বাংলাদেশের শিক্ষার উন্নয়নে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবদান উপেক্ষা করা যাবে না। যদিও তারা সরকারি শিক্ষকদের মতো সরাসরি সরকারি চাকরির অংশ নন, তবুও তাদের ভূমিকা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অগ্রগতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাজ করে শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখছেন।
১. এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবদান
১.১. বৃহৎ শিক্ষার্থী গোষ্ঠীর সেবা
- বাংলাদেশে প্রচুর শিক্ষার্থী বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে, যেখানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা পড়ান।
- তারা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে সাশ্রয়ী এবং মানসম্মত শিক্ষা পৌঁছে দিচ্ছেন।
- দেশের প্রায় 97% শিক্ষার্থী পড়াশুনা করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কাছে।
১.২. প্রান্তিক অঞ্চলে শিক্ষার প্রসার
- গ্রামাঞ্চল ও প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সীমিত, সেখানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে।
- এসব অঞ্চলে শিক্ষার হার বৃদ্ধি ও শিক্ষার প্রাথমিক ধারণা গড়ে তুলতে তাদের অবদান অনস্বীকার্য।
- দেশের প্রান্ত্রিক অঞ্চল যেখানে সরকারি অন্যান্য সেবার পাশাপাশি সরকারি শিক্ষার সেবা ও অনুপস্থিত সেখানে এই এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাই তাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়ে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
১.৩. মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ভূমিকা
- মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল অর্জনে এই শিক্ষকরা অবিচ্ছিন্ন পরিশ্রম করছেন।
- উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করতে তারা অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেন।
- মাধ্যমিক স্তরে সরকারি ভাবে কতজন শিক্ষার্থী সরকারী প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুযোগ পায়।
১.৪. নৈতিকতা ও মূল্যবোধ গঠন
- এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা শুধু পাঠ্যবই শেখান না; তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা, মূল্যবোধ এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতার বোধও তৈরি করেন।
১.৫. দেশের শিক্ষা কাঠামোর একটি বড় অংশ
- দেশের সামগ্রিক শিক্ষা কাঠামোর একটি বড় অংশ এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল।
- সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জায়গা না পাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য এই প্রতিষ্ঠানগুলো একটি বিকল্প পথ।
২. শিক্ষার মান উন্নয়নে তাদের ভূমিকার চ্যালেঞ্জ
যদিও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ, তাদের কার্যক্রমে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
- বেতন-ভাতার সীমাবদ্ধতা:
কম বেতনের কারণে তারা অনেক সময় তাদের সর্বোচ্চ দক্ষতা কাজে লাগাতে পারছেন না।
- প্রশিক্ষণের অভাব:
প্রশিক্ষণ ও আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতিতে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ সীমিত।
- প্রতিষ্ঠানগুলোর সীমিত অবকাঠামো:
অনেক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং প্রযুক্তির অভাবে শিক্ষার মান উন্নত করতে ব্যর্থ হয়।
- প্রতিষ্ঠানগুলোর সীমিত সুযোগ সুবিধা:
অনেক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই নেই শিক্ষকদের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা দেওয়ার মতো সামর্থ্য তা সত্বেও তারা তাদের উপর অর্পি ত দ্বায়িত্ব তারা সঠিকভাবে পালন করে আসছে।
৩. তাদের অবদান আরও কার্যকর করার উপায়
৩.১. আর্থিক প্রণোদনা বৃদ্ধিঃ
- বেতন এবং ভাতা বাড়িয়ে তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
- উৎসব ভাতা ১০০% সহ অন্যান ভাতা নিশ্চিত করলে তাদের কর্মক্ষমতা বাড়বে।
৩.২. নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম
- আধুনিক প্রযুক্তি এবং শিক্ষাদানের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
- ডিজিটাল শিক্ষার জন্য তাদের প্রশিক্ষিত করা।
৩.৩. শিক্ষা মান যাচাই ও উন্নয়ন
- এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মান উন্নয়নের জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চালু করা।
- পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষণ পদ্ধতির মানোন্নয়ন।
৩.৪. সামাজিক স্বীকৃতি ও মর্যাদা
- এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবদান সমাজে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদের পেশাগত মর্যাদা বাড়ানো।
- গণমাধ্যম এবং সরকারি উদ্যোগে তাদের ভূমিকা তুলে ধরা।
- সামাজিকভাবে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৪. উপসংহার
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবদান অস্বীকার করা অন্যায় হবে। তারা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ, বিশেষত প্রান্তিক অঞ্চলে এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরে। তাদের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থান উন্নত করার মাধ্যমে তারা শিক্ষার মানোন্নয়নে আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারবেন। সঠিক পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আরও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারেন।
Post Views: 142
Leave a Reply