উৎসব এমন একটা বিষয় যা নিয়ে কৌতুহল, আগ্রহ, উদ্দীপনা বিরাজ করে না পৃথীবিতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। প্রত্যেক জাতির, প্রত্যেক ধর্মের মানুষের নিজ নিজ সাংস্কৃতিক বলয়ের মাঝে গড়ে তোলে তার উৎসব পালনের রীতি। উৎসবে আবেগপ্রবন হয়ে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। উৎসব আসলে দুমড়ে মুচড়ে কুঁকড়ে যায় এমন পেশাজীবি এদেশে ২য়টা আছে কিনা তা রীতিমতো গবেষণার বিষয়। উৎসব আসলে আতংক বিরাজ করে যে পেশাজীবিদের মাঝে তারা হলেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজ।
আমি একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক বিগত প্রায় ২২ বছর থেকে এ পেশায় কর্মরত আছি। সারাজীবনই যখনই কোন উৎসব আসে তখনই হাসির পরিবর্তে আমার মধ্যে কাজ করে নানামুখী টেনশন। কেননা ঈদে নামমাত্র যে বোনাস পাব তা দিয়ে আমার পরিবারের এক সদস্যেরও প্রয়োজন মেটানো দায়। কিন্তু আমার পরিবারের কমপক্ষে ৭ জন মানুষ আমার নিকট থেকে আশা করে যে, তারা এই উৎসবের দিনে কিছু না কিছু উপহারের। আমিও এযাবৎ কোন কোন উপায়ে তাদের সেই দায় মেটানোর চেষ্টা করে আসছি। কিন্তু আমি দেশের দায় মেটানোর ফলে আমার দেশ আমাকে যে অর্থ প্রদান করে উৎসব পালন করার জন্য তা দিয়ে তো আমি কোনভাবেই কুলিয়ে উঠতে পারছি না। আবার আমার দায়িত্ব পালন করা থেকে দুরে থাকতে পারছি না তাহলে এভাবে কতদিন চলবে বলতে পারেন।
উৎসব এমন একটা বিষয় যা নিয়ে কৌতুহল, আগ্রহ, উদ্দীপনা বিরাজ করে না পৃথীবিতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। প্রত্যেক জাতির, প্রত্যেক ধর্মের মানুষের নিজ নিজ সাংস্কৃতিক বলয়ের মাঝে গড়ে তোলে তার উৎসব পালনের রীতি। উৎসবে আবেগপ্রবন হয়ে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। উৎসব আসলে দুমড়ে মুচড়ে কুঁকড়ে যায় এমন পেশাজীবি এদেশে ২য়টা আছে কিনা তা রীতিমতো গবেষণার বিষয়। উৎসব আসলে আতংক বিরাজ করে যে পেশাজীবিদের মাঝে তারা হলেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজ।
“উৎসব যেন আজীবনের অভিশাপ!”
ভেবে দেখেন উৎসব কিন্তু আসে বছরে একবার আর সেই একবার যদি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তি হয়ে দায়িত্বপালন থেকে দুরে থাকি তাহলে আমার উপর যারা নির্ভরশীল তারা কোথায় যাবে। আমার পরিবারের লোকজন তো আর অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে পারবে না। আমি আগেই বলেছি যে, আমার পরিবারের কমপক্ষে সাত জন ব্যাক্তি আমার দিকে চেয়ে থাকে উৎসব পালনের উদ্দেশ্যে। আমি কিন্তু আমার নিজের কথা বলছি না। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা আমার ২২ বছরের কর্মজীবনে আমি কোনদিন আমার নিজের জন্য উৎসব উপলক্ষে ১ টাকারও কেনাকাটা করতে পারিনাই। আমার পরিবারের চাহিদা পুরণ করতে কমকরে হলেও ২৫ হাজার টাকার প্রয়োজন হয় কিন্তু আমি যে উৎসব ভাতা পাই তার চার ভাগের একভাগ। তাহলে বলবেন বাকি টাকা কোথায় থেকে পাই। বলবেন নিশ্চয়ই টিউশনি করি, না আমি কোন টিউশনি করি না। টিউশনি করতাম ছাত্র জীবন থেকে চাকুরী পাওয়ার পর কিছুদিন টিউশনি করেছি। তারপর পেশার প্রতি মনোযোগ আনতে ২০১১ সাল থেকে টিউশনি বন্ধ করে দিয়েছি। এখন যেটা করি তাহল ছোট খাটো কিছু ব্যবসা করার চেষ্টা করি, কখনও ব্লগিং করি, কখনও বা কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরনের চুক্তি ভিত্তিক কাজ করি এভাবে আমি আমার প্রয়োজন গুলো কখনও মেটায় কখনও বা ……।
উৎসব আসলেই শুরু হয় নানামুখী টেনশন নানামুখী ভয়। উৎসব যেন অন্যের জীবনে অনাবিল আনন্দ বয়ে নিয়ে আসলেও আমার কাছে কিন্তু দিন দিন অভিশাপের মত হয়ে যাচ্ছে। এরপরে আবার যতটুকু উৎসব ভাতা আমাদেরকে দেওয়া হয় তা আবার অধিকাংশ সময়ে আমাদের কাছে পৌছায় উৎসবের পরে। উৎসব সময় আসলেই বাড়ি ফিরলেই মেয়ের মুখে বাবা কোনদিন মার্কেট করতে যাব। সব ভাল ভাল পোশাক তো মানুষে নিয়ে নিবে আমরা কি ভাল পোশাক আর কিনতে পারব এত দেরি করে গেলে। যদি ছিট কাপড়ও কেনা হয় তাহলেও তো বেশি দেরি করলে দর্জিও তো আর অর্ডার নেয় না বানানোর জন্য। তাহলে বলেন এই উৎসবকে অভিশাপ না বলে কি বলব।
