সরকারি চাকরিতে ১৫ বছরে স্বেচ্ছায় অবসর ও বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির পরিকল্পনা
দেশের ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারি কর্মচারীদের মূল বেতন প্রতিবছর বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। তবে এই বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের বেশি হবে না। এ লক্ষ্যে একটি স্থায়ী বেতন কমিশন গঠনের সুপারিশও করা হয়েছে। ড. আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত এ কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
১৮ জুন প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয় বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, এখন থেকে সরকারি কর্মচারীরা ২৫ বছর নয়, বরং ১৫ বছর চাকরি পূর্ণ করলেই স্বেচ্ছায় অবসরে যেতে পারবেন। যদিও এ বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত কোনো কর্মকর্তা প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত ১৫ বছরে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপার (এসপি) পদে কর্মরত অনেক কর্মকর্তার ভূমিকা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এদের মধ্যে অনেককেই ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ার পর বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে এবং যাঁদের চাকরির মেয়াদ এখনো পূর্ণ হয়নি, তাঁদের ‘বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’ (ওএসডি) করা হয়েছে। কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই ‘ওএসডি’ কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছায় অবসরের পথ তৈরি হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কমিশনের প্রতিবেদনের ৯.৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট, ২০১৮’-এর ৪৫ ধারা সংশোধন করে ২৫ বছর পূর্তিতে বাধ্যতামূলক অবসরের বিধান বাতিল এবং ১৫ বছর পূর্ণ হলে কর্মচারীদের স্বেচ্ছায় অবসরের সুযোগ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সরকার এখন কমিশনের এই সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারি হতে পারে।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২৫ বছর চাকরি শেষে স্বেচ্ছায় অবসরের সুযোগ পান এবং সরকার চাইলে কাউকে বাধ্যতামূলক অবসরেও পাঠাতে পারে। তবে কমিশন সুপারিশ করেছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে ‘ওএসডি’ করা যাবে না। বরং এ ধরনের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণকেন্দ্র বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাময়িকভাবে পদায়ন করে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়েছে।
কমিশনের অন্য সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে—উপসচিবদের জন্য বরাদ্দকৃত মাসিক ৫০ হাজার টাকার গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা বাতিল, সচিবালয়ের বাইরের কর্মকর্তাদের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত, শূন্য পদ না থাকলে পদোন্নতি না দেওয়া, প্রশাসনিক ন্যায়পাল নিয়োগ এবং মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা হ্রাস করা। এসব সুপারিশের মধ্যে ১৫ বছরে স্বেচ্ছায় অবসরের বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে জানা গেছে।
Leave a Reply