এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) সংশোধন করার প্রক্রিয়া নির্ভর করে সংশোধনের ধরন এবং আপনি কোথায় বসবাস করেন তার ওপর। সাধারণত, এনআইডি সংশোধন করতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যেমন নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা, ছবি, স্বাক্ষর বা অন্য কোনো ভুল সংশোধন করতে হতে পারে।
জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) সংশোধনের প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা নিচে দেওয়া হলো:
১. কেন NID সংশোধন প্রয়োজন?
NID একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ডকুমেন্ট যা পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, পাসপোর্ট আবেদন, সিম নিবন্ধন, সরকারি বা বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণসহ নানা ক্ষেত্রে আবশ্যক। তবে যদি আপনার NID-এ তথ্য ভুল থাকে, যেমন নাম, জন্মতারিখ, ঠিকানা, বা পিতামাতার নাম, তাহলে এটি সংশোধন করা জরুরি। সঠিক তথ্য দিয়ে সংশোধন না করলে, ভবিষ্যতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
২. সংশোধনের যোগ্য বিষয়গুলো
জাতীয় পরিচয়পত্রে যেসব তথ্য সংশোধন করা যায়, তা হলো:
- নাম (বাংলা ও ইংরেজি)
- পিতার নাম ও মাতার নাম
- জন্মতারিখ
- ঠিকানা (স্থায়ী বা বর্তমান)
- লিঙ্গ
- ছবি ও স্বাক্ষর
৩. সংশোধনের পদ্ধতি
সংশোধন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের অনলাইন সেবা ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করা যায়।
(ক) অনলাইনে NID সংশোধন
- ওয়েবসাইটে যান:
নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল পোর্টাল https://services.nidw.gov.bd এ প্রবেশ করুন।
- লগইন করুন:
- যদি আপনার অ্যাকাউন্ট থাকে, তাহলে NID নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।
- যদি নতুন ব্যবহারকারী হন, তাহলে প্রথমে অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আপনার NID নম্বর ও জন্মতারিখ প্রয়োজন হবে।
- সংশোধনের জন্য আবেদন করুন:
- লগইন করার পর, “Correction Application” বা “তথ্য সংশোধন” অপশনে ক্লিক করুন।
- যে তথ্য সংশোধন করতে চান, সেটি নির্বাচন করুন।
- নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট আপলোড করুন।
- ফি প্রদান করুন:
- মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ, নগদ, রকেট) বা ব্যাংকের মাধ্যমে সংশোধনের জন্য নির্ধারিত ফি প্রদান করুন।
- সাধারণ সংশোধনের জন্য ২০০ টাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ (বড়) সংশোধনের জন্য ৫০০ টাকা ফি নির্ধারিত।
(খ) অফিসে সরাসরি যোগাযোগ
অনলাইনে যদি সমস্যা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট উপজেলা বা থানা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
- সংশোধনের জন্য প্রাসঙ্গিক ফর্ম সংগ্রহ করুন।
- ফর্মটি সঠিকভাবে পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করুন।
- অফিসে আবেদন জমা দিন।
৪. প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
সংশোধনের ধরন অনুযায়ী নথিপত্র প্রয়োজন হবে। নিচে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো:
(ক) নাম সংশোধন
- শিক্ষা সনদ (যেখানে সঠিক নাম উল্লেখ আছে)
- জন্ম সনদ
- পাসপোর্ট (যদি থাকে)
(খ) জন্মতারিখ সংশোধন
- জন্ম সনদ
- এসএসসি বা সমমানের সনদ
- পাসপোর্ট
(গ) ঠিকানা সংশোধন
- বাড়ির নামজারি সনদ বা হোল্ডিং ট্যাক্স সার্টিফিকেট
- বিদ্যুৎ বিল
- বাড়িওয়ালার প্রত্যয়নপত্র (ভাড়া থাকলে)
(ঘ) ছবি ও স্বাক্ষর সংশোধন
- প্রয়োজনীয় কোনো আইডি কার্ড (পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স)
৫. ফি ও সময়সীমা
- সাধারণত সংশোধনের কাজ সম্পন্ন হতে ১৫-৩০ কার্যদিবস লাগে।
- ফি:
- নাম, ঠিকানা, লিঙ্গ সংশোধন: ২০০ টাকা
- বড় সংশোধন (বিভিন্ন তথ্য একসঙ্গে): ৫০০ টাকা
৬. সংশোধিত NID সংগ্রহ
সংশোধন সম্পন্ন হলে আপনাকে মেসেজের মাধ্যমে জানানো হবে।
- সংশোধিত NID ডাউনলোড করতে পারবেন অনলাইন পোর্টাল থেকে।
- চাইলে সংশোধিত কার্ড সরাসরি নির্বাচন অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।
৭. প্রাসঙ্গিক পরামর্শ
- সংশোধনের জন্য আবেদন করার আগে আপনার সংশোধনের প্রমাণস্বরূপ নথিপত্র প্রস্তুত রাখুন।
- সব তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করুন যাতে পুনরায় সংশোধনের প্রয়োজন না হয়।
- প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের হেল্পলাইন (১০৫) বা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসের সাথে যোগাযোগ করুন।
সতর্কতাসমূহ
- ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন করবেন না। এটি আইনত অপরাধ।
- সবসময় সত্য তথ্য প্রদান করুন।
- কোন ব্যক্তি বা এজেন্টের মাধ্যমে না গিয়ে নিজেই সংশোধনের আবেদন করুন।
উপসংহার:
এনআইডি সংশোধন করার প্রক্রিয়া বেশ সহজ, তবে সঠিক তথ্য এবং ডকুমেন্টেশন প্রয়োজন। আপনি যদি কোনো ভুল তথ্য সংশোধন করতে চান, তবে নির্বাচন কমিশন এর নিয়মিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। আপনাকে অনলাইনে বা অফলাইনে আবেদন করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে।
Post Views: 203
Leave a Reply