আরও পড়ুন “৫ম ধাপের বেতন মন্ত্রণালয়ের ছাড়ের অপেক্ষায় “
উৎসবের সময় যদি পরিবারের হাসির উপলক্ষ বয়ে নিয়ে আসতে পারি তাহলে আমার জীবনের সফলতা কি বলতে পারেন। উৎসবকে যদি হাসির খোরাকের জন্ম দিতে না পারি তাহলে সেই উৎসবকে কি বলে সম্বোধন করব বলেন।
আমার জীবনে আমি তো আর অন্য কিছু হতে পারবনা কিন্তু যেটা হয়েছি বা রাষ্ট্রের জন্য যা করছি তাহলে এখানে কি রাষ্ট্রের কি কোন দায় নেই, আমার নূর্ন্যতম প্রয়োজন মেটানোর। আমাকে তো রাষ্ট্র এমনি এমনি কিছু দিচ্ছে না আমার শ্রমের বিনিময়ে আমার প্রয়োজন মেটানোর দায় কি রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনের মধ্যে পড়ে না।
সাধারণভাবে উৎসব একটি আনন্দের সময়, যেখানে সবাই একত্রিত হয়ে আনন্দ উদযাপন করে। তবে যদি এ-ই আনন্দের মূহুর্ত জীবনের কোনো বাস্তবতা প্রতিফলিত হয়, তাহলে তা আর আনন্দের উপলক্ষ থাকে না।
একটি উৎসব যখন আনন্দের পরিবর্তে কোনো দুর্ভোগ, মানসিক চাপ, বা অসন্তোষের সৃষ্টি করে, তখন সেই উৎসব নতুন কোন অনুভূতির জন্ম দেয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো উৎসব বা খুশির মুহূর্তে কোনো ব্যক্তির জীবনে সমস্যা সৃষ্টি হয়, অথবা যখন জীবনের কোনো অপ্রাপ্তি বা চাহিদা অনুভূত হয়, তখন উৎসবও যেন অভিশাপের মতো মনে হতে পারে।
এছাড়াও, কিছু মানুষ উৎসবের সময় সামাজিক, অর্থনৈতিক অথবা পারিবারিক চাপের সম্মুখীন হন, যেগুলি তাদের জন্য মানসিক কষ্টের কারণ হতে পারে।
তবে, এই বিষণ্ণতা বা হতাশা কাটিয়ে ওঠার জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা, সাপোর্ট সিস্টেম এবং আত্মবিশ্বাস তৈরি করা খুবই জরুরি। উৎসব আসলে, যখন আমরা সঠিক মানসিকতা ও পরিস্থিতির মধ্যে থাকি, তখন তা আমাদের জীবনে সুখ ও আনন্দ নিয়ে আসে। যারা দিক নির্দেশনা দিবে যারা আশা দিবে তারাই তো, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দেয় গভীর হতাশা।
“উৎসব যেন আজীবনের অভিশাপ”—হয়তো কোনো গভীর হতাশা “বা বিষণ্ণতার প্রতিফলন। হতাশা একজন মানুষকে তিল তিল করে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দেয়। হতাশা একজন মানুষকে তখনই ঘিরে ধরে যখন দেখে যে, দিন দিন কাছের মানুষগুলোর কাছে তথা পরিবারের মানুষজনের নিকট হেয় প্রতিপন্ন হয়।
“উৎসবের সময় পরিবারের চাহিদা না মেটাতে পারা”—এটি সত্যিই একটি হতাশাজনক পরিস্থিতি। বিশেষ করে উৎসবের সময় যখন সবাই আনন্দে মেতে থাকে, তখন পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ কিছু করার চাপ এবং তাদের চাহিদা মেটাতে না পারার দুঃখ হতাশা সৃষ্টি করতে পারে।
উৎসবের সময় পরিবার এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে বিশেষ সময় কাটানোর এবং তাদের আনন্দিত করার একটি বিশেষ অনুভূতি। তবে, অনেক সময় আর্থিক অস্বচ্ছলতা, ব্যক্তিগত সমস্যা বা অন্য কোনো কারণে সেই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, যা সত্যিই খুব কষ্টদায়ক হতে পারে। এই অনুভূতি। আর কতকাল এভাবে হতাশার বোঝা বয়ে বেড়াবে এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজ, বলতে পারে এই রাষ্ট্র!
পরিশেষে একটা কথা বলতে চাই তা হলো, এখন আমার শারীরিক সক্ষমতা আছে তাই আমি পারছি তার মানে এই না যে সবাই আমার মতো পারছে, হয়তো কেউ বা আমার আমার চেয়ে আরও ভালভাবে ম্যানেজ করতে পারছে, আবার কেউ পারছে না। যে পারছে না তার কি এই না পারার জন্য সত্যি সত্যি সে দায়ী না দায়ী আমাদের কর্তৃপক্ষ।
ম্যানেজ করতে করতে যখন একসময় ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে যাব তখন আমার দায় ও আমার পরিবারের দায় তো এ রাষ্ট্র নিবে বলে মনে হয় না।
শেষ করব এই বলে যে, মাননীয় কর্তৃপক্ষ আমরাও মানুষ। আমাদের অনুভুতি আছে? আছে ভালভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে উৎসবের আমেজ উপভোগ করার। আর কতকাল উৎসব আমাদের জীবনে অভিশাপের বোঝা হয়ে থাকবে। দয়া করে আমাদের এই বোঝা থেকে মুক্ত করুন। ভালভাবে পরিপূর্ণ ভাবে উৎসবের আনন্দ উপভোগ করার ব্যবস্থা করুন দয়া করে।
Leave a Reply