1. admin@kp-nat.com : admin : Ayub Ali
  2. ayub.bhs@gmail.com : Ayub ali : Ayub ali
শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন

মাউশি ইচ্ছা করলেই ১/২ তারিখেই সম্ভব-তারপরও প্রশ্ন থেকেই যায়?

  • Update Time : সোমবার, ২ জুন, ২০২৫
  • ১৭৯ Time View
মাউশি ইচ্ছা করলেই ১/২ তারিখেই সম্ভব-তারপরও প্রশ্ন থেকেই যায়?

শেষ মুহূর্তের স্বস্তি নয়, প্রয়োজন সময়মতো সম্মান: এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-বোনাস বিতরণে বারবার প্রশ্ন

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় অংশ পরিচালিত হয় বেসরকারি এমপিওভুক্ত (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্বারা। দেশের কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষা নির্ভর করে এইসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের শ্রম, নিষ্ঠা ও আদর্শচর্চার ওপর। অথচ বছর বছর দেখা যায়, উৎসব এলেই বেতন-বোনাস ঘিরে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা, দেরি, উৎকণ্ঠা।

২০২৫ সালের কোরবানির ঈদ সামনে রেখে অবশেষে বেতন ও বোনাস দেওয়া হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ‘শেষ মুহূর্তের স্বস্তি’ কি যথেষ্ট? নাকি এটি শুধু দায়সারা দায়িত্বপালনের প্রতিচ্ছবি? মাউশি ইচ্ছা করলে কিন্তু আরও দুই একদিন আগে যদি বেতন ও বোনাস প্রদান করত তাহলে শিক্ষকদের উপর উৎসবের প্রেসার কম পড়ত। তারপরও কিন্তু ধন্যবাদ একটা পেতেই পারে মাউশি।

ইএফটি: যখন ইচ্ছা হয়, তখন হয়!

ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (EFT) বর্তমানে সরকারি অর্থ লেনদেনের অন্যতম দ্রুত ও কার্যকর পদ্ধতি। মাউশি (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর) এই পদ্ধতির মাধ্যমে একাধিকবার মাসের ২ তারিখের মধ্যেই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন পাঠিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, বিগত কয়েক মাসে সুনির্দিষ্ট সময়ে এই ইএফটি কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালিত হয়েছে। যে মাসে ইএফটির উদ্বোধন হয়েছিল সে মাসে(ডিসেম্বরের বেতন)।

তাহলে প্রশ্ন আসে, যখন সক্ষমতা আছে, তখন নিয়মিতভাবে সময়মতো বেতন-বোনাস কেন দেওয়া হয় না?
কেন উৎসবের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, যেটা বছরের সবচেয়ে বড় ব্যয়সংকুল পারিবারিক আয়োজন, সেখানে অর্থপ্রাপ্তি হয় এমন দেরিতে, যে শিক্ষককে পশুর হাটে গিয়েই খালি হাতে ফিরতে হয়? পরিবারের সদস্যদের চাপের সম্মুখীন হতে হয়ে কেন?

শেষ মুহূর্তে বেতন-বোনাস: উৎসব না চাপ?

ঈদের আগে বেতন-বোনাস সময়মতো হাতে পেলে শিক্ষক পরিবারে স্বস্তি থাকে, পরিকল্পনা থাকে, আনন্দ থাকে। কোরবানির পশু কেনা, বাড়ির খরচ, আত্মীয়স্বজন আপ্যায়ন—এসব কিছুই হয় না তড়িঘড়ি করে। কিন্তু যখন ঈদের এক-দু’দিন আগে টাকা আসে, তখন কি বাস্তবিকই সেটি “উৎসবের অর্থ” হয়? নাকি হয় শুধুই “জরুরিভাবে ব্যবহারের জন্য কিছু টাকার প্রাপ্তি”? আমরা যে যেটাই করি না কেন তার কিন্তু মুল উদ্দেশ্য পরিবার পরিজনদের মুখে হাসি ফুটানো। কিন্তু মাউশির উদাসীনতার ফলে পরিবারের সদস্যদের কাছে কখনও কখনও অনেক ছোট মনে হয়।

একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক লিখেছিলেন:

“ঈদের দু’দিন আগে টাকা হাতে পেয়ে পশু কিনতে গেলাম, দেখলাম বাজেট অনুযায়ী কিছুই আর নেই। বাধ্য হয়ে ছোট পশু কিনলাম, পরিবারের মুখে হাসি নেই।”

এই ঘটনাটি একটি উদাহরণ মাত্র—এমন অভিজ্ঞতা শত শত শিক্ষকের, যাঁরা শুধু দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলেন, অথচ নিজেদের বর্তমানেই নিশ্চয়তা পান না।

কেন বারবার এমন হয়?

এই অনিয়মের পেছনে কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা যায়:

  1. অর্থ বিভাগ ও মাউশির মধ্যে সমন্বয়হীনতা।
  2. উৎসব উপলক্ষে আগাম প্রস্তুতির অভাব।
  3. বিল দাখিল ও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় জটিলতা এবং পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের অভাব।

এগুলোর কোনোটিই এমন নয় যা প্রযুক্তি ও সদিচ্ছা দিয়ে সমাধানযোগ্য নয়। বরং বিষয়টি হলো প্রাধান্য না দেওয়ার মানসিকতা

প্রশ্ন উঠছে—এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাই বারবার উপেক্ষিত কেন?

সরকারি চাকরিজীবীরা নিয়মিত সময়মতো বেতন-বোনাস পান। তাহলে সমান দায়িত্ব পালনকারী এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকেন কেন? একই বাজেট, একই উৎসব, একই রাষ্ট্রীয় কাঠামো—তবু বৈষম্য!

রাষ্ট্র যদি শিক্ষকের সম্মান নিশ্চিত না করে, তবে জাতি কখনোই উন্নত মননে বিকশিত হতে পারে না।

সমাধানের পথ কী?

এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে কিছু বাস্তবভিত্তিক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি:

১. ইএফটি-এর স্থায়ী সময়সূচি নির্ধারণ

মাসের নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে বেতন ও উৎসব ভাতা ছাড়ের নির্দেশ জারি করতে হবে, যেমন ১-৩ তারিখের মধ্যে বেতন ও উৎসবের আগে কমপক্ষে ৫ দিন আগে বোনাস প্রেরণ।

২. বাজেট পরিকল্পনায় উৎসবভাতা পৃথকভাবে বরাদ্দ

বছরের শুরুতেই নির্দিষ্ট করে বাজেটে উৎসবভাতা খাত স্বচ্ছভাবে বরাদ্দ রাখতে হবে, যেন সময়মতো ছাড় দেওয়া সম্ভব হয়।

৩. শিক্ষক প্রতিনিধি ও শিক্ষা প্রশাসনের যৌথ কমিটি

নিয়মিত সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানে মাসিক বা ত্রৈমাসিক সমন্বয় সভা আয়োজন জরুরি।

৪. অটোমেশন ও রিয়েল-টাইম মনিটরিং ব্যবস্থা

মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েব পোর্টালে বাস্তবায়ন অগ্রগতি ও বিল দাখিলের লাইভ আপডেট যুক্ত করতে হবে।

শেষ কথা: দয়া নয়, অধিকার চাই

শিক্ষকরা কারো দয়া চান না। তাঁরা চান তাদের প্রাপ্য সম্মান, সময়মতো বেতন, ন্যায্য বোনাস। রাষ্ট্রের সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন পেশা যেন বারবার অসহায়তার প্রতীক না হয়, সে নিশ্চয়তা দিতে হবে আমাদের প্রশাসন ও নীতিনির্ধারকদের।

আজকের এই লেখা শুধু আক্ষেপ নয়—এটি এক চেতনার দাবি, এক প্রজন্মের অধিকার প্রতিষ্ঠার ডাক।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আমার খবর
© All rights reserved © 2025 Kisukhoner Pathshala
Customized By BlogTheme