ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে গঠিত হবে নতুন ইতিহাস: টেকেরহাটে এনসিপির আলোচনা সভায় মেহরাব সিফাত
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক মেহরাব সিফাত বলেছেন, বাংলাদেশের সামনে এখন এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণ। এ দেশের ছাত্র-জনতা এবার একটি বিপ্লবী সরকার গঠনের মাধ্যমে নতুন ইতিহাস রচনা করবে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর যদি কোনো ধরণের জোরপূর্বক চাপ প্রয়োগ করা হয়, তাহলে সেই দায় ছাত্র-জনতাকেই নিতে হবে না—বরং যারা ওই ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকবে, তাদের ইতিহাস বিচারে রাখবে।
তিনি এই মন্তব্য করেন গত শুক্রবার (২৩ মে) রাত ১০টায় মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট তালুকদার ডিজিটাল প্লাজায় আয়োজিত এনসিপি আয়োজিত এক আলোচনা সভায়, যেখানে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
মেহরাব সিফাত বলেন, “২০২৪ সালে দেশের ছাত্র-জনতা যে দায়িত্ব ও আস্থা ড. ইউনূসের ওপর রেখেছে, তিনি তা যথাযথভাবে পালনের অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু যদি দেশের অভ্যন্তরে কোনো চক্রান্ত বা বিদেশি শক্তির চাপের ফলে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়, তাহলে সেই অধ্যায় ইতিহাসে কড়া ভাষায় লেখা থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই আন্দোলন শুধু সরকার পতনের উদ্দেশ্যে নয়, এটি একটি নতুন রাষ্ট্রব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা এবং শিক্ষাব্যবস্থা গঠনের সংগ্রাম। ছাত্র-জনতা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে কাজ করছে, যা একদিন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রূপ পাবে। তারা এই দেশকে বদলে দিয়ে যাবে একটি নতুন কাঠামোর ভিত্তিতে।”
মেহরাব সিফাত স্মরণ করেন ২০২৪ সালে রাজপথে প্রাণ দেওয়া শহীদ ও আহত ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের কথা। তিনি বলেন, “তাদের আত্মা আজ ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রতি সমর্পিত। ছাত্র-জনতার প্রতিজ্ঞাও এখন তার সঙ্গে বাঁধা।”
তিনি ছাত্র-জনতাকে সতর্ক করে বলেন, “আপনারা কেউ মনে করবেন না যে দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে। এই সংগ্রাম এখনো চলছে। আমাদের আরও সংগঠিত হতে হবে, আরও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
তিনি বলেন, “গত ১৭ বছর ধরে চলা আওয়ামী শাসনের দুঃশাসন বা ‘জাহিলিয়াতি’ শাসনের বিরুদ্ধে দেশের নিপীড়িত মানুষ যখন একটি কেন্দ্রীয় ডাকে রাজপথে নেমেছিল, সেটি ছিল একটি প্রতিবাদের শুরু। কিন্তু এইবারের আন্দোলন ধ্বংস নয়, গড়ার আন্দোলন। এবার আমাদের সামনে নতুন একটি কাঠামো দাঁড় করানোর দায়িত্ব। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
তিনি দাবি করেন, “আমাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। শহীদ ও আহতদের বিচার প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। যতদিন পর্যন্ত বিচার না হবে, ততদিন ছাত্র-জনতা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের বাকি সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে একজোট হতে হবে এই রক্তের প্রশ্নে।”
আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিসি) সদস্য আজগর শেখ। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মাদারীপুর জেলা কমিটির আহ্বায়ক নেয়ামত উল্লাহ, সদস্য সচিব মাসুম বিল্লাহ, এনসিসির রাজৈর উপজেলার সদস্য মহাসিন ফকির ও জাবের হাওলাদার এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতা আফরান জামিসহ জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা।
Leave a Reply