এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ও সংকটের মুখে রয়েছেন, যা তাদের স্বার্থ ও পেশাগত নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এমনিতেও এ পেশায় যারা কর্মরত রয়েছেন সকল সময়েই কোন না কোন সংকটের মোকাবিলা করতেই হয়। সংকটবিহীন জীবন কখনও এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ছিল না ভবিষ্যতেও থাকবে বলে মনে হয় না। কারণ এদেশের যখন যে সরকারই বা যে রাজনৈতিক দলই শাসন ক্ষমতায় এসেছে তারা কেউ কখনও এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করেনি।।
এদেশের আমলারা কেন জানি না কি কারণে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের প্রধান প্রতিপক্ষ ভাবে। ঠিক প্রতিপক্ষ ভাবুক কিন্তু সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় যা তা হলো আমলারা সকল সময় এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের কিভাবে পিঠে ছুড়ি বসানো যায় সেই চিন্তা নিয়ে ব্যস্ত। এদেশের আমলাদের প্রধান কাজ হলো এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের আর্থিক বিষয়গুলো কিভাবে অস্বাভাবিক করা যায় সেই বুদ্ধি সরকারের মধ্যে ওৎ পেতে থাকা দুষ্টু ব্যাক্তিদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের যখনই কোন অর্থনৈতিক প্রাপ্তির সম্ভাবনা সামনে আর সেখানে সর্বপ্রথম বাঁধা আসে আমলাদের মাঝ হতে। তারা সবসময় এদেশের সরকার ব্যবস্থাকে বোঝায় যে, এদের পিছনে এত অর্থ ব্যয় করার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।
বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান পরিকল্পনা উপদেষ্টা বা বিদায়ী শিক্ষা উপদেষ্টা এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধির যে উদ্যোগ গ্রহণ করে তার বিপক্ষে সরব ভুমিকা পালন করে আমাদের এই আমলারা। এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা তাদের বাড়িভাড়া বৃদ্ধির হার শতকরা হিসাবে করার ব্যাপারে যে দাবী জানিয়েছিল তার সরাসরি বিরোধিতা করেছে এই আমলারা। আমলাদের দাবী যে, না শতকরা হিসাবে বাড়িভাড়া প্রদান করা যাবে না বৃদ্ধি যদি করতেই হয় তাহলে থোক বরাদ্দ আকারে সামান্য কিছু বৃদ্ধি করা যেতে পারে। তাদের অহেতুক অনিয়মতান্ত্রিক বিরোধিতার কারণে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা অর্থনৈতিক সুবিধা গুলোর সমাধান আজও হয় নি।
আমলাদের অসহোগিতার কারণেই এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ইএফটি কার্যক্রম এখন পর্যন্ত সঠিক ভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। অন্যান্য সকল সেক্টরের ইএফটি সঠিক ভাবে পরিচালিত হলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ইএফটি আজ ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এর জটিলতা এখন অবধি দুর হয়নি। বেশি দুরে যাওয়ার দরকার নাই এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের এখন যে প্রশিক্ষণগুলো অনুষ্ঠিত হয় সেই প্রশিক্ষণের ভাতা কিন্তু ইএফটি বা বিএফটিএনের মাধ্যমে প্রদানে করা হয়। একটা বিষয় খেয়াল করে দেখেন সেখানে তাৎক্ষণিক ভাবে তথ্য নিয়ে তা দুই থেকে একদিনের মধ্যে যাচাই বাছাই করে তা বাস্তবায়ন উপযোগী করে তোলা যায়। মাউশির সেই ইএফটি বাস্তবায়ন করতে ৬ মাসেও হয় না। আসলেই জটিলতা তৈরি করাই যদি মুল উদ্দেশ্য হয় তাহলে বিভিন্নভাবে করাই যায়।
এবার আসি সর্বশেষ যে আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ঘটলো তা নিয়ে আমলাদের যে ন্যক্কারজনক ভুমিকা। এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সর্বশেষ যে আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি ঘটলো তা হলো তাদের উৎসব ভাতার বৃদ্ধি যা গত ২১ বছর থেকে ২৫% হারে পেয়ে আসছিলেন এই ঈদুল আযহা হতে তা বৃদ্ধি হয়ে ৫০% করা হলো। অথ্যাৎ উৎসব ভাতা ২৫% বৃদ্ধি করা হলো। কিন্তু লজ্জাজনক হলেও সত্যি যে আমলাদের ন্যাক্কারজনক ভুমিকার কারণে এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের উৎসব ভাতার কোন বৃদ্ধি ঘটেনি। এর পিছনে আমলাদের কালো যুক্তি হলো কর্মচারীরা তো আগে থেকেই ৫০% পায়।
২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেট হতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধির ব্যাপারে বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুত রয়েছে। কিন্তু সেই বৃদ্ধি নিয়ে শোনা যাচ্ছে আমলাদের নানামুখী যড়যন্ত্রের তত্ত। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল কিন্তু শিক্ষকদের ব্যাপারে অনেকটা আন্তরিক কিন্তু তাদের কুমন্ত্র দিয়ে বাঁধ সাধে এই আমলারা। শিক্ষক কর্মচারীদের বিভিন্ন ভাতা বৃদ্ধি তাদের চাহিদা মতোই মোটামুটি হতো যদি না আমলারা বাঁধা হয়ে না দাঁড়াত। হ্যাঁ আমরাও জানি আমাদের সরকার ব্যবস্থার হয়ত বর্তমানে সেই সামার্থ নাই যে, এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের শতভাগ দাবী পুরণ করার মতো। তবে তাদের সান্তনা দেওয়ার মতো সামর্থ অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু আমলারা চাচ্ছে ফাঁকি দিতে বা দায়সার ভাবে কিছু করার জন্য। আমলারা চাচ্ছে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের সবচেয়ে বৈষেম্যের যে জায়গায় তা হলো বাড়িভাড়া বৃদ্ধি। শিক্ষক কর্মচারীদের চাওয়া শতকরা হারে কিন্তু আমলারা চাচ্ছে নামমাত্র অল্প সামান্য কিছু থোক বরাদ্দ দিতে। এখন বর্তমান যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের ভাগ্যে কি আছে বলা মুশকিল।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়ে নতুন আর একটি পুরাতন ফাঁদের নতুন অবতারণা করতে চাচ্ছে আমাদের আমলারা তা হলো সার্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তকরণ। যা কিনা বিগত পলাতক সরকার সর্বাত্নক ভাবে চেষ্টা করে শেষমেষ পালিয়েছে। বর্তমানে তার রেখে যাওয়া দোসরা আবার নতুন ভাবে আবার সেই এজেন্ডা বাস্তবায়নের দিকে চেষ্টারত। সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা ভাল তো আমলারাই সেটার সুবিধা ভোগী হোক। এমপিওভুক্তদের উপর চাপানোর দরকার কি?
চলবে……
Leave a Reply