২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা নেই, থাকছে বিশেষ সুবিধার প্রস্তাব
প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য সরাসরি কোনো মহার্ঘ ভাতার ঘোষণা আসেনি। বাজেট বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে কিছু না বললেও, কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে এই সুবিধা কীভাবে দেওয়া হবে, তা প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনার ভিত্তিতে চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছে অর্থ বিভাগ।
সোমবার (২ জুন) জাতীয় সংসদে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থ উপদেষ্টা, যা দেশের জিডিপির ১২.৭ শতাংশ এবং আগের অর্থবছরের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এর মধ্যে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা পরিচালন ও অন্যান্য খাতে এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, “২০১৫ সালের পর থেকে কোনো নতুন বেতন কাঠামো প্রণীত হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।” যদিও কীভাবে এই সুবিধা বাস্তবায়িত হবে, সে বিষয়ে বাজেট বক্তৃতায় বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, “বাজেট পাসের আগে প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন এবং সম্ভব হলে নিজেই ঘোষণা দিতে পারেন।”
উল্লেখ্য, অনেকেই ধারণা করেছিলেন যে, এ বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেড অনুযায়ী বিভাজিত করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হতে পারে। কিন্তু বাজেট প্রস্তাবে সে ধরনের কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে বিশেষ যে বেতন বৃদ্ধি কথা বলা হয়েছে তা খুব সম্ভবত মহার্ঘ ভাতার খোলসে আসবে না। সেক্ষেত্রে সরকারী কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি পূর্বের অনুমান মতো ১০ ও ১৫ শতাংশ হারে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যদিও বাজেট বক্তব্যতে এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা অর্থ উপদেষ্টা প্রদান করেননি।
বর্তমানে বেসামরিক প্রশাসনে মোট ১৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৮ জন সরকারি কর্মচারী রয়েছেন। এর মধ্যে ১ম থেকে ১০ম গ্রেডে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৭৪৪ জন এবং ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডে ১১ লাখ ২ হাজার ৭৭৪ জন কর্মরত আছেন। এক সময় গ্রেড অনুযায়ী ভিন্ন হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব ছিল।
সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া অষ্টম বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। তার আগে সপ্তম কাঠামো চালু হয়েছিল ২০০৯ সালে। সাধারণত পাঁচ বছর পরপর নতুন কাঠামো ঘোষণা হলেও, এবার দীর্ঘ নয় বছরেও নতুন কাঠামো আসেনি, ফলে অনেকেই তাঁদের গ্রেডের সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছে গেছেন।
মূল্যস্ফীতির চাপে এ অবস্থার কিছুটা ভারসাম্য আনতে ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে সরকারি কর্মচারীদের ৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।
অর্থ বিভাগের একাধিক নির্ভরযোগ্য সুত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে প্রথম থেকে নবম গ্রেডের সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরা ১০ শতাংশ এবং দশম থেকে বিশতম গ্রেডের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ১৫ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা নয় বিশেষ বেতন বৃদ্ধির সুবিধা পেতে পারেন আগামী ১লা জুলাই হতে।
আগামী জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের বিশেষ প্রণোদনার হার বিদ্যমান ৫ শতাংশ থেকে বাড়ছে। এক্ষেত্রে ১০ম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই ৫ শতাংশসহ মোট ১৫ শতাংশ এবং ১ম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তারা ১০ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনা পাবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা টিবিএসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এই বৃদ্ধির ফলে সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে ১ম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তারা অতিরিক্ত ৫ শতাংশ এবং ১০ম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অতিরিক্ত ১০ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনা পাবেন।
এতে সরকারের বাড়তি প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে।
উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের বার্ষিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সরকারি চাকরিজীবীদের বিশেষ প্রণোদনা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘২০১৫ সালের পর থেকে কোনো বেতন কাঠামো না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর প্রস্তাব করছি।’
তবে সংশ্লিষ্ট উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে এখনও বিশেষ বেতন সুবিধা বৃদ্ধির হার চুড়ান্ত করা হয়নি। এই বিষয়ে আরও আলোচনার পর সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এই বেতন বৃদ্ধি সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য একটি বড় ধরনের আর্থিক সহায়তা হিসাবে কাজ করবে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে নতুন বেতন কাঠমো না থাকায় দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতির কারণে সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরা কিছুটা আর্থিক চাপে রয়েছে। এই বিশেষ সুবিধা তাদের জীবন মান উন্নয়নে কিছুটা সহায়ক ভুমিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে পাশাপাশি এটাও ভাবতে হবে যে, এই বিশেষ বেতন বৃদ্ধি সরকারের রাজস্বের উপর কতটা প্রভাব ফেলবে এবং এর ফলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে কি ধরনের পরিবর্তন আসবে সেটাও ভেবে দেখতে হবে। বাজেট পাসের পর এই বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। ততক্ষন অপেক্ষা করতে হবে চুড়ান্ত ঘোষণার জন্য।
Leave a Reply