সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন মহার্ঘ ভাতা কার্যকর হচ্ছে ১ জুলাই থেকে
আগামী ১ জুলাই থেকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নতুন হারে মহার্ঘ ভাতা পাবেন। বাজেট পূর্ব প্রস্তুতির অংশ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রথম থেকে নবম গ্রেডের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাবেন মূল বেতনের ১৫ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা। আর দশম থেকে বিংশ গ্রেড পর্যন্ত কর্মীরা পাবেন ২০ শতাংশ হারে ভাতা।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এবারের বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে একটি বিশেষ কমিটি ইতোমধ্যে কাজ করেছে।
তবে নতুন মহার্ঘ ভাতা কার্যকরের ফলে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে চালু হওয়া ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে। অর্থাৎ জুলাই থেকে সরকারি কর্মচারীরা আগের মতো বার্ষিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি কেবল মহার্ঘ ভাতা পাবেন। এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের কথা নির্দিষ্ট করে কিছু না বলা হলেও অতীত অভিজ্ঞতা অনুসারে এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরাও সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীরা যখন এ-ই সুবিধা পেয়েছে তারাও তখন এ-ই সুবিধা পেয়েছে। তাই ধরে নেওয়া যায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরাও এ-ই সুবিধার আওতায় আসবে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, নতুন মহার্ঘ ভাতা বাস্তবায়নে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় হবে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৮২,৯৯০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১০.৪১ শতাংশ। এই বরাদ্দ আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বেড়ে ৮৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হতে পারে। তবে মহার্ঘ ভাতা যুক্ত হলে ব্যয় ৯৬ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।
২০১৫ সাল থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পেয়ে আসছেন। তবে গত জাতীয় নির্বাচন পূর্ব সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার অতিরিক্ত ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করে। এটি এবার বাতিল হলেও নতুন মহার্ঘ ভাতা সেই ঘাটতি কিছুটা পূরণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, মূল্যস্ফীতির চাপ মোকাবেলায় গত ডিসেম্বরে একটি কমিটি গঠিত হয়, যেখানে প্রাথমিকভাবে প্রথম থেকে নবম গ্রেডে ১০-১৫ শতাংশ এবং দশম থেকে বিংশ গ্রেডে ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতার প্রস্তাব দেওয়া হয়। জনপ্রশাসন সচিব জানুয়ারি থেকেই এটি কার্যকর করার সুপারিশ করেছিলেন, তবে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
এদিকে, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অতীতে পদোন্নতি ও বেতন বৈষম্যের অভিযোগ তুলে ধরেছেন। আগের সরকারের আমলে অবসরপ্রাপ্ত ও পদোন্নতিবঞ্চিত ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৭৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল।
সার্বিকভাবে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সরকারি চাকরিজীবীদের জীবনযাত্রার মান কিছুটা উন্নত করতে বাজেটে বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
Leave a Reply