এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেশ কিছু ন্যায্য দাবি রয়েছে, যা যদি সঠিকভাবে সরকারের কাছে উপস্থাপিত এবং বাস্তবায়ন না হয়, তবে শিক্ষকদের পক্ষে সেগুলি আদায় করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। তবে, প্রশ্নটি হলো, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবিগুলো কি আন্দোলন ছাড়া আদায় করা সম্ভব? এর উত্তর সরাসরি বললে, অনেক ক্ষেত্রেই আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, আন্দোলন ছাড়া বড় ধরনের ন্যায়সঙ্গত দাবি বাস্তবায়ন করা কঠিন হতে পারে।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের প্রধান কিছু দাবি:
সার্বজনীন বদলীঃ
- এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আজীবনের একটা অন্যতম চাহিদা হলো সার্বজনীন বদলী ব্যবস্থা চালু করা
- এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন কাঠামো অনেক সময় সরকারি চাকরিজীবীদের তুলনায় কম থাকে, এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের বেতন কাঠামো অদ্যাবধি আপডেট করা হয়নি।
- সরকারের অন্যান্য বিভাগের বেতন বৃদ্ধি হলেও, শিক্ষকদের বেতন কাঠামো নিয়ে স্পষ্ট কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এটি একটি প্রধান দাবি।
- পদোন্নতি এবং কর্মক্ষমতার মূল্যায়ন:
- এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য দীর্ঘদিন পদোন্নতি বা ক্যারিয়ার উন্নয়নের সুযোগ কম ছিল, এবং এটি শিক্ষক-শিক্ষিকার ক্যারিয়ারকে সীমাবদ্ধ করে।
- শিক্ষা উপকরণ ও অবকাঠামো:
- অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কাজের জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ এবং শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো নেই।
- এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা প্রাপ্তি এবং সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অভিযোগ জানাচ্ছেন।
- পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা:
- এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পেনশন এবং অন্যান্য প্রাপ্য সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হন।
কেন আন্দোলন ছাড়া দাবিগুলো বাস্তবায়ন কঠিন?
- রাজনৈতিক অনীহা:
অনেক সময় সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের দাবি সংক্রান্ত বিষয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করতে অনাগ্রহী থাকে। আন্দোলন, রাজনৈতিক চাপ এবং জনমত সৃষ্টি করলে সেই দাবি বাস্তবায়নে কিছুটা তৎপরতা দেখা যেতে পারে।
- ধিকৃত ও উপেক্ষিত দাবির ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি:
কোনো কোনো সময়, কর্তৃপক্ষ দাবি উপেক্ষা করে বা বিষয়টি ইচ্ছাকৃতভাবে মুলতবি রাখে। আন্দোলন এবং প্রতিবাদ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে সহায়তা করে।
- স্বার্থের সংঘাত:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবির সঙ্গে অন্য বিভাগের সরকারের কর্মচারী বা আমলাদের স্বার্থের সংঘাত থাকতে পারে, যা প্রভাব ফেলে শিক্ষক দাবির বাস্তবায়নে। আন্দোলন না করলে, এই স্বার্থের সংঘাতের কারণে কোনো পরিবর্তন আসবে না।
- সংগঠিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা যদি তাদের দাবি সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে চান এবং নিশ্চিত করতে চান যে, তাদের দাবি শোনা হচ্ছে, তবে তাদের সংগঠিত হয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আন্দোলন ছাড়া কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি পৌঁছানো এবং সমাধান আশা করা কঠিন।
এমপিও শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা:
- জনমত তৈরি:
আন্দোলন জনগণের মধ্যে একটি জনমত সৃষ্টি করতে সাহায্য করে, যাতে সাধারণ মানুষ তাদের দাবির সঙ্গেই থাকে। এটি সরকারের উপর চাপ তৈরি করে, যেটি অনেক সময় দাবি পূরণের জন্য সহায়ক হতে পারে।
- কমিউনিটি সাপোর্ট:
আন্দোলনকারী শিক্ষকরা যদি সংগঠিত হয়ে তাদের দাবি নিয়ে জনগণের কাছে পৌঁছান, তবে তারা সাধারণ মানুষের সমর্থন পেতে পারেন। এই সমর্থন সরকারের কাছে শিক্ষকদের দাবি তুলে ধরার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- ভ্রান্ত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ:
অনেক সময় সরকারি সিদ্ধান্ত বা বাজেট বরাদ্দ শিক্ষকদের পক্ষ থেকে খারাপভাবে প্রভাবিত হতে পারে। আন্দোলন এ ধরনের ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত বা অবিচার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
এমপিও শিক্ষকদের আন্দোলন এবং সরকারের উদ্যোগ:
সরকার যদি শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি ও সমস্যাগুলোর দিকে নজর দেয় এবং স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার প্রদান করে, তবে আন্দোলনের প্রয়োজন কম হবে। তবে, প্রযুক্তি ও নতুন পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে আমলাদের ও সরকারি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব।
উপসংহার:
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য অনেক সময় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন একটি কার্যকর উপায় হয়ে দাঁড়ায়, কারণ আন্দোলন ছাড়া তাদের ন্যায্য দাবির অগ্রগতি এবং বাস্তবায়ন কঠিন হতে পারে। আন্দোলন তাদের দাবির প্রতি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সহায়তা করে এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে। তবে, আন্দোলন শুধুমাত্র অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নয়, বরং এটি শিক্ষকদের জন্য একটি স্বীকৃতি এবং অধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে সহায়ক হতে পারে।
Post Views: 125
Leave a Reply