ইএফটিতে বেতন হবে জেনে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা আশায় বুক বেঁধে ছিল যে, এই বুঝি আমাদের বেতন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আমাদের দীর্ঘসূত্রীতার রেশ কাটতে চলেছে। কিন্তু কে জানত মুদ্রার ওপিঠে লুকিয়ে আছে রাজ্যের হতাশা। লুকিয়ে আছে গভীর হয়রানি।
১) প্রথম কথা হলো যে আমাদের সকল তথ্য কিন্তু মাউশির নিকট রয়েছে তাহলে নতুন করে তথ্য আবার নিতে হবে কেন?
২) প্রতিবছর আমাদের তথ্য ইএমআইএস ডাটা আপডেটের নামে প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক কর্মচারীর তথ্য আপডেট করে মাউশি নেয়।
৩) এমপিওভুক্ত করার সময় আমাদের তথ্য যাচাই বাছাই করে তবেই আমাদের নাম মাউশি কর্তৃপক্ষ এমপিওভুক্ত করে থাকে। তাহলে তখন যদি ভুল তথ্য নিয়ে আমাদের এমপিওভুক্ত করা হয়ে থাকে তাহলে সে দোষ আমাদের না মাউশির ।
৪) আমাদের ব্যাংক একাউন্ট এর তথ্য মাউশি যাচাই বাছাই করে তবেই এমপিওভুক্ত করে। কারণ এমপিওশীটে ব্যাংক একাউন্ট নম্বর দেওয়া থাকে। সেই নম্বর ছাড়া আমরা কি অন্য কোন ব্যাংক একাউন্ট নম্বরের মাধ্যমে আমরা আমাদের এমপিওর টাকা উত্তোলন করতে পারি।
৫) বর্তমানে শিক্ষক কর্মচারীর এমপিওভুক্তির তথ্য ও বিভিন্ন সময় উচ্চতর স্কেল ও বি.এড স্কেল প্রাপ্তির সময় সকল তথ্য অনলাইনের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। এবং সেই তথ্যগুলো বিভিন্ন ধাপে ভেরিফাইড করা হয়। তাহলে কি বুঝব যে সেই যাচাই বাছাইয়ের দুর্বলতা আছে।
৬) ইএফটিতে বেতন পাঠানোর সিদ্ধান্ত হওয়ার পর সকল শিক্ষক কর্মচারীর তথ্য মাউশির প্রতিনিধি মাধ্যমিক বা জেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট প্রথমে পাঠানো হয়। তিনি যাচাই বাছাই করার পর যদি ভেরিফাইড হয় তবেই সে তথ্য মাউশির নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। তাহলে সে তথ্য তখন ঠিক থাকল আর মাউশির নিকট গিয়ে কি করে ভুল হয়ে গেল। যদি আমাদের পাঠানো তথ্যে কোন ভুল থেকে থাকে তাহলে তো সে তথ্যগুলো তখনই বাতিল করে দেওয়ার কথা। এবং সেই তথ্যগুলো তখনই আমাদের কাছে সংশোধনের জন্য ফেরত পাঠানোর কথা।
৭) মাধ্যামিক শিক্ষা অফিসার বা জেলা শিক্ষা অফিসার আমাদেরকে নির্দেশনা দেয় যে, আমাদের তথ্য পাঠানোর সময় এনআইডির সাথে মিল রেখে তথ্য পাঠাতে হবে। তাহলে এখন কেন এমপিওশীটের তথ্যের সাথে পাঠানো তথ্যের অমিলের কথা বলা হচ্ছে। হ্যাঁ অন্যান্য সমস্যা যদি থেকে থাকে তাহলে তার জন্য শিক্ষক কর্মচারীরা দায়ী কিন্তু যদি বলা হয় যে, এমপিওশীটের পূর্বের দেওয়া তথ্যের সাথে বর্তমানে দেওয়া তথ্যের অমিলের জন্য আমরা দায়ী তাহলে এটা পুরোপুরো ঠিক নয়। কারণ অনেক শিক্ষক কর্মচারীর এমপিওহয়েছে এনআইডি কার্ড তৈরী হওয়ার আগে। এবং প্রথম ধাপে যেভাবে এনআইডি কার্ড তৈরি হয়েছিল সেখানে কিন্তু অনেক ভুল ও সমস্যা বিদ্যমান।
