শিক্ষকতা একটি মহান পেশা এবং একটি জীবনের উদ্দেশ্য, যা মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু একটি চাকরি বা পেশা নয়, বরং এটি সমাজে একটি শক্তিশালী পরিবর্তন আনার মাধ্যম। শিক্ষকতা সমাজের ভবিষ্যৎ গঠনের মূল স্তম্ভ, কারণ শিক্ষকরাই নতুন প্রজন্মকে সঠিক দিশা এবং শিক্ষা দেয়, যা তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য।
শিক্ষকের কাজ শুধু পাঠদান নয়; তারা শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, মূল্যবোধ, জীবনদর্শন এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা শিখিয়ে থাকেন। তারা ছাত্রদের মেধা, মনোভাব এবং চরিত্র গঠনে সহায়ক হয়ে থাকেন।
এছাড়াও, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জীবনে এক ধরনের প্রেরণা যোগান। একজন ভালো শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র পাঠ্যবইয়ের গণ্ডিতে আটকে রাখে না, বরং তাদের ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে সাহায্য করেন।
শিক্ষকতার গুরুত্ব:
- মানবিক গুণাবলির বিকাশ: শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানবিক গুণাবলি যেমন শ্রদ্ধা, সহানুভূতি, সততা, এবং পরিশ্রমের গুরুত্ব শেখান।
- শিল্প ও বিজ্ঞান চর্চা: শিক্ষকরাই একমাত্র ব্যক্তিরা যাদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে পরিচিত হয়, শিল্পকলার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় এবং সৃজনশীলতা বিকাশ পায়।
- সমাজ পরিবর্তন: শিক্ষকরাই সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করতে সহায়ক, এবং তারা সমাজের অগ্রগতি ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ তৈরি করে।
- নিজেকে চেনাঃ একজন শিক্ষকই পারে তার শিক্ষার্থীকে তার ক্ষমতা সম্বন্ধে সঠিক উপলব্ধি করাতে।
- জ্ঞান বিতরণ: শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মৌলিক শিক্ষা, দক্ষতা ও জ্ঞান প্রদান করে, যা তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে।
- নৈতিক শিক্ষা: শিক্ষকরা শুধু পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে না, তাদের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে ছাত্রদের নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দেন।
- সমাজের উন্নতি: শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের সঠিক পথ প্রদর্শন করে সমাজের উন্নতির দিকে নিয়ে যান। তারা দেশ, জাতি এবং সমাজের উন্নয়ন কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
- অনুপ্রেরণা প্রদান: শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে তাদের লক্ষ্য অর্জনে উৎসাহিত করেন এবং আত্মবিশ্বাসী করে তোলেন।
- সামাজিক পরিবর্তন: শিক্ষকেরা কেবল একেকটি প্রজন্ম নয়, পুরো সমাজের মানসিকতা পরিবর্তনে সাহায্য করেন। তারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহনশীলতা, সমতার মূল্যবোধ, এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ গড়ে তোলেন।
- ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি: শিক্ষকরা পরবর্তী প্রজন্মের নেতাদের গড়ে তোলেন। তারা শুধু পাঠ্য বিষয় শেখান না, বরং ছাত্রদের নেতৃত্ব, সমস্যা সমাধান এবং সংকট মোকাবিলার ক্ষমতা বিকাশে সাহায্য করেন।
একজন শিক্ষকের যদি এসকল কাজ করতে সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে হয় তাহলে তাকে তার কাজের প্রতি কতটুকু নিবেদন থাকতে হবে তাকে তার কাজ সম্পর্কে কতটুকু সচেতন থাকতে হবে।
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একজন শিক্ষকের মর্যাদাঃ
বাংলাদেশে একজন শিক্ষকের মর্যাদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা সমাজের উন্নতি ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অত্যাবশ্যক। তবে, শিক্ষকদের মর্যাদা কেবলমাত্র তাদের পেশাগত দায়িত্বের কারণে নয়, বরং তাদের সামাজিক, নৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ভূমিকার জন্যও অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। শিক্ষকের মর্যাদার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:
