এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজের জন্য দীর্ঘদিনের এক প্রত্যাশিত দাবি ছিল শতভাগ উৎসব ভাতা প্রদান। সেই আজ হতে ২১ বছর পূর্বে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে তৎকালীন সরকার আপদকালীন সমাধান হিসেবে শিক্ষকদের ২৫% ও কর্মচারীদের ৫০% উৎসব ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তখন আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে, পরবর্তীতে বাজেটে বরাদ্দ রেখে পর্যায়ক্রমে শতভাগ করা হবে। কিন্তু সেই আশা ধীরে ধীরে দুরাশায় পরিণত হয়েছে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের জীবনে। বিগত ২১ বছরে কোন সরকারই এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের এই উৎসব ভাতার দাবী পুরেণে নূর্নতম কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। তবে বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আবার শিক্ষকদের দাবী ও সরকারের কিঞ্চিত অনুগ্রহের ফলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক দীর্ঘদিনের এই দাবী পুরোপুরি না হলেও কিছুটা পূরণ হলো—এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা ২৫% থেকে বাড়িয়ে ৫০% করা হয়েছে। অবশেষে এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ৪টি শর্তে সম্মতি পত্র জারি করেছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, বিশেষ করে এমন সময়ে যখন মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী। এর ফলে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জীবনে কিছুটা হলেও উৎসবের আমেজ গ্রহণের আশার সঞ্চার হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বাবদ সহায়তার জন্য ২২৯ কোটি টাকা চাইলে অর্থ বিভাগ তাতে সম্মতি দিয়েছে।
শনিবার (১৭ মে) অর্থ বিভাগ থেকে এই অর্থ ছাড়ের সম্মতি দেয়। এই অর্থ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট থেকে সরবরাহ করা হবে, যা এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ভাতাপ্রাপ্তিতে আর্থিক নিশ্চয়তা প্রদান করবে।
অনেক দিন ধরেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা দাবি করে আসছিলেন, তাদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা হোক। এ দাবি পূরণ না হলেও অন্তত উৎসব ভাতার ক্ষেত্রে এই সামান্য স্বীকৃতি কিছুটা হলেও স্বস্তির কারণ হয়ে এসেছে। ৫০% উৎসব ভাতা অনেক শিক্ষকের জন্য পরিবার নিয়ে উৎসব পালনকে পুরোপুরি না হলেও কিছুটা হলেও সহজ করবে।
শর্তে বলা হয়েছে, ‘এ ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে যাবতীয় আর্থিক বিধি-বিধান যথাযথভাবে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে; এ ভাতা সংক্রান্ত ব্যয়ে ভবিষ্যতে কোন অনিয়ম দেখা দিলে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ উক্ত অনিয়মের জন্য দায়ী থাকবেন; প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় কর্তৃক আদেশ জারির তারিখ হতে এ ভাতা কার্যকর হবে এবং প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় কর্তৃক জি,ও জারি করে জি,ওর ০৪ (চার) কপি অর্থ বিভাগে পৃষ্ঠাংকনের নিমিত্ত প্রেরণ করতে হবে।
সম্মতিপত্রে আরও বলা হয়েছে, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ-এর আওতাধীন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত কর্মচারীগণের উৎসব ভাতার হার বিদ্যমান ৫০ (পঞ্চাশ) শতাংশ বহাল থাকবে।’
কিন্তু এই ঘোষণার মধ্যে একটি বড় হতাশা রয়ে গেছে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মচারীদের জন্য। তাদের উৎসব ভাতা এখনো অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এই বৈষম্য কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দিয়েছে। কারণ হিসাবে মাউশি থেকে বা অর্থ মন্ত্রণালয় যা জাননো হযেছে তা হলো যে, কর্মচারীরা তো আগে থেকেই ৫০% উৎসব পেয়ে আসছে।
অনেকে প্রশ্ন তুলছেন—একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেও একজন শিক্ষক ও একজন কর্মচারীর মধ্যে কেন থাকবে এত পার্থক্য? শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি সম্মিলিত কাঠামো, যেখানে শিক্ষক ও কর্মচারী উভয়ের অবদানেই শিক্ষা কার্যক্রম চলে। তাহলে এমন বিভাজন কি ন্যায়সংগত?
প্রশ্ন কিন্তু করাই যায় একটি দেশে বা রাষ্ট্রের পক্ষে এই কয়েক হাজার কর্মচারীদের উৎসব ভাতা বাড়ানো সম্ভব হলো না। এর ফলে কি প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের মনে কোন বৈষম্য কি পরবর্তীতে সামাজিক অসন্তোষ তৈরি করবে না? শিক্ষার মান উন্নয়নে সকলের ভূমিকা রয়েছে তেমনি শিক্ষকদের পাশাপাশি কর্মচারীদেরও অনেক গুরুত্বপুর্ণ রোল প্লে করতে হয়।
শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বাড়ানো নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। তবে একটি টেকসই, ন্যায়ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়তে হলে শিক্ষক ও কর্মচারী—দুই পক্ষের দিকেই সমান দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। এই প্রজ্ঞাপন আংশিক স্বস্তি বয়ে আনলেও, পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার ন্যায্যতা এখনো এক অসম্পূর্ণ গল্পই বলে। সম্পূর্ণ গল্প আমরা সেদিন বলব যেদিন সকল চাকুরীজীবিদের অধিকার ন্যয্যতার ভিত্তিতে হবে।
Leave a Reply