এমপিও শিক্ষকদের ইএফটি এবং আমলাদের ষড়যন্ত্র এমন একটি বিষয় যা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, সরকারি নীতি এবং প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে একটি জটিল সম্পর্ক সৃষ্টি করেছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা দীর্ঘকাল ধরে তাদের বেতন এবং অন্যান্য সুবিধা সংক্রান্ত নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন এবং তাদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করে আসছেন। এই প্রেক্ষাপটে ইএফটি (Electronic Fund Transfer) এবং আমলাদের ষড়যন্ত্র বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে, যা এমপিও শিক্ষকদের জন্য বড় একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ইএফটি (Electronic Fund Transfer) এবং এমপিও শিক্ষকদের সমস্যা
ইএফটি হলো একটি আধুনিক প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা স্থানান্তর করা হয়। বাংলাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন ইএফটি মাধ্যমে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হওয়ার পর হতেই একশ্রেণীর অসাধু মহল ক্রমাগত হারে চক্রান্ত করেই চলেছে। তবে, এই সিস্টেমটি কিছু কারণে এমপিও শিক্ষকদের জন্য ভোগান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
১. ইএফটি সিস্টেমের ত্রুটি এবং দেরি:
– ইএফটি সিস্টেমের ত্রুটি বা অনলাইন ব্যাংকিং সিস্টেমের সমস্যা এমপিও শিক্ষকদের জন্য অনেক সময় বেতন বিলম্ব বা পেমেন্ট সমস্যার সৃষ্টি করে। কিছু ক্ষেত্রে, ব্যাংক সিস্টেমের সমস্যার কারণে শিক্ষকদের বেতন স্থানান্তরে বিলম্ব হতে পারে, যা তাদের আর্থিক অবস্থাকে আরও কঠিন করে তোলে। – এমপিও শিক্ষকদের বেতন সময়মতো না পাওয়ার কারণে তাদের অর্থনৈতিক চাপ বেড়ে যায়, এবং এর ফলে তারা আরও অসন্তুষ্ট হয়ে ওঠে।
২. ব্যাংকিং তথ্যের ত্রুটি:
ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য যদি সঠিকভাবে না থাকে, যেমন নাম বা এনআইডি ভুল হলে, ইএফটি পদ্ধতিতে তথ্য অমিল হতে পারে, যার কারণে টাকা স্থানান্তর সম্ভব না হয়ে পড়তে পারে।- অনেক সময় নামের বানান ভুল, এনআইডি বা জন্মতারিখের ভুল ইত্যাদি কারণে এমপিও শিক্ষকদের বেতন স্থানান্তর করতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সমস্যায় পড়ে।
আমলাদের ষড়যন্ত্র এবং এমপিও শিক্ষকদের সমস্যা
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলন ও সমস্যা নিয়ে কিছু সময় আমলাদের ষড়যন্ত্র বা প্রশাসনিক বাধা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠে থাকে। সরকারি কর্মকর্তারা বা আমলারা অনেক সময় তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা বা রাজনৈতিক কারণে ষড়যন্ত্র করে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি পূরণে বাধা সৃষ্টি করেন। আমাদের দেশের এক শ্রেণির আমলারা কখনও চায়না এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা তাদের মতো কোন সুযোগ সুবিধা ভোগ করুক। এই কারণে সরকারের একটি ভাল প্রশংসনীয় উদ্যোগকে কিভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায় সেই চেষ্টা তারা অনবরত করে চলেছে। দেখেন ফ্যাসিবাদি শাসন ব্যবস্থা এই দেশ থেকে দুর হয়েছে কিন্তু ফ্যাসিবাদি আমলের সেই আমলারাই তো নীতি নির্ধারণী সকল জায়গায় বসে ঘন্টা নাড়ছে আর তাদের পুরাতন প্রভুদের মনতুষ্টি করছে। কাগজ পত্র সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তো এই সকল শিক্ষক কর্মচারীর এমপিওভুক্ত হওয়ার কথা নয় তাই না। হ্যাঁ আমি মানছি কিছু সংখ্যক শিক্ষক কর্মচারীর সমস্যা থাকতে পারে তাই বলে এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষক কর্মচারীর সমস্যা থাকার কথা নয়।
আবার শোনা যাচ্ছে ফান্ডিং সমস্যা। ফান্ডের সমস্যা মুলতঃ আমাদের এই সুনামধন্য আমলাদের তৈরী। সরকারের যদি আসলেই ফান্ড এর সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আগে থেকে সেটা নিয়ে কাজ করতে হত এভাবে মাঠে নেমে ভোগান্তির সৃষ্টি করার তো কোন মানে হয় না তাই না।
এক শ্রেণির আমলারা আমাদের সরকার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবার জন্য সরকার কে বুঝিয়েছে যে, যেন তেন ভাবে কার্যক্রমটা শুরু করেন তাহলেই হবে। ওরা আর কি এমন কি করবে। হ্যাঁ আামাদের তেমন কিছু করার ক্ষমতা হয়তবা নাই। তবে এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষক কর্মচারীর আবেগ নিয়ে ছেলেখেলা করাটা কি আদ্যে উচিত কিনা একবার ভেবে দেখবেন।
