কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য বদলি নীতিমালা প্রকাশ করেছে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। তবে এই নতুন নীতিমালায় স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার বদলি নীতিমালার তুলনায় বেশ কিছু বৈষম্য স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা গেছে, যা নিয়ে শিক্ষক সমাজে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার নীতিমালাটি জারি করা হলেও রোববার তা বিভাগীয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম।
নীতিমালা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারী ও পুরুষ শিক্ষকরা চাকরিজীবনে সর্বোচ্চ তিনবার বদলির সুযোগ পাবেন। অথচ সাধারণ স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার নীতিমালায় পুরুষদের জন্য এই সংখ্যা মাত্র দুইবার, নারীদের জন্য তিনবার নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এখানেই এক ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষক সংগঠনগুলোর।
দ্বিতীয় বৈষম্যটি হলো—কারিগরি নীতিমালায় একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বছরে দুইজন শিক্ষক বদলি হতে পারবেন এবং পারস্পরিক বদলিকে ওই তিনবার বদলির সীমার মধ্যে গণনা করা হবে না। অন্যদিকে, সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বছরে একজনের বেশি শিক্ষক বদলি হতে পারবেন না—এমন বিধান রয়েছে।
তৃতীয় বৈষম্যটি আরও গভীর। কারিগরি শিক্ষকদের বদলির ক্ষেত্রে দেশের যেকোনো জেলায় আবেদন ও বদলির সুযোগ রাখা হলেও, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার নীতিমালায় শিক্ষকরা কেবল নিজ জেলা বা বিভাগেই বদলি হতে পারবেন। এতে করে বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষকরা এটিকে চরম বৈষম্য এবং ভিন্ন ধারার নীতিগত বৈপরীত্য হিসেবে দেখছেন।
এ সকল বৈষম্য দূর করে একটি সমন্বিত ও ন্যায়ভিত্তিক বদলি নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
কারিগরি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালায় যা আছে
কারিগরি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘যেহেতু বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক/শিক্ষিকাগণের বদলি কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয় সফটওয়ারের মাধ্যমে একটি নীতিমালার আওতায় বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন সেহেতু বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য নিম্নোক্ত বদলি নীতিমালা-২০২৫ প্রণয়ন করা হল।
বদলির সাধারণ শর্তাবলীতে বলা হয়েছে, বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শূন্যপদের চাহিদা/বিবরণ প্রতি বছর ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অনলাইনে প্রকাশ করবে। প্রকাশিত শূন্য পদের বিপরীতে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এমপিওভুক্ত বেসরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বদলির আবেদন আহ্বান করবে।
সমপদে বদলীর জন্য পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে ১ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে অনলাইনে আবেদন করা যাবে। ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে বদলির আবেদনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত প্রদান করা হবে। ৩০ জানুয়ারীর মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদান সম্পন্ন করতে হবে।
আবেদনকারি শিক্ষক-শিক্ষিকা সর্বোচ্চ ০৩ (তিন) টি কাঙ্খিত প্রতিষ্ঠানে বদলির জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করে আবেদন করতে পারবেন। প্রথম যোগদানের পর চাকরি দুই বছর পূর্ণ হলে বদলির আবেদন করার জন্য যোগ্য হবেন। বদলি হয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের পর ন্যুনতম দুই বছর কর্মে নিয়োজিত থাকার পর পরবর্তী বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন।
বদলির জন্য কাঙ্খিত প্রতিষ্ঠানে সর্বশেষ এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকতে হবে। একজন শিক্ষক কর্মজীবনে সর্বোচ্চ তিনবার বদলি হওয়ার সুযোগ পাবেন।
একটি শূন্য পদের জন্য একাধিক আবেদন পাওয়া গেলে নিম্নোক্ত অগ্রাধিকার বিবেচনা করতে হবে: (ক) নারী; (খ) স্বামী/স্ত্রীর কর্মস্থল; (গ) জ্যেষ্ঠতা এবং (ঘ) দুরত্ব।
বদলীকৃত প্রতিষ্ঠানে যোগদানকৃত শিক্ষক-শিক্ষিকা ঐ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকার জ্যেষ্ঠতাক্রমের নীচে অবস্থান করবেন। দূরত্ব পরিমাপের জন্য google Map অনুসরণ করা হবে। অসম্পূর্ণ বা ভুল তথ্য সম্বলিত আবেদন বিবেচনাযোগ্য হবে না। ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য প্রদান করলে এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
বদলির কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর এনটিআরসিএ শূন্য পদে নিয়োগের সুপারিশ চূড়ান্ত করবে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে ০২ (দুই) জন শিক্ষক বদলির সুযোগ পাবেন। তবে পারস্পরিক বদলির ক্ষেত্রে এ সংখ্যা প্রযোজ্য হবে না। এমপিওভুক্ত আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়/সভাপতি, ম্যানেজিং কমিটির অভিযোগের প্রেক্ষিতে/প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার স্বার্থে বদলিকারী কর্তৃপক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এক্ষেত্রে অভিযোগের প্রমানক থাকতে হবে।’
আবেদন নিষ্পত্তি প্ৰক্ৰিয়া
বদলির সমগ্র প্রক্রিয়া সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন হবে। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর সফটওয়্যার তৈরি ও অনলাইন আবেদনের ফরমেট নির্ধারণ করবে। বদলিকৃত শিক্ষকের ইনডেক্স পূর্বের প্রতিষ্ঠান থেকে বদলিকৃত প্রতিষ্ঠানে অন-লাইনে ট্রান্সফার হবে। পারস্পরিক বদলীর ক্ষেত্রে আবেদনকারীদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের (আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়) মাধ্যমে NOC সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্যাদি আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে। অনলাইন আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ বদলি/পদায়নের বিষয়টি নিষ্পন্ন করতে পারবেন। বদলিকৃত শিক্ষকের এমপিও ও অন্যান্য আর্থিক সুবিধাদি পূর্ববৎ বজায় থাকবে।
Leave a Reply