বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম চালিকাশক্তি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এই শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও নিবেদনের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে যে অগ্রগতি এসেছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু আমাদের অবহেলা করা হয় প্রতিনিয়ত, প্রতিক্ষনে। প্রতি বছর বিভিন্ন উৎসবের আগে তাদের মুখে হাসি ফুটানোর বদলে এক ধরনের অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ ও হতাশা দেখা যায়—যা বছরের পর বছর চলমান।এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না।
ঈদুল আজহার আর বেশি সময় বাকি নেই। অথচ এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের উৎসব ভাতা (বোনাস) বৃদ্ধির বিষয়ে যে আশ্বাস অনেক আগেই দেওয়া হয়েছিল, তার কোনো প্রজ্ঞাপন এখনও পর্যন্ত জারি হয়নি। সরকারিভাবে একবার বলা হচ্ছে—বোনাস বাড়ানো হবে, আবার কিছু সূত্র মতে এ বৃদ্ধি নিয়ে রীতি মতো শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে—এই ঈদের আগে তা কার্যকর হবে কি হবে না। তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিছুদিন পূর্বে বোনাস বৃদ্ধি নিয়ে এক বিতর্ক মাথাচাড়া দেয় তা হলো এমপিওভুক্ত কর্মচারীদের বোনাস বৃদ্ধি আপাতত কর হচেছ না যেহেতু তারা পূর্ব হতেই ৫০% বোনাস পেয়ে থাকে তাই। তবে বর্তমানে আবার শোনা যাচ্ছে যে, তাদেরও ২৫% বৃদ্ধি করে ৭৫% করা হবে। তবে এর মধ্যেই আবার নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তাহলো মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের বোনাস বৃদ্ধির বিষয়ে। মাদ্রাসা ও কারিগরি অধিদপ্তর থেকে বলা হয়েছে যে, এখনও অবধি তাদের বোনাস বৃদ্ধির কোন প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়নি। অতএব, তাদের ক্ষেত্রে বোনাস বাড়ানোর বিষয়টি এই ঈদের আগেই কার্যকর হচ্ছে না, যা আরও অস্পষ্টতা ও অসন্তোষের জন্ম দিচ্ছে।
বোনাস নিয়ে সংশয়ের পাশাপাশি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মাসিক বেতন নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে নতুন আশঙ্কা। এখন পর্যন্ত (মে মাসের মাঝামাঝি) এপ্রিল মাসের বেতনও পরিশোধ করা হয়নি। রীতিমতো হাস্যকর এক কারণ দেখিয়ে কারণটি এমন যে, ইএমআইএসসেলের প্রধান সিষ্টেম অ্যাললিষ্ট ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। একটি প্রতিষ্ঠান কতটা নির্লজ্জ, দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে এধরনের কারণ উল্লেখ করতে পারে ভাবতে পারেন। ঠিক আছে ধরে নিলাম একটা মানুষ যে কোন কারণে যে কোন সময় অসুস্থ হতে পারে কিন্তু তার জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম কিভাবে থমকে থাকে। এটা কি হাস্যকর যুক্তি নাকি লোক দেখানো যুক্তি। অনেক এমপিওভুক্ত স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের অর্থনৈতিক নির্ভরতা বলতে কিন্তু এই মাস শেষের বেতনটাই প্রধান সেখানে কিভাবে একটি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান দায়িত্বজ্ঞানহীন কারণ উল্লেখ করতে পারে।
আজ (১৩ মে) মাউশির পক্ষ থেকে যে তথ্য জানানো হয়েছে তা আরও হতাশাজনক। সেখানে বলা হয়েছে—ঈদের আগে এপ্রিলের বেতন পরিশোধের চেষ্টা চলছে, কিন্তু মে মাসের বেতন ঈদের আগে দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। একটা বিষয় ভেবে দেখুনতো গত ঈদুল ফিতরের পূর্বে মাস শেষ হওয়ার আগেই সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা হয়। আর এবার মাস শেষ হওয়ার পরও মাউশি থেকে জানানো হচ্ছে যে, ঈদের পূর্বে আমাদের পাওনা বেতনও পরিশোধ করা নাও হতে পারে। আচ্ছা বলুনতো মাউশি কি এটা মগের মল্লুক পেয়েছে যে, যখন যা খুশি তাই করবে কারও কিছু বলার নাই করারও নাই।
এটা কেমন নিয়ম একই দেশে একই পেশায় কর্মরত থেকেও সরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের বেতন ঈদের ৫-৭ দিন আগেই পেয়ে থাকেন, সেখানে শিক্ষাখাতের এই গুরুত্বপূর্ণ অংশকে কেন বছরের পর বছর এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখা হচ্ছে—এ প্রশ্নের উত্তর এখন সময়ের দাবি।
একটি জাতির উন্নয়নের মূল ভিত্তি হলো শিক্ষা। আর সেই ভিত্তির স্থপতিরা যদি বছরের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতেও নিজেদের প্রাপ্য অধিকার নিয়ে সংশয়ে থাকেন, তাহলে তার প্রভাব শিক্ষার্থীদের মনোভাব ও শিক্ষার মানে এর প্রভাব নিশ্চয়ই পড়বেই।
এই অনিশ্চয়তা নিরসনে জরুরি কিছু পদক্ষেপ এখনই নেওয়া প্রয়োজনঃ
শিক্ষকরা কেবল পেশাজীবী নন, তাঁরা ভবিষ্যৎ নির্মাতা। ঈদের মতো আনন্দময় সময়ে তাঁদের মুখে হাসি ফোটানো কেবল মানবিক দায়িত্বই নয়, এটি একটি জাতির নৈতিক কর্তব্য। তাই আশঙ্কা ও সংশয়ের এই বন্ধ দরজা ভেঙে, স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতার আলোয় আলোকিত হোক এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজের ঈদ।
Leave a Reply