১. শিক্ষক সমাজের আদর্শ
শিক্ষকরা সমাজের মডেল ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। তারা কেবল জ্ঞানই প্রদান করেন না, বরং শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ, মানবিকতা, এবং আচরণগত দিকও গঠন করেন। তাদের আচরণ, দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিক্ষার পদ্ধতি সমাজের মূল্যবোধকে প্রভাবিত করে।
২. জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণ
শিক্ষকরা জাতির ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য এক অমূল্য রত্ন। তারা শিক্ষার্থীদের মেধা, মনন, দক্ষতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশে সাহায্য করেন। তাদের হাত ধরেই নতুন প্রজন্ম সঠিক দিকনির্দেশনায় চলে, যা দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য।
৩. সমাজে সম্মান ও শ্রদ্ধা
বাংলাদেশের সমাজে শিক্ষকরা সাধারণত সম্মানিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত হন। তাদের প্রতিদিনের কাজ, নিষ্ঠা, এবং আত্মনিবেদনের কারণে তাদের সামাজিক মর্যাদা অনেক উচ্চতর। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক, সামাজিক পরিসরে, একটি শ্রদ্ধাশীল ও সন্মানজনক সম্পর্ক হিসেবে গড়ে ওঠে।
৪. শিক্ষা ও সংস্কৃতির রক্ষক
শিক্ষকরা শুধু শিক্ষার আলো প্রদান করেন না, তারা দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং জাতির উদ্দেশ্যও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেন। তারা সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, ভাষার প্রতি ভালোবাসা, এবং ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা গড়ে তোলেন, যা দেশের জাতীয় স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৫. অর্থনৈতিক দিক
বাংলাদেশে শিক্ষকতার পেশা সাধারণত তেমন লাভজনক নয়, বিশেষ করে এমপিওভুক্ত বা প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষকদের জন্য। যদিও তাদের সামাজিক মর্যাদা অনেক বেশি, তবে বেতন ও অন্যান্য সুবিধার ক্ষেত্রে তারা প্রাপ্য সম্মান ও সুযোগ পান না। এর ফলে অনেক শিক্ষকের মধ্যে হতাশা এবং অসন্তোষ তৈরি হয়।
৬. রাষ্ট্রের দায়িত্বের অবহেলা
যদিও শিক্ষকদের মর্যাদা সামাজিকভাবে উচ্চ, কিন্তু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তাদের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা, সম্মাননা, এবং সুষ্ঠু কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা হয় না। বেতন বৈষম্য, পদোন্নতির অভাব, এবং দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধি না হওয়া তাদের মর্যাদার উপর প্রভাব ফেলে। আমাদের দেশের যারা যখনই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন কেন জানি তারা সকলেই শিক্ষকতা পেশার প্রতি বিভিন্ন ভাবে অবহেলা করেছেন। সঠিক কারণ খুঁঁজে বের করা মুশকিল।
৭. একটি সম্মানজনক পেশা
শিক্ষকতা একটি শ্রদ্ধেয় পেশা, যা সমাজে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ। শিক্ষকরা সমাজের শিক্ষিত শক্তির স্রষ্টা। তাই তাদের সম্মান, মর্যাদা, এবং নৈতিকতার দিকটি কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়।
আমাদের দেশে একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক প্রতিনিয়ত যে সমস্যাাগুলোর সম্মুখিন হচ্ছেন, তা হলো:
- বেতন বৈষম্য: এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন কাঠামো সাধারণত কম হয়, তাদের বেতন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের তুলনায় কম। অনেক ক্ষেত্রেই দীর্ঘদিন পর্যন্ত বেতন বৃদ্ধি বা সমন্বয় করা হয় না, যা তাদের আর্থিক অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
