সরকারি চাকরিজীবীদের বহুল প্রতীক্ষিত মহার্ঘভাতা খুব শিগগিরই বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে এই ভাতা চালু করার লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। জনপ্রশাসন এবং অর্থ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ বিষয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে বেতন স্কেলভেদে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘভাতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এর ফলে আসন্ন বাজেট বাস্তবায়নে বাড়তি ব্যয় কেমন হবে, সে হিসাবও তৈরি করা হচ্ছে। ভাতার হার, বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিশদ আলোচনার জন্য আগামী ২০ মে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সরকার মহার্ঘভাতা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত একটি সাত সদস্যবিশিষ্ট পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে। প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কমিটি পর্যালোচনা করে গ্রেড অনুযায়ী ভাতার হার নির্ধারণ করে এবং গ্রেডভিত্তিক ভিন্ন হার সুপারিশ করে—যেমন, ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের জন্য ২০ শতাংশ এবং ১ থেকে ১০ম গ্রেডের জন্য ১০-১৫ শতাংশ।
মূলত ২০১৫ সালে অষ্টম পে-স্কেল কার্যকর হওয়ার পর আর কোনো পূর্ণাঙ্গ বেতন কাঠামো সংস্কার হয়নি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় কর্মচারীদের জীবনযাত্রা ব্যয়ও বেড়েছে। বিশেষ করে মধ্য ও নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এই বাস্তবতা বিবেচনায় রেখেই মহার্ঘভাতা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে দেশে সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের জন্য মহার্ঘভাতা চালু হলে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয়ের পরিমাণ হবে বিপুল। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘভাতা প্রদান করা হলে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে। তবে বিকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, যদি প্রথম থেকে দশম গ্রেডের জন্য ১০ শতাংশ এবং ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের জন্য ২০ শতাংশ হারে ভাতা দেওয়া হয়, তাহলে বাজেটে ৬ হাজার কোটি টাকার মতো বাড়তি ব্যয় হতে পারে। আবার যদি উভয় পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভাতা দেওয়া হয়, তবে ব্যয় দাঁড়াবে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে বেতন-ভাতা বাবদ বরাদ্দ রয়েছে ৮২ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১০.৪১ শতাংশ। তবে অতিরিক্ত পদোন্নতি ও নিয়োগের কারণে তা সংশোধিত বাজেটে বেড়ে ৮৪ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
এই মুহূর্তে প্রস্তাবটি জনপ্রশাসনবিষয়ক স্থায়ী কমিটির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহেই এই প্রস্তাবটি কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে। সেই বৈঠকে অনুমোদন পেলে প্রস্তাবটি প্রধান উপদেষ্টার চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রস্তাবিত মহার্ঘভাতার খসড়া তৈরি হয়ে গেছে। এতে বর্তমান বছরে দেওয়া ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট বাতিল করে নতুন হারে ভাতা চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে।
সরকারি চাকরিজীবীরা দীর্ঘদিন ধরে নতুন পে-স্কেল এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সংগতি রেখে ভাতা বৃদ্ধির দাবি জানিয়ে আসছেন। বিশেষ করে ২০২৩ সালের জুলাইয়ের আগে প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পেলেও, এরপর ইনক্রিমেন্ট স্থগিত হয় এবং সেই সময় থেকেই মহার্ঘভাতা দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন জোরদার হয়। এর প্রেক্ষিতেই অর্থ বিভাগ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে মহার্ঘভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা করলেও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তখন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
তবে বর্তমানে আর্থিক চাপ কিছুটা কমায় সরকার আবারও এই দাবিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকেই এই ভাতা বাস্তবায়নের দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
Leave a Reply