অর্থসংকটের কারণে আগে থেকেই বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ–সুবিধার টাকা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো। এখন সেই সংকট আরও তীব্র হয়েছে। একই সঙ্গে প্রায় ছয় মাস ধরে অবসর ও কল্যাণ–সুবিধা বোর্ড কার্যত অচল হয়ে আছে। ফলে আবেদন নিষ্পত্তি ও অর্থ ছাড়ে বড়সড় জট তৈরি হয়েছে।
বর্তমানে ৭৪ হাজারেরও বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদন বোর্ডে জমা পড়ে আছে, যেগুলো এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। আগে অবসরের পরপরই এই টাকা পাওয়ার আশায় থাকলেও এখন তা পেতে তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
বোর্ডের সভা দীর্ঘদিন ধরে না হওয়া এবং সচিব পদে নিয়মিত কর্মকর্তা না থাকার কারণে নতুন করে কোনো অনুমোদন দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে শিক্ষক-কর্মচারীদের হতাশা ও ক্ষোভও বাড়ছে।
সারা দেশে পাঁচ লাখের বেশি বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর অবসর ও কল্যাণ–সুবিধা পরিচালনা করে দুটি প্রতিষ্ঠান—‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর–সুবিধা বোর্ড’ এবং ‘কল্যাণ ট্রাস্ট’।
এই দুটি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রাজধানীর পলাশী-নীলক্ষেত এলাকার ব্যানবেইস ভবনে। বৃহস্পতিবার সেখানকার চিত্র ছিল বিষণ্ন—অনেক শিক্ষক ও তাঁদের পরিবারের সদস্যেরা তথ্য নিতে এসেছিলেন, কিন্তু কেউ আশাব্যঞ্জক উত্তর পাননি।
গাইবান্ধার একটি কলেজের এক শিক্ষক ২০২০ সালে অবসর নেওয়ার পরও এখনো টাকা পাননি—এমন অভিযোগ করেছেন তাঁর সন্তান, যিনি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, অবসর সুবিধার জন্য প্রায় ৩৮ হাজার এবং কল্যাণ সুবিধার জন্য প্রায় ৩৬ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে।
দুই বোর্ডের প্রধান হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকলেও প্রতিষ্ঠান দুটি সচল থাকে সচিব (সদস্যসচিব) ও বোর্ড সদস্যদের সক্রিয়তায়। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর সরকার–সমর্থক শিক্ষকনেতাদের দ্বারা পরিচালিত এই বোর্ড দুটির সচিবরা আর অফিসে যাচ্ছেন না। অন্যান্য সদস্যরাও নিষ্ক্রিয়।
গত ছয় মাস ধরে বোর্ড পুনর্গঠনের কোনো উদ্যোগ না থাকায় প্রতিষ্ঠান দুটি কার্যত অচল। অবসর সুবিধা বোর্ডে রুটিন কাজ কিছুটা চললেও কল্যাণ ট্রাস্ট এখন সম্পূর্ণভাবে নেতৃত্বশূন্য।
বর্তমানে শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল বেতনের ৬% অবসর সুবিধা ও ৪% কল্যাণ সুবিধার জন্য কাটা হয়। মাসে প্রায় ৭০ কোটি টাকা সংগ্রহ হয় অবসর খাত থেকে এবং ৩ কোটি আসে এফডিআর থেকে। বার্ষিক মোট আয় প্রায় ৮৭৬ কোটি টাকা হলেও কেবল অবসর সুবিধা দিতেই বছরে প্রয়োজন ১,৩৮০ কোটি টাকা—ফলে ঘাটতি প্রায় ৫০৪ কোটি।
বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সব অনিষ্পন্ন আবেদন মিটাতে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা এককালীন প্রয়োজন। এরপর প্রতি বছর বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেই এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব। একইভাবে কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য এককালীন প্রয়োজন ৩,২০০ কোটি টাকা, আর স্থায়ী সমাধানের জন্য বার্ষিক বরাদ্দ দরকার ২০০ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি এখন সবচেয়ে জরুরি হলো—শিক্ষকদের মধ্য থেকে আইনি প্রক্রিয়ায় বোর্ড পুনর্গঠন করা। তবেই প্রতিষ্ঠান দুটি কার্যকরভাবে পরিচালিত হতে পারবে এবং শিক্ষক-কর্মচারীরা তাঁদের প্রাপ্য সুবিধা সময়মতো পেতে পারবেন।
Leave a Reply