- পদোন্নতির অভাব: অনেক এমপিওভুক্ত শিক্ষক দীর্ঘ সময় ধরে একই পদে থেকে যান, যার ফলে তাদের পেশাগত উন্নতি বা সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায় না। পদোন্নতি বা ক্যারিয়ার উন্নতির সুযোগের অভাবও তাদের হতাশ করে।
- বেতন বিলম্বিত হওয়া: এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন অনেক সময় বিলম্বে প্রদান করা হয়, যা তাদের আর্থিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এটা তাদের জীবনযাত্রার মানের উপর প্রভাব ফেলে।
- প্রতিদানহীন পরিশ্রম: এমপিওভুক্ত অনেক শিক্ষক অতিরিক্ত পরিশ্রম করেও তেমন কোনো পুরস্কার বা উপযুক্ত মর্যাদা পান না। শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল আনতে তারা নিজেরাই ত্যাগ স্বীকার করে থাকেন, কিন্তু তাদের জন্য কোনো আর্থিক বা নৈতিক পুরস্কার থাকে না।
- স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য সুবিধা: এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, পেনশন এবং অন্যান্য সুবিধা কম বা অনুপস্থিত। তারা সরকারি কর্মচারীদের মতো সুবিধা পেয়ে থাকেন না, যেটি তাদের জীবনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে।
- কার্যকরী নীতি ও সমাধানের অভাব: শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকরী ও নির্দিষ্ট কোন পরিকল্পনা বা নীতি গঠন করা হয় না। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য তেমন কোন নির্দিষ্ট সমাধান বা উন্নয়নমূলক কর্মসূচি দেখা যায় না।
- কতৃপক্ষের অবহেলাঃ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের তাদের কতৃপক্ষ এমন একটি নজরে দেখেন যেন তারা এদেশের মানুষ নয়। বা কখনও কখনও মানুষ হিসাবে ভাবলেও মনে করেন তারা সকল প্রয়োজনের উর্দ্ধে। তাদের পরিবার নেই, তাদের সন্তান নেই, তাদের কোন প্রকার চাওয়া পাওয়া নেই।
- সমাজের অবজ্ঞার শিকারঃ সবচেয়ে খারাপ লাগে তখনই যখন এ সমাজ ব্যবস্থা আমাদের অবজ্ঞার চোখে তাকায়। এর ব্যবস্থা করে দেয় বিভিন্ন ভাবে আমাদের সরকার ব্যবস্থা।
- অভাবনীয় বৈষম্যের শিকারঃ বাংলদেশের আর কোন পেশায় এত বৈষম্য দেখা যাবে কিনা তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণার প্রয়োজন।
- শুধু আশ্বাসই আর মিষ্টি কথাই প্রাপ্তিঃ অনেক ভাল আশ্বাস আর অনেক মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনতে পাওয়া যায় এ পেশায় কখনও কখনও। তবে সকল সময় নয় কোন কোন সময় পূর্বের মিষ্টি কথা মনে করিয়ে দিলে আবার শিকার হতে লাঞ্চনার।
- জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচাঃ আমরা যারা এ পেশা আছি তারা আসলে কি বেঁচে আছি আমার তো মনে না। আমরা প্রতিনিয়ত জীবন থেকে পালিয়ে বেঁচে থাকি। মাসের শেষে ও শুরুতে পালাতে হয়, উৎসব আসলে পালাতে হয়। মেহমান আসলে পালাতে হয় আরা নাই বা বললাম।
বাংলাদেশে এমপিওভুক্ত (মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) শিক্ষার মানোন্নয়নে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। এর মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো:
১. শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও পেশাগত উন্নয়ন:
- পুনঃপ্রশিক্ষণ: এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করা উচিত, যাতে তারা আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি, প্রযুক্তি এবং শ্রেণীকক্ষে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পায়।
- কর্মশালা ও সেমিনার: শিক্ষকদের জন্য নতুন পদ্ধতিতে ক্লাস পরিচালনা, মানসিক স্বাস্থ্য, এবং শিক্ষণ কৌশল নিয়ে কর্মশালা আয়োজন করা যেতে পারে।
২. শিক্ষা কার্যক্রমে প্রযুক্তির ব্যবহার:
- ডিজিটাল ক্লাসরুম: ই-লার্নিং বা ডিজিটাল ক্লাসরুমের মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত মান উন্নত করা যেতে পারে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে সাহায্য করবে।
- অনলাইন শিক্ষার সুবিধা: করোনাভাইরাসের পর থেকে অনলাইন শিক্ষা অনেক গুরুত্ব পেয়েছে। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলিতে যথাযথ প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করা গেলে শিক্ষার মান উন্নত হতে পারে।