আামদের আমলারা চিরকালই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবহেলার চোখে দেখে থাকে। এমপিও শিক্ষকদের বেতন সরকারি শিক্ষকদের তুলনায় অনেক কম দেওয়া এবং প্রায়ই তাদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশাসনিক বাধা সৃষ্টি করা হয়। অনেক সময় আমলারা এই বিষয়ে উদাসীন হয়ে থাকেন বা এমপিও শিক্ষকদের দাবির প্রতি তেমন মনোযোগ দেন না। কিন্তু চিরকালই আমলারা যদি এভাবে প্রভাব বিস্তার করে চলে তাহলে একদিন- বৈষম্যপূর্ণ বেতন কাঠামো এবং অবহেলা এর ফলে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়বে এবং আন্দোলনও তীব্র হয়ে ওঠে।
এমপিও শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য যথাযথ সুবিধা না পায় সে জন্য প্রতিনিয়ত আমলারা বিভিন্ন প্রকার কারসাজি করেই চলেছে। এমপিও শিক্ষকদের জন্য সরকারি সুবিধা যেমন পেনশন, স্বাস্থ্য সেবা, বিমা ইত্যাদি অনেক সময় অমিল থাকে। এমনকি, অনেক সময় আমলারা এই সুবিধাগুলো শিক্ষকদের কাছে পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করেন। এই ধরনের অবিচার এবং ষড়যন্ত্র এমপিও শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
অনেক সময় আমলারা এমপিও শিক্ষকদের আন্দোলন বা দাবি পূরণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বা নিজস্ব সুবিধার জন্য বাধা সৃষ্টি করেন। এই ধরনের প্রশাসনিক অবহেলা বা রাজনৈতিক কারণে ষড়যন্ত্র এমপিও শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতি এবং অন্যান্য ন্যায্য দাবি পূরণের পথ রোধ করে।- এমপিও শিক্ষকদের আন্দোলন অনেক সময় রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়, যেখানে আমলারা নিজেদের স্বার্থে শিক্ষকদের আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করে।
কিছু সময় আমলারা দেশের অর্থনৈতিক সংকট বা সরকারের বাজেটের অভাবের সুযোগ নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিতে গড়িমসি করেন। তারা বলছেন, বাজেট সংকট বা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সুবিধা প্রদানকে বাধাগ্রস্ত করছে। কিন্তু এই ধরনের অজুহাত অনেক সময় ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে, যেখানে তারা শিক্ষকদের জন্য ন্যায্য সুবিধা প্রদান করতে ইচ্ছুক নয়।
এমপিও শিক্ষকদের জন্য সমাধান ও পরামর্শ:
১. সংগঠিত হওয়া:
– এমপিও শিক্ষকদের নিজেদের সংগঠিত হতে হবে এবং নির্দিষ্ট দাবির জন্য একত্রে আন্দোলন করতে হবে। শিক্ষক সংগঠন গঠন করে আন্দোলন শক্তিশালী করা সম্ভব হতে পারে, যা সরকারের কাছে চাপ সৃষ্টি করবে।
২. আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ:
– এমপিও শিক্ষকদের উচিত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যেখানে তারা তাদের অধিকার রক্ষার জন্য আইনগত সহযোগিতা পেতে পারেন। যদি ইএফটি পদ্ধতিতে সমস্যা থাকে, তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা যেতে পারে।
৩. প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন:
– আমলাদের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে হবে যাতে তারা এমপিও শিক্ষকদের ন্যায্য দাবি পূরণের দিকে মনোযোগ দেন। প্রশাসনিকভাবে এমপিও শিক্ষকদের সমস্যা সমাধান করতে সরকারকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
৪. রাজনৈতিক সমর্থন অর্জন:
– রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থন নিতে হবে যাতে তারা শিক্ষকদের দাবি সমর্থন করে এবং সরকারের কাছে এটি নিয়ে আলোচনা করে। শিক্ষকদের আন্দোলন একটি জাতীয় ইস্যু হিসেবে তোলার চেষ্টা করতে হবে।
উপসংহার:
ইএফটি এবং আমলাদের ষড়যন্ত্র এমপিও শিক্ষকদের জন্য একটি বাস্তব সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইএফটি পদ্ধতিতে ত্রুটি এবং আমলাদের প্রশাসনিক অবহেলা বা ষড়যন্ত্র তাদের বেতন প্রদান নিশ্চিতকরণের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। এই সমস্যাগুলি মোকাবেলা করতে শিক্ষকরা সংগঠিত হয়ে, আইনি পদক্ষেপ নিয়ে এবং রাজনৈতিক সমর্থন অর্জন করে তাদের ন্যায্য দাবি আদায় করতে পারবেন নিশ্চয়ই।
[/et_pb_text][/et_pb_column][/et_pb_row][/et_pb_section]
Leave a Reply