অপেক্ষার প্রহরগুলো বিরক্তির হয়। তবে আমরা যারা এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারী আমাদের কাছে এধরনের অভিজ্ঞতা নতুন নয়। আমরা অতীতেও বিভিন্ন কারণে দিনের দিনের পর দিন বেতনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। ওহ আমরা তো আবার বেতন পাইনা আমরা পাই অনুদান যাই বলেন না কেন? তবে একটা কথা বলি আমরা যদি অনুদান পাই তাহলে সরকারী আমলা যা নেয় অথ্যাৎ তাদের বেতনের পর যা তারা অতিরিক্ত নেন সেটা কি তাহলে ”দান” ।
আচ্ছা এখন আসল কথায় আসি-
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রায় ৩ লাখ ৮০,০০০ শিক্ষক-কর্মচারীকে ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার বা ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতা দেওয়ার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে। তারমধ্যে ১,৮৯,০০০ শিক্ষক-কর্মচারী প্রথম ধাপে ইএফটিতে বেতন পেয়েছেন। আরও এক লাখ শিক্ষক-কর্মচারী চলতি সপ্তাহে বেতনের মেসেজ পাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। তবে শিক্ষক-কর্মচারীদের বড় একটি অংশ এই দুই ধাপে ইএফটিতে বেতন পাবেন না। নানা কারণে তাদের তথ্য এন্ট্রি করা হয়নি বলে জানা গেছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এডুকেশন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ইএমআইএস সেলের একটি সূত্র জানিয়েছে, একাধিক কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের বড় একটি অংশ প্রথম ধাপে ইএফটিতে বেতনের মেসেজ পাননি। দ্বিতীয় ধাপেও তারা মেসেজ পাবেন না। এই কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- তাদের নিকট থেকে যে ধরনের তথ্য চাওয়া হয়েছিল, সে অনুযায়ী তথ্য না দেওয়া এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের সঙ্গে তথ্যের মিল না থাকা।
ওই সূত্র জানিয়েছে, অনেক শিক্ষকের জাতীয় পরিচয়পত্রে যে নাম দেওয়া আছে, এমপিও শিটে সেই নাম নেই; আবার কারো কারো নামের শুরুতে মোহাম্মদ থাকলেও তিনি মো. লিখেছেন। এছাড়া জন্ম তারিখ ভুল দেওয়া, নামের বানান ভুল করা, দ্বৈত এমপিওসহ আরও কিছু কারণে শিক্ষক-কর্মচারীরা ইএফটিতে বেতন পাননি।
জানতে চাইলে ইএমআইএস সেলের সিনিয়র সিস্টেম এনালিষ্ট খন্দকার আজিজুর রহমান জানান ‘বেশ কিছু কারণে শিক্ষকরা বাদ পড়েছেন। দ্বিতীয় ধাপের মেসেজ পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর প্রতিষ্ঠান প্রধানদের তথ্য সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হবে। এছাড়া কী কারণে শিক্ষকরা বেতনের মেসেজ পাননি সেটিও জানিয়ে দেওয়া হবে।’
প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকদের করণীয়:
ইএমআইএস সেল জানিয়েছে, যে শিক্ষক-কর্মচারীরা ইএফটিতে বেতনের মেসেজ পাননি তাদের অপেক্ষা করতে হবে। দ্বিতীয় ধাপে বেতনের পাঠানোর কাজ শেষ হলে তৃতীয় ধাপে মেসেজ পাঠানো হবে। তবে এর আগে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের ড্যাশবোর্ডে প্রবেশের এক্সেস ওপেন করে দেওয়া হবে।
ইএমআইএস সেলের এক কর্মকর্তা জানান, ‘১ম ধাপে যারা ইএফটিতে বেতনের মেসেজ পাননি এবং দ্বিতীয় ধাপে যারা মেসেজ পাবেন না, তাদের আপাতত অপেক্ষা ছাড়া কিছু করার নেই। তাদের অপেক্ষা দীর্ঘতর হবে। দ্বিতীয় ধাপের কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর কী কারণে বেতনের মেসেজ পাঠছানো হয়নি সে বিষয়টি প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জানিয়ে দেওয়া হবে।’
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, প্রতিষ্ঠান প্রধানরা বেতন না পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের ভুল হওয়া তথ্যগুলো সংশোধন করে দেবেন। এরপর পুনরায় তথ্য পাঠাবেন। পরবর্তীতে সেই তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই শেষে বাদ পড়া শিক্ষক-কর্মচারীদের তৃতীয় ধাপে ইএফটিতে বেতনের মেসেজ পাঠানো হবে। তবে তা অবশ্যই সময় সাপেক্ষ বিষয় এবং সে সময় পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নাই।
ব্যাংকগুলো মাধ্যমে বেতন-ভাতা ছাড়ের জন্য কয়েক পর্যায়ে অনুমোদনসহ সংশ্লিষ্ট কাজে অনেক ক্ষেত্রেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পেতে দেরি হয়। অনেক সময় পরের মাসের ১০-২০ তারিখের পরও আগের মাসের বেতন-ভাতা জোটে।
এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ইএফটিতে বেসরকারি শিক্ষকদের এমপিওর বেতন-ভাতা দেওয়ার ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের ২০৯ জন শিক্ষক-কর্মচারীর অক্টোবর মাসের এমপিও ইএফটিতে ছাড় হয়। পরবর্তীতে গত ১ জানুয়ারি এক লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক ইএফটির মাধ্যমে বেতন-ভাতার সরকারি অংশের টাকা পেয়েছেন।
বেসরকারি স্কুল-কলেজের ৩ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে ২ লাখ ৮৯ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য যাচাই করছে মাউশি। ২৭ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য পায়নি সংস্থাটি। অবশিষ্ট ৬৪,০০০ শিক্ষক-কর্মচারীদের তথ্য পেলেও তাতে ত্রুটি থাকায় সেগুলো সংশোধন করার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। এখন এই সংশোধন প্রক্রিয়া কিভাবে চলবে কিভাবে এই শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন দেওয়া যায় তা নিয়ে চেষ্টা চলছে। তবে তৃতীয় ধাপের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন পেতে সময় লাগবে।
তৃতীয় ধাপের শিক্ষক কর্মচারীদের যে কাজ গুলো করতে হতে পারে-
iBas++ সিস্টেমে কোনো ধরনের তথ্য অমিল (যেমন নাম, জন্ম তারিখ, এনআইডি নম্বর, ঠিকানা) থাকলে, তা সঠিকভাবে আপডেট করা প্রয়োজন। গ্রাহককে ব্যাংক শাখায় গিয়ে তথ্য সংশোধন করতে হবে। সঠিক তথ্য আপডেট হলে, পরবর্তী লেনদেন বা সেবা পাওয়া সহজ হয়ে যাবে।
Leave a Reply