৩. শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সহায়ক পরামর্শ:
- মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক কার্যক্রম: শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমানোর জন্য স্কুলে কাউন্সেলিং সেশন এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
- ক্যারিয়ার পরামর্শ: শিক্ষার্থীদের পেশাগত ভবিষ্যত সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং কার্যক্রম পরিচালনা করা।
৪. ভবিষ্যত উপযোগী পাঠ্যসূচি তৈরি:
- কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষার উপর গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এটি শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবন ও চাকরি বাজারের জন্য প্রস্তুত করবে।
- জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা: পাঠ্যক্রমে বিভিন্ন আধুনিক জ্ঞান যেমন পরিবেশ, বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, এবং সামাজিক যোগাযোগের দক্ষতা অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
৫. প্রশাসনিক সংস্কার ও অবকাঠামো উন্নয়ন:
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন: স্কুলগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন, যেমন শ্রেণীকক্ষের আধুনিকীকরণ, স্যানিটেশন সুবিধা, খেলাধুলার উপকরণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।
- শিক্ষক নিয়োগ ও তদারকি: এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের যোগ্যতা এবং পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করার জন্য সঠিক নিয়োগ এবং তদারকি ব্যবস্থা প্রয়োজন।
৬. শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন:
- নির্দেশনামূলক মূল্যায়ন: শুধু পরীক্ষার মাধ্যমে না, বরং শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ দক্ষতা মূল্যায়ন করে তাদের ক্ষমতা অনুসারে ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। যেমন, প্রজেক্ট, প্রতিবেদন এবং ক্লাস পারফরম্যান্স মূল্যায়ন।
- কার্যকর ফিডব্যাক সিস্টেম: শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ফিডব্যাক প্রদান করা, যাতে তারা আরও উন্নতি করতে পারে।
৭. বেসরকারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সমন্বয়:
- সামাজিক অংশগ্রহণ: সরকার, শিক্ষকদের সংগঠন, অভিভাবক ও সম্প্রদায়কে একত্রিত করে শিক্ষার উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
- সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও নিয়ন্ত্রণ: এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মানসম্মত শিক্ষার জন্য আরও তদারকি এবং সঠিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
8. বেসরকারী শিক্ষকদের জীবন মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণঃ
- বেতন বৃদ্ধির ব্যবস্থা: এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন কাঠামো বর্তমান জীবনযাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। নিয়মিত বেতন পর্যালোচনা এবং জীবনযাত্রার মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উপযুক্ত বেতন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
- বেতন প্রদানের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা: শিক্ষকদের বেতন সময়মতো প্রদান নিশ্চিত করতে একটি সুষ্ঠু ও নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি চালু করা দরকার। অনেক ক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন বিলম্বিত হয়, যা তাদের জীবনযাত্রায় চাপ সৃষ্টি করে।
- বেতন স্কেল উন্নয়ন: শিক্ষকরা যদি তাদের কাজের জন্য উপযুক্ত বেতন না পান, তবে তারা মনোযোগীভাবে কাজ করতে সক্ষম হবেন না। তাই, বেতন স্কেল সংস্কার এবং শিক্ষক চাকরি সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন।
