অর্থ কি জীবনের সকল প্রয়োজন মেটায়…….

মানুষ পৃথিবীর বুকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে বিবেচিত হয় ধর্মীয় ব্যাখায় পৃথিবীর যা কিছু সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করেছেন সবকিছু মানুষের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে। হয়ত বা সেটাই সঠিক কিন্তু সকল ক্ষেত্রে এই সত্য কথাটি সত্য বলে মনে হয় না। মনে না হওয়ার পিছনে এই পার্থিব জগতের যে বস্তুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তাহল মানুষের নিজের তৈরী কাগজের উপর প্রিন্ট করা এক কপি।

আমরা আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত নানামুখী চাহিদার মুখোমুখি হই এবং সেই চাহিদাগুলো পূরণ করার জন্য এই সামাজিক পরিবেশে আমাদের সকলের যে বস্তুটি দরকার হয় তা হল অর্থ। বাস্তবিক পৃথিবীর সকল চাহিদা পূরণ করতে অর্থ লাগে অর্থ ছাড়া আমাদের কোন চাহিদাই পূরণ হয় না এটা সত্য আবার অর্থ দিয়েও সকল চাহিদা পূরণ হয় না এটাও আপনি জোর দিয়ে বলতে পারবেন না। বাাঁচতে হলে আপনার অর্থ প্রয়োজন আছে এটা সত্য কিন্তু মনে রাখবেন এটাই একমাত্র অবলম্বন নয়। একটা প্রবাদ আছে যে, “অর্থই অনর্থের মুল”।

আমরা কিছুদিন হলো কাগজে কলমে উন্নয়নশীল দেশের কাঠামোতে প্রবেশ করেছি খুব ভাল কথা কিন্তু তা কিন্তু এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। তো আগের পজিশনের কথা যদি ধরি তাহলে অউন্নত দেশের মানুষ আমরা। তো সেরকম দেশে যে সমস্যাগুলো থাকে তা হলো এখানে অর্থ একটা ‍গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। কারণ দারিদ্র মাথায় নিয়ে ভাল ভাল কথা বেশি দিন ভাল লাগে না। মানুষের জীবনে চাওয়া পাওয়ার শেষ নেই, কবির কথা যদি বলতে হয় তাহলে বলতে হয় “এ জগতে হায় সেই বেশি চায় আছে যার ভুরি ভুরি”।

বর্তমান পৃথিবীতে একটা কৃত্রিম পাওয়ার হলো অর্থ। অর্থ হলে কৃত্রিম একটা সম্মান পাওয়া যায় এটা সত্যি তবে সে সম্মান কতদিন ধরে রাখা যায় সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষে। কারণ শুধুই অর্থ দিয়েই যদি সম্মান পাওয়া যেত আর সেই সম্মান যদি টেকসই হতো তাহলে পৃথিবীতে সবাই শুধু অর্থ উপার্জন করার দিকেই মনোযোগ দিত জীবন গড়ার অন্য সকল বিষয় বাদ দিয়ে দিত। অর্থ মানুষের জীবনে একটা সাপোর্ট তৈরী করে এটা সত্যি কারণ জীবনে চলতে গেলে অর্থ এর প্রয়োজন আমরা কোন ভাবেই অস্বীকার করতে পারবনা। বর্তমানে পৃথিবীতে অনেকে হয়ত ভাবে একমাত্র অর্থের মাপকাঠি দ্বারাই  প্রতিপত্তি ও সম্মান নিয়ন্ত্রিত হয় বলে, কি করে অর্থ উপার্জন করা যায় তার জন্য মানুষের চেষ্টার অন্ত নেই। অর্থ সম্পদের স্বার্থেই রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যুদ্ধের কারণ হয়।  অর্থের কারণে শ্রমিক-মালিকের মধ্যে বাধে মতবিরোধ, ভাই ভাইয়ের মধ্যে বৈরিতা বারে। বাবা মায়ের সাথেও কোন কোন সময় আর্থিক বিষয় নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি হয়। যেটা আমাদের কোন দিন কাম্য নয়।

এই পৃথিবীতে মানুষের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি অর্থ। তাই অর্থ মানুষের নিয়ন্ত্রণাধীন অর্থ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে না। মানুষ চিরকালই অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটাই পৃথিবীতে স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু কোন কারণে মানুষ যদি অর্থ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে তখন কিন্তু এই অর্থ অনর্থের মুল বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। একটা প্রবাদ আছে বাঁনরের হাতে যদি খন্তি পড়ে তাহলে বানর কি করবে জানেন, তেমনি অর্থ যদি কোন অযোগ্য ব্যাক্তির হাতে পড়ে তাহলে এই পৃথিবীকে অশান্ত করে ফেলে। কারণ অর্থ মানব জীবনের জন্য অপরিহায্য হলেও এর যথাযোগ্য ব্যবহাার না হলে ব্যাক্তি ও সমাজ জীবনে নেমে আসে বিভিষিকাময় অন্ধকার।