৮) তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম মাধ্যমিক জেলা অফিসার বা জেলা শিক্ষা অফিসারের কর্তব্যের ফাঁকির কারণে ভুল তথ্য প্রেরণ হয়েছে তাহলে তো সেই তথ্যগুলো মাউশি আবার যাচাই বাছাই করেছে তাহলে তারা যাচাই বাছাই করে তারা সেগুলো সেখান থেকে ফেরত পাঠাল না কেন আমাদের সংশোধনের জন্য। তখনই যদি সংশোধনের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হতো তাহলে তো এত দীর্ঘসূত্রীতা হতো না।
৯) ন্যাশনাল ডাটা সার্ভারে সকলের তথ্য সংরক্ষিত আছে সত্য সেখানে অনেক শিক্ষক কর্মচারীর তথ্যের অমিল থাকতে পারে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কারণ জাতীয় পরিচয় পত্র যখন তৈরি করা হয় তখন কিভাবে তৈরি হয়েছে তা আমরা সবাই কম বেশি জানি সেখানে অনিচ্ছাকৃত অনেক ভুল অনেকেরই বিদ্যমান।
১০) আমাদের তথ্য পাঠাতে বলা হয়েছে তথ্য আপডেট করে তো আমি আমার আপডেট তথ্যই মাউশির নিকট পাঠিয়েছি দায়িত্ব নিয়ে। আবার আমার তথ্য আপনি যখন সঠিক ভাবে যাচাই বাছাই করতে পারছেন না। তাহলে আমার আমার ভুল কোথায়?
১১) আমার তথ্য আবার পাঠানোর পর আবার আপনি ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল প্রমাণ করবেন না এর নিশ্চয়তা কোথায়?
১২) আপনাদের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষক কর্মচারীদের হয়রানি করা।
১৩) কর্তৃপক্ষকে কর্তৃপক্ষের ন্যায় আচরণ করতে হয়। কর্তৃপক্ষ যদি প্রতিপক্ষ হয়ে কাজ করে তাহলে সেই বিড়ম্বনার শেষ কিন্তু কোনদিন হবে না।
পরিশেষে একটা কথা বলে শেষ করব, তাহলো এই খেলার শেষ করুন। যে ঝামেলা শেষ হয়ে গেছে সে ঝামেলা নিয়ে এখন টানাটানি না করে এখন আসল কাজ অথ্যাৎ এখন প্রায় ৫০ হাজার এর অধিক শিক্ষক কর্মচারী বেতন পায়নি এই সময়টুকু তাদের কাজের পিছনে ব্যয় করুন। আমরা যারা বেতন পেয়েছি তাদের তথ্য প্রতিবছরের ন্যায় যখন ইএমআইসের ডাটা আপডেট করবেন তখন নিশ্চিত সংশোধিত ও আপডেট তথ্য পেয়ে যাবেন।
তাই শেষ বেলা যে কথা বলছি তা হলো এখন যত দ্রুত সম্ভব ৩য় ধাপে যে সকল শিক্ষক কর্মচারীর পেমেন্টে তালিকা দিয়েছেন তাদের বেতনে যত দ্রুত সম্ভব ব্যাংকে পাঠানো যায় সেই ব্যবস্থা করুন। আর যে সকল বৈধ শিক্ষক কর্মচারী এখন ইএফটির আওতায় আসেনি তাদের কাজ দ্রুত শেষ করে তাদের পেমেন্ট তালিকা প্রকাশ ও বেতন ব্যাংকে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। যে সকল শিক্ষক কর্মচারীদের আপনারা এখন কোন ধাপেই অর্ন্তভুক্ত করেননি তাদের মধ্যে কিন্তু অনেক শিক্ষক কর্মচারীর অনেকের তথ্যের কোন সমস্যা নাই বলে অনেকে বলছে। দয়া করে সঠিক পদক্ষেপ নিন। অনুরাগের বশবতী হয়ে আবেগী কাজ না করে যৌক্তিকতা দিয়ে যৌক্তিক কাজ করুন।
Leave a Reply