- স্বাস্থ্য বীমা: শিক্ষকদের জন্য একটি রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বীমা ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে, যাতে তারা এবং তাদের পরিবার ভালো চিকিৎসা সুবিধা পায়।
- শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার উদ্যোগ: শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি যেমন ক্রীড়া আয়োজন, যোগব্যায়াম, মনোসামাজিক সেবা এবং কাউন্সেলিং সেশন আয়োজন করা যেতে পারে।
- সরকারি আবাসন প্রকল্প: শিক্ষকদের জন্য বিশেষ সরকারি আবাসন প্রকল্প চালু করা যেতে পারে, বিশেষ করে যারা শহরের বাইরে বা দূরবর্তী অঞ্চলে থাকেন। এর ফলে তারা তাদের দৈনন্দিন যাতায়াতের কষ্ট কমাতে পারবেন।
- বাড়ি ভাড়া সহায়তা: সকল শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়া সরকারী শিক্ষকদের ন্যায় যৌক্তিক ভাবে প্রদান করা।।
- অবসরভাতা বৃদ্ধি: শিক্ষকদের অবসরকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি যথাযথ পেনশন বা অবসরভাতা ব্যবস্থা চালু করা উচিত সরকারী শিক্ষকদের ন্যায়।
- স্বাস্থ্য সুবিধা অবসরকালেও: অবসর নেওয়ার পরেও তাদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট সুবিধা দেওয়া যেতে পারে, যাতে তারা জীবনভর স্বাস্থ্য সেবার সুবিধা পান।
- যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি: শিক্ষকদের জন্য একটি স্বচ্ছ এবং ন্যায়সংগত পদোন্নতি ব্যবস্থা তৈরি করা, যেখানে তাদের অর্জিত যোগ্যতা এবং পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে পদোন্নতি দেওয়া হবে
- দায়িত্বের স্বীকৃতি: শিক্ষকরা যখন কোন বিশেষ দায়িত্ব পালন করেন, যেমন একটি মঞ্চস্থ অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেওয়া বা বড় ধরনের পরীক্ষার আয়োজন করা, তখন তাদের কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা জরুরি।
- শিক্ষকদের জন্য সহায়ক পরিবেশ: শিক্ষকরা যদি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন এবং শ্রেণীকক্ষে একটিভলি অংশগ্রহণ করতে পারেন, তবে তাদের জীবনের মানও উন্নত হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পরিবেশ তৈরির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
9.বেসরকারি ও সরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্যদূরীকরণ:
- বাংলাদেশে সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যপক বৈষম্য বিরাজমান যা শিক্ষার গুনগুতমান বৃদ্ধিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। যা একটি দেশ তথা জাতির কাছে কখনও এদেশের বেসরকারী শিক্ষক সমাজ আশা করে না। বার বার বিভিন্ন ভাবে প্রতিশুতি দিয়ে তার বাস্তাবায়ন না করা।
- আমাদের দেশে বেসরকারী শিক্ষকদের যে শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান আছে তা কখনও ভাবাই হয় না। কিন্তু বাস্তবতা হল এদেশের 97% শিক্ষার্থী বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরালেখা করে। তাই বেসরকারী শিক্ষকদের বঞ্চিত করলে কোন না কোন ভাবে এই 97% শিক্ষার্থী কিন্তু বঞ্চিত হবে। যা রাষ্ট্রে জন্য মঙ্গলজনক নয়। তাই এ ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।
এমপিওভুক্ত শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করলে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে, এবং শিক্ষার্থীরা আরও উন্নত ও প্রতিযোগিতামূলক ভবিষ্যত অর্জন করতে সক্ষম হবে।
এই সকল সমস্যা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে এবং তারা সরকারের নিকট তাদের দাবি পূরণের জন্য সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। তারা একটি ন্যায্য, সুষ্ঠু, এবং সন্মানজনক পরিবেশে কাজ করার সুযোগ চান, যাতে তারা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারেন এবং সমাজে আরও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেন।
অস্পুর্ণ………………
Post Views: 13
Leave a Reply