অর্থ উপার্জনের জন্য মানুষ চিরকালই জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হয়। নানা রকম পরিশ্রম করে, নানারকম বুদ্ধি খাটায়। নানা রকম প্রতিকূলতাকে জয় করার স্পৃহা জাগে তার মনের মধ্যে। অর্থ আমাদের জীবনের বিভিন্নরকম প্রয়োজন মেটায় বলে আমরা হয়ত অনেক সময় মনে করি অর্থ মুল্যহীন। তাই সারাজীবন আমরা অনেকে শুধু অর্থের পিছনে ছুটি আর ছুটি অন্য কোন দিকে কোন প্রকার খেয়াল রাখি না।  বিপদে আপদে উৎসবে  আনন্দে জন্ম মৃত্যুতে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অর্থের প্রয়োজন এটা আমরা অস্বীকার করতে পারি না এটা সত্যি  কিন্তু এই সকল বিষয়গুলো যে একমাত্র অর্থ দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয় তা কিন্তু আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি না। অর্থ দ্বারা হয়ত আমরা কিছু সময়ের জন্য সুখ কিনে আনতে পারি এটা সত্যি কিন্তু সেটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়। এক কথা আমাদের সকলেরই মনে রাখা উচিত যে পৃথিবীর অনেক বড় বড় খারাপ কাজ কিন্তু অর্থের কারণেই হয়। অর্থ হয়ত কিছু কিছু সময় আপনার জীবনকে কিছুটা সুরক্ষা দিবে আবার কিছু সময় জীবনকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। “অর্থই জীবন, অর্থহীন মৃত্যু। অর্থের লোভে মানুষ নীতিবর্জিত হয়ে মুানুষ অহরহ নানা দুস্কর্মে লিপ্ত হয় তার হাজারো উদাহারণ আমাদের সমাজে বিদ্যমান। অন্যায় পথে অর্জিত অর্থ মানুষকে বিবেকহীন করে তোলে। অর্থের লোভলালসা মানুষের নৈতিককতার অধঃপতন করে। এই অর্থের লোভেই মানুষ চরিত্রহীন হয়ে সমাজ বিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীর সকল প্রকার দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও অশান্তির কারণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অর্থ।

যদি ও কাজটা কঠিন তবুও যে এই কাজটা কিছুটা করতে পেরেছে সেই তার জীবনকে মধুময় করতে পেরেছে তা হল অর্থের আগ্রহ নিয়ন্ত্রণ করা। আপনাকে জানতে হবে কি পরিমাণ প্রয়োজন কতটুকু আপনার সামর্থ্য আছে সেই বিষয়। যদি ও সেটা আমদের অনেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। আপনি কি কারুনের মতো অর্থ বিত্তের মালিক হতে চান, যদি চান তাহলে কারুনের শেষ পরিণতি কথা একটিবার হলেও ভেবে দেখবেন দয়া করে। একটি অনেক অর্থশালী লোককে জিজ্ঞাসা করে দেখবেন আর একটি কম অর্থশালী লোকের সাথে কথা বলে দেখবেন যে রাত্রিতে কার ঘুম নিবিঘ্নে হয়। একজন অর্থশালী লোক তার পরিবারের সাথে কতটা সময় দেয় আর একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন তার পরিবারের প্রতি কতটা সময় দেন খেয়াল করে দেখবেন। একটি অর্থশালী লোক তার ছেলেমেয়েদের সাথে সপ্তাহে কতদিন লাঞ্চ অথবা ডিনার করে আর গ্রামের একজন দরিদ্র কৃষক কতদিন তার ছেলেমেয়েদের সাথে দুপুর অথবা রাতের খাবার খায়। পারিবারিক বন্ধন কথাই যদি বলি তাহলে একটু খেয়াল করে দেখবেন সমাজে কোন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বেশি। একটি বিত্তশালী লোক সমাজের কি পরিমাণ ক্ষতির কারণ হতে পারে আর একজন কৃষক সমাজের কি পরিমাণ কল্যাণ বয়ে আনে একটু খেয়াল করলে দেখবেন।

অর্থের লোভ মানুষকে অমানুষ করে তোলে, অর্থের লোভ মানুষের নৈতিকতা নিকৃষ্টতম করে ফেলে। কোন কোন সময় জীবনের প্রয়োজনীয় এই জিনিসটি আপনাকে ভুল পথে পরিচালিত করে। সুস্থ সমাজ জীবন ও স্বাভাবিক সমাজ জীবন অতিবাহিত করার জন্য অর্থের প্রয়োজন অস্বীকার করা যাবে এটা সত্য তবে তা কখনও একমাত্র নিয়ামক নয়। জীবনে আপনার প্রয়োজনীয় অর্থের দরকার আছে তবে তা কখনই অঢেল নয়। অঢেল অর্থ আপনার জীবনের সুখ বয়ে আনবে না নিশ্চিত, অঢেল অর্থ কখনও কখনও আপনার জীবনকে ভুল পথেও পরিচালিত করতে পারে কাজেই আমাদের অঢেল অর্থের বিষয়ে সাবধান থাকাটা জরুরী। অঢেল অর্থ আপনার সন্তানকে বা আপনার নিজেকে অহংকারী করে তুলতে পারে আর অহংকার মানুষকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যায়।

পৃথিবীতে অর্থ হয়ত কোন কোন সময় আপনাকে কিছুটা অবলম্বন দিবে এটা সত্যি তবে সেই অবলম্বন কতটা শক্তিশালী হবে তা কিন্তু আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে। কারণ একটা কথা আপনাকে মনে রাখতে হবে অর্থ আপনি আপনার প্রয়োাজনে ব্যবহার করবেন অর্থ যেন আপনাকে ব্যবহার না করে। জীবনটা সুখি করতে শুধু অর্থের প্রয়োজনটাই মুখ্য নয় হয়ত কিছুটা প্রয়োজন।

পরিশেষে বলতে চাই অর্থের ব্যবহার করুন তবে অপব্যবহার করবেন না। কারণ অর্থের অপব্যবহার ব্যাক্তি ও সমাজ জীবনকে বিভীষিকাময় করে তুলবে।