বাংলাদেশে শিক্ষার যে অগ্রগতি তার পিছনে নিরলস ভাবে যে পেশার মানুষগুলো দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে তারাই কিন্তু সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। এদেশের শিক্ষার ক্ষেত্রে শতকরা ৯৮ শতাংশ কিন্তু এই এমপিওভুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিচালিত হয়। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো প্রতি বছর এমনকি প্রতিমাসেই তাদের বেতন প্রদানে সরকার তথা মন্ত্রণালয়ের গড়িমসি যেন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারাবছর যাই করুক এদেশের শিক্ষা প্রশাসনের সাথে যারা জড়িত তাদের যদি এতটুকু বিবেকবোধ থাকত তাহলে উৎসবের সময়ও তারা এই গড়িমসি করত না। আজ ১ জুন ২০২৫ আগামী ৭ জুন পবিত্র ঈদুল আযহা। জুন মাসের শুরুতেই এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এক চরম অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়ে। কারণ, এখনো পর্যন্ত তাদের বেতন ও বোনাস জমা হয়নি। আজ ও আগামীকাল ২ জুনের মধ্যে যদি বেতন ও বোনাসও জমা না হয়, তাহলে এই মানুষগুলো কীভাবে ঈদের বাজার করবেন, পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবেন—তা বলা সত্যিই মুশকিল। প্রতিনিয়ত প্রতি বছর এই একই ধরনের ছেলেখেলা অথচ নেই কোন এর প্রতিকার।
ব্যাংক খোলা থাকবে আর মাত্র ৪ দিন। এই চারদিনের মধ্যে সত্যিকারেই কতটুকু সমস্যাগুলো সমাধান করবে তা সত্যি বলা মুশকিল।
যদি এই অবস্থা অব্যাহত থাকে, তাহলে এবারও হয়তো ঈদুল ফিতরের পুনরাবৃত্তি হতে পারে—যেখানে শিক্ষক-কর্মচারীরা ঈদের দিনেও বেতন-বোনাস না পেয়ে ক্ষোভে-হতাশায় দিন কাটিয়েছেন। অথচ রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ—এই শিক্ষা ব্যবস্থার চালিকাশক্তিদের এমন দুরবস্থার যেন কেউ কোনো খেয়ালই রাখছে না।
বিশ্বের প্রতিটি উন্নত ও সচেতন দেশে প্রশাসনিক ভুল বা অবহেলা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে সেই ভুল না করার সচেষ্ট প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন। বারবার একই ভুল, একই অব্যবস্থা, একই অবহেলা। নেই কোনো অনুশোচনা, নেই কোনো আত্মজিজ্ঞাসা।
আমলারা নিজেদেরকে যেন ‘অসীম অধিকারী’ মনে করেন। তারা যা করবেন সেটাই ন্যায্য, সেটাই নিয়ম। অথচ তারা ভুল করলে তার দায়ভার যেন কেউ নিতে রাজি নয়। অথচ ভুলের পর ভুল করে চলছে প্রশাসন। বিশেষ করে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রতি যে বিমাতাসুলভ আচরণ চলে আসছে, তার কোনো শেষ নেই।
এই অব্যবস্থার বিরুদ্ধে এখনই সোচ্চার হতে হবে। আজ বেতন না এলে এবং আগামীকাল বোনাস না এলে, তা হবে নিছক অবহেলা নয়—এটা হবে এক ধরনের অবিচার, একধরনের মানসিক নির্যাতন। এই সংকট এড়াতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, নইলে ঈদের আনন্দ পরিণত হবে শিক্ষক সমাজের জন্য আরেক দুঃস্বপ্নে।
Leave a Reply