাবেলা করা। আমরা যেন হেরে না যাই, বাঙ্গালীরা বীরের জাতি। বাঙ্গালীরা লড়াই করে জিততে জানে বাঙ্গালীরা লড়াই ছাড়া হারতে জানে না। বাঙ্গালীরা বিপদে এক হয়ে একে অন্যের সাথে মরতে জানে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আমার খবর
© All rights reserved © 2025 Kisukhoner Pathshala
Customized By